শুভ জন্মদিন আমিনুল ইসলাম বুলবুল
ক্রিকেটবিশ্বে বাংলাদেশের নাম যতবার আসে, ততবারই সামনে চলে আসে আমিনুল ইসলাম বুলবুলের নাম। মিষ্টি হাসির সেই মানুষটি যেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রতিচ্ছবি। যাঁদের হাত ধরে বাংলাদেশের ক্রিকেট আজ এই পর্যায়ে এসেছে, তাঁদের মধ্যে তিনিও একজন। দেশের ক্রিকেটের একটি অধ্যায়ের নাম বুলবুল। আইসিসির সদস্য রাষ্ট্র থেকে ক্রিকেটের অন্যতম পরাশক্তি হয়ে ওঠার অন্যতম কারিগরও কিন্তু সাবেক বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের এই অধিনায়ক। দেশের এই ক্রিকেট নক্ষত্রের আজ জন্মদিন।
আমিনুল ইসলাম বুলবুল, একটু অধিকার নিয়ে বলা যায় আমাদের বুলবুল। ১৯৬৮ সালে আজকের দিনেই ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের এই পথপ্রদর্শক। ছোট থেকেই ক্রীড়াপ্রেমিক বুলবুল ছিলেন অলরাউন্ডার। যেমন দুরন্ত ছিলেন ফুটবলে, তেমনি দুর্দান্ত ছিলেন ক্রিকেটে। তবে কঠিন ইনজুরির কারণে শুরুতেই শেষ হয়ে যায় তাঁর ফুটবল ক্যারিয়ার। তবে বুলবুল আঁকড়ে রাখেন ক্রিকেটকে। অনূর্ধ্ব পর্যায়ে নিজেকে প্রমাণ করে জায়গা করে নেন আইসিসির ‘ইয়ং ক্রিকেটার্স স্কোয়াডে’। তখন অবশ্য তিনি পরিচিত ছিলেন বোলার হিসেবে। ওই টুর্নামেন্টে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন এই অফব্রেক স্পিনার, যার মধ্যে একটা ছিল তরুণ এক ব্রায়ান লারার। বাংলাদেশ তখন বিশ্ব ক্রিকেটে এক পরাধীন রাষ্ট্র ছিল, তাই হয়তো তাঁর এই কৃতিত্ব এ দেশের মানুষ ছাড়া আর কারো নজরেই আসেনি। এক বছর পর অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপে মালয়েশিয়ার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করে নির্বাচকদের নজর কাড়েন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান।
১৯৮৮ সালে বাংলাদেশের ওয়ানডে স্ট্যাটাস পাওয়ার মধ্য দিয়েই জাতীয় দলে আমিনুল ইসলাম বুলবুলের ক্যারিয়ার শুরু হয়। সে সময় ওয়ানডে খেলার খুব একটা সুযোগ না থাকায় ১৯৮৮ থেকে ২০০১ সালের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে তিনি খেলেছেন মাত্র ৩৯টি ম্যাচ। তিনটি হাফ সেঞ্চুরি নিয়ে মোট রান করেছেন ৭৯৪। তবে এরই মধ্যে তিনি রচিত করেছিলেন বাংলাদেশে ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ।
বাংলাদেশ তখন আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে নিয়মিত অংশগ্রহণ করত। আর বারবারই ভাগ্যের কাছে হেরে যায় বিদায় নিতে হতো। ১৯৯০ ও ১৯৯৪ সালে আকরাম-বুলবুলরা শিরোপার খুব গিয়েও শেষ পর্যন্ত পারেনি। আর এ কারণে বিশ্বকাপেও খেলা হয়নি বাংলাদেশের। তবে ১৯৯৭ সালে কিন্তু এমনটা হয়নি, আর ইতিহাসটাও লেখা হয় তখনই। আমিনুল-খালেদ মাসুদ-আকরাম বেশ শক্তিশালী দল নিয়েই মাঠে নামেন। বীরের বেশেই উঠে আসে সেমিফাইনালে। তবে স্কটল্যান্ডের সঙ্গে সেই ম্যাচে প্রথম দিকেই উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে টিম বাংলাদেশ। স্বপ্ন জয়ের উল্লাস যেন ক্রমে স্তব্ধতায় মিলিয়ে যেতে থাকে। আর ঠিক তখনই দলের হাল ধরেন খালেদ মাসুদের আর আমিনুল ইসলাম। এই জুটির ওপর ভর করেই বাংলাদেশ সংগ্রহ করে ২৪৩ রান। আর জয় তুলে নিয়ে পৌঁছে যায় ফাইনালে। কেনিয়ার বিপক্ষে ফাইনাল ম্যাচে বুলবুল তেমন উজ্জ্বল না থাকলেও জয় পায় দল। বিশ্বকে অবাক করে ইতিহাস গড়ে বিশ্ব মানচিত্রের ছোট্ট এ ব-দ্বীপ। এরপর বিশ্বকাপ। আমিনুল ইসলাম বুলবুলের নেতৃত্বেই বাংলাদেশ অংশ নেয় বিশ্বকাপে। স্কটল্যান্ড ও পাকিস্তানকে হারিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটে নিজেদের তুলে ধরেন বুলবুল বাহিনী। আর ফল হিসেবেই বাংলাদেশ পায় স্বপ্নের টেস্ট স্ট্যাটাস।
টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ তথা আমিনুল ইসলামের অভিষেক হয় ২০০০ সালে ভারতের বিপক্ষে। প্রথম টেস্টে টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসেই তারা দেখা পেল ৪০০ রানের আর অধিনায়ক তুলে নেন প্রথম সেঞ্চুরি। ৫৩৫ বলে ১৪৫ রান করে ক্রিকেট বিশ্বকে অবাক করে দেন আমিনুল ইসলামের বুলবুল। দিন শেষে যদিও ম্যাচটি বাংলাদেশ হেরেছিল, তবে প্রাপ্তিও কম ছিল না। সংক্ষিপ্ত ক্যারিয়ারে মাত্র ১৩টি টেস্ট খেলেছেন বুলবুল। মোট রান করেছিলেন ৫৩০।
আমিনুল ইসলামের ক্রিকেটীয় জীবনের বেশিরভাগ সময়ই কেটেছে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে। তিনিই বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রথম ক্রিকেটার, যিনি ইংল্যান্ডে মাইনর কাউন্টি খেলেছিলেন। তবে এই তারকা ক্রিকেটারের অবসরের গল্পটা মোটেও স্বাভাবিক ছিল না। নির্বাচকদের ‘নতুনদের সুযোগ দেওয়ার নীতি’র কারণে ফর্মে থাকার পরও দল থেকে বাদ পড়েন এই ব্যাটিং তারকা। পরে অনেকটা অভিমান করেই জাতীয় দল থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন বাংলার এই ক্রিকেট নক্ষত্র।