কলকাতায় বাংলাদেশি চলচ্চিত্র উৎসব শুরু
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কলকাতায় ৫ম বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধন করলেন বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ এমপি। এদিন সন্ধ্যায় কলকাতার নন্দন–১ প্রেক্ষাগৃহে এই চলচ্চিত্র উৎসবের আনুষ্ঠানিক মোড়ক উম্মোচন হয়।
তথ্যমন্ত্রীর সাথেই এই অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু, বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন পরিচালক গৌতম ঘোষ।
পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের সাংসদ আরমা দত্ত, অভিনেতা ফেরদৌস আহমেদ, অভিনেত্রী পূর্ণিমা, অরুণা বিশ্বাস, নুসরাত ফারিয়া, গায়ক রূপঙ্কর বাগচী, প্রিয়াঙ্কা গোপ, কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস, প্রথম সচিব (প্রেস) রঞ্জন সেন প্রমুখ।
আগামী ২৯–৩১ জুলাই পর্যন্ত চলবে এই চলচিত্র উৎসব। প্রতিদিন দুপুর ১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত নন্দন–১, ২ প্রেক্ষাগৃহে এই সিনেমাগুলো দেখার ব্যবস্থা থাকছে।
এবারে ৫ম বাংলাদেশি চলচ্চিত্র উৎসব ২৪টি বাংলাদেশি সিনেমা থাকছে। এ ছাড়া পাঁটি প্রামাণ্য চিত্র ও দু’টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র দেখানো হবে। এরমধ্যে গতবার চলচ্চিত্র উৎসব মাতিয়ে এবারও থাকছে পরিচালক মেজবাউর রহমান সুমনের ‘হাওয়া’ সিনেমাটি।
এ ছাড়াও থাকছে–রিকসা গার্ল, জেকে ১৯৭১, বীরকন্যা প্রীতিলতা, রেডিও, ১৯৭১ সেই সব দিন, নকশীকাঁথার জমিন, শ্যামা কাব্য, দুঃসাহসী খোকা, শ্রাবণ জোৎস্নায়, প্রহেলিকা, সুড়ঙ্গ, লাল শাড়ি, প্রিয়তমা, গুনিন, বিউটি সার্কাস, পরাণ, দামাল, পায়ের তলায় মাটি নাই, পাপ পুণ্য, সাঁতাও, মা, দেশান্তর, স্ফুলিঙ্গ, চিরঞ্জীব মুজিব, বিক্ষোভ, রেহানা মরিয়ম নূর, নোনা জলের কাব্য, মৃধা বনাম মৃধা, কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া, গলুই, গণ্ডি, ন’ডরাই, আলফা, পুত্র, আয়নাবাজি, দেবী এবং গেরিলা।
প্রামাণ্য চিত্রের মধ্যে থাকছে–হাসিনা এ ডটারস টেল, অবিনশ্বর, একটি দেশের জন্য গান, চিরঞ্জীব বঙ্গবন্ধু, কাঙ্গাল হরিনাথ। স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে দেখানো হবে– ‘ওমর ফারুকের মা’ ও ‘ধড়’ সিনেমাটি।
অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে গৌতম ঘোষ জানান, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট, তার গভীরতা জানার জন্য চলচ্চিত্র উৎসবের প্রয়োজন। বাংলাদেশের বাজার বড় হচ্ছে, মাঝখানে সিনেমা হলগুলো একটা সময় বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু সেই অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। এখন ওখানেও মাল্টিপ্লেক্স হচ্ছে। তিনি আক্ষেপ করে জানান, বাংলাদেশের সিনেমা কলকাতাবাসী দেখতে পায় না। একমাত্র চলচ্চিত্র উৎসব ছাড়া কলকাতার মানুষ বাংলাদেশের সিনেমা দেখার সুযোগ পান না। কারণ দুই দেশে একসঙ্গে ছবি রিলিজের বিষয়টি পাকা হয়নি। অতচ ভারতীয় সিনোম টেলিভিশনের মাধ্যমে বাংলাদেশে দেখা যায়। একটা সময় আমরা বাংলাদেশের নাটক দেখতে পেতাম কিন্তু এখন সেটাও হয় না।
ব্রাত্য বসু বলেন, এই তালিকায় বেশ কয়েকটি পছন্দেরর সিনেমার নাম দেখলাম। অ্যাপের দুনিয়ার কারণে ওই বাংলায় কি কাজ হচ্ছে তা খুব সহজেই সামনে আসছে। ডিজিটাল প্রযুক্তি ঘটছে, দুই বাংলাকে এক করে দিচ্ছে।
অন্যদিকে তথ্যমন্ত্রী বলেন, চলচ্চিত্র এমন একটা মাধ্যম যেখানে ১০০ বছরের আগের সিনেমা দেখলে সেই সময়কার অবস্থা জানা যায়।
মন্ত্রী বলেন, বাঙালি আজ বিশ্ব জয় করেছে। তাই আমাদের চলচ্চিত্রকাররা যদি হাতে হাত মেলায়, তবে বাংলা সিনেমাও বিশ্ব জয় করবে। তার অভিমত বাঙালি সংস্কৃতি বিশ্বের অন্যতম সেরা সংস্কৃতি।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই বাংলাদেশে চলচ্চিত্র শিল্পের প্রাতিষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। একটা সময় বাংলাদেশেও হলের সংখ্যা কমে যাওয়ায় কারণে এই শিল্পে আঘাত আসে, কিন্তু শেখ হাসিনার কারণে তা আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
কলকাতায় বাংলাদেশের ছবির জনপ্রিয়তা প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি অবাক হয়ে যাই যে ‘হাওয়া’ সিনেমা দেখার জন্য ৮০ মিটার লম্বা লাইন পড়ে। কাঁটা তার আমাদের বিভক্ত করে দিলেও, নাড়ির বন্ধন আমাদের ভাগ করতে পারেনি। সুন্দর বনের বাঘের যাতায়াত বন্ধ করতে পারিনি। তেমনি আমাদের হৃদয়ের বাঁধানো ভাগ করতে পারিনি। গানের প্রতি ভালোবাসার উদহারণ টেনে কুয়োতে পড়ে যাওয়ার কথা শেয়ার করেন এদিন।