শিখিধারী শ্রীকৃষ্ণ
জন্মাষ্টমী আজ। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আর্বিভাব তিথি। শ্রীকৃষ্ণকে নিয়ে হিন্দু মতে গল্পগাঁথার অন্ত নেই। বকাসুর বধ থেকে কালিয়ানাগ দমন, এমনকি পুতনা রাক্ষসীকেও বধ করে ছোটবেলা থেকেই রীতিমতো নায়কোচিত শ্রীকৃষ্ণ। হিন্দু ধর্মমতে, একই দেহে একাধিক নামের অধিশ্বর শ্রীকৃষ্ণের মতো আর কোনো দেব-দেবী নেই। একটি বা দুটি নয়, ১০৮ টি নামেরও অধিকারী তিনি। ছোট থেকে বেজায় দুষ্টু শ্রীকৃষ্ণের রয়েছে কতই না আখ্যান!
কখনো বাঁশি হাতে শ্রকৃষ্ণ বংশীধারী, আবার কখন বনমালী তিনি। ময়ূরপুচ্ছ মুকুটে ধরে মোরমূর্তিধারীও তিনি, শিখীধারীও তিনি। শ্রীকৃষ্ণের সারা জীবনে নানা চিত্তাকর্ষক ঘটনার বিবরণ পাওয়া যায়। শ্রীকৃষ্ণের মুকুটে ময়ূর পালক নিয়েও রয়েছে সেই রকমই এক চমকপ্রদ আখ্যান। তখন বালক কৃষ্ণ বৃন্দাবনের রাখালরাজা। গরুর পাল নিয়ে মাঠে বিচরণ করেই কেটে যায় তাঁর সময়। একদিন তাঁর সঙ্গীরা যখন ঘুমে মগ্ন, সেই সময় গবাদি পশুর পাল নিয়ে কৃষ্ণ চললেন গোবর্ধন পাহাড়ের দিকে। পাহাড়ে ওঠার পর দুষ্টুবুদ্ধি মাথায় চাপল তাঁর। ভাবলেন, এবারে সঙ্গীদের নিদ্রা ভঙ্গ করতে হবে। তাহলে তারা ছুটতে ছুটতে চলে আসবে এই পাহাড়ের উপরে। সেই মতো তিনি বাজালেন তাঁর মোহনবাঁশি।
আর সেই বাঁশির সুরেলা আওয়াজ শুনেই পাহাড়ের বুকে থাকা একদল ময়ূর এসে হাজির হল কৃষ্ণের চারপাশে। বাঁশির সুরের মূর্ছনায় শুরু হলো ময়ূরের নাচ। মেঘলা সায়াহ্নে কৃষ্ণকে ঘিরে যখন ময়ূরের দল পেখম মেলেছে। বাহারি পেখমের চ্ছটায় আকাশের রামধনূর রংও বুঝি লজ্জা পায়। মোহন বাঁশির মোহনীয় সুরে তখন উতলা ময়ূরের দল। সেই সময় ওই ময়ূরদের দলপতি এগিয়ে এলো কৃষ্ণের কাছে। সোহাগে মুখ গুঁজে দিল তাঁর চরণকমলে। বারবার কৃষ্ণের মুখের দিকে তাকিয়ে তার চরণে মুখ গুঁজে নিবেদন করতে লাগল এক আবদার। অন্তর্যামী ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বুঝতে বাকি রইল না সেই আবদারের কথা। ময়ূর দলপতির ইচ্ছার কথা বুঝে বাঁশি হাতে উঠে দাঁড়ালেন তিনি।
এরপরই ময়ূরদের সঙ্গে নাচতে শুরু করলেন স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ। মেঘলা আকাশের নিচে রোদ-ছায়ার লুকোচুরি খেলাতে সুর আর নাচের যুগলবন্দিতে মাতোয়ারা হয় উঠল ময়ূরের দল। দীর্ঘ সময় নাচের পর ময়ূরদের দলপতি কৃষ্ণের পায়ে নিবেদন করল একটি পালক। প্রার্থনা করল, ওই পালকটি যদি কৃষ্ণ তাঁর শিরোভূষণ করেন। ময়ূর দলপতির প্রার্থনা বুঝতে পেরে শ্রীকৃষ্ণ ময়ূরপুচ্ছটিকে শিরোদেশে তুলে নিলেন। শিখীপাখাকে শিরে ধারণ করে তিনি হলেন শিখীধারী।