মায়ের চরিত্রে তাঁরা
খুব মিষ্টি ও শ্রুতিমধুর শব্দ ‘মা’। মায়ের সঙ্গে কোনো কিছুর তুলনা হয় না- এ কথা আমরা মানি এক বাক্যে। ‘মা’ প্রত্যেক সন্তানের জন্য এক অপার আশ্রয়স্থল। রুপালি ও টিভি পর্দায় এই মা চরিত্রে যাঁরা অভিনয় করেন, তাঁদেরও ধারণ করতে হয় মায়ের শক্তি ও মমতা। মায়ের চরিত্রে অভিনয় করে বাংলাদেশে দর্শক নন্দিত হয়েছেন গুণী অভিনেত্রী দিলারা জামান, ডলি জহুর ও সাবিহা জামান। মা দিবসে এনটিভি অনলাইনকে তাঁরা জানিয়েছেন পর্দায় ‘মা’ ডাক শোনার অভিজ্ঞতা।
‘মা’ চিরন্তন : দিলারা জামান
মা চিরন্তন। আন্তর্জাতিক মা দিবস আমার কাছে মনে হয় বিদেশি সংস্কৃতি। পৃথিবী জুড়ে এখন সংস্কৃতির আদান প্রদান হচ্ছে। তবে আমাদের দেশেও যেভাবে পরিবারগুলো ভেঙে যাচ্ছে আর সন্তানরা আলাদা থাকতে শুরু করেছে, তাতে বলা যায় দিবসটির গুরুত্ব রয়েছে। মা দিবসে যাদের সামর্থ্য আছে তারা মাকে সাধ্যমতো উপহার দেন। কিন্তু যাদের নেই তারা হয়তো মাকে শুধু মনে মনে ‘ভালোবাসি’ বলবে। মায়ের ভালোবাসা কোন কিছুর সঙ্গে বিনিময় করা যায় না। যে সন্তান ইট ভেঙে জীবিকা নির্বাহ করে সে হয়তো একভাবে মাকে উপহার দেবে। আবার যে উঁচু দালান-কোঠায় থাকে- সে একভাবে মাকে উপহার দেবে।
যখন শুটিং করি তখন শিল্পীরা যখন পা ছুঁয়ে সালাম করে মা ডাকে, তাদের নিজের সন্তান মনে হয়।তাদের কখনো আলাদা মনে হয় না। এই সম্মানটুকু অনেক বড় পাওয়া। গত বছর আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর আমি সব কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলাম। তখন ডলি আর শর্মিলী আমাকে অনেক বুঝিয়েছে কাজে ফেরার জন্য। আবারও কাজ করছি অনেক ভালো লাগছে। আমার দুই মেয়ে- বড় মেয়ে কানাডায় থাকে আর ছোট মেয়ে আমেরিকায় থাকে। আগামী ঈদ আমি আমার দুই মেয়ের সঙ্গে কাটাবো। তাদের সঙ্গে মাস দুয়েক থাকবো। তারপর দেশে ফিরে আবার কাজ শুরু করব। মা দিবসের জন্য একটি গানের মিউজিক ভিডিওতে আমি অংশগ্রহণ করেছি। আজ খেকে গানটি সব চ্যানেলে দেখানো হবে।
‘মা’ শব্দের কোন ব্যাখ্যা নেই : ডলি জহুর
আমার প্রতিদিনই মা দিবস মনে হয়। আমার কাছে দিনটি অন্যরকম। মেয়েরা কিন্তু জন্মসূত্রে মেয়ে। ছোটবেলায় মেয়েরা পুতুলকে বাচ্চা মনে করে খেলে। তারা কখনো গাড়ি নিয়ে খেলে না। আমি নিজেকে পরিপূর্ণ মা ভাবি। আমার বাবু হওয়ার আগে আমি মা চরিত্রে অভিনয় করেছি। মা ডাকটা শুনেছি। শুটিংয়ে কোনো শিল্পী মা ডাকলে আমি তাকে সত্যি ছেলে-মেয়ে ভাবতাম। তাদের আপনি কিংবা তুমি বলতাম না। সরাসরি তুই বলে ডাকতাম।
আমার এখন ফোন এলে আমার ছেলে বলে, ‘মা, নাও তোমার কোন মেয়ে ফোন করেছে।’ আমার ছেলে মাঝে মাঝে এই সূক্ষ্ম বিষয়েও অভিমান করে। ও এখন অস্ট্রেলিয়ায় আছে। ‘মা’ শব্দের আসলে কোনো ব্যাখ্যা হয় না। ‘মা’ ডাকটা অনেক আবেগী। এই ডাকে প্রকৃতি, দেশের আভাস আছে। আমাদের ছেলেরা যখন ক্রিকেটে ভালো করে তখন সেটাকে নিজের ছেলের সাফল্য বলেই মনে হয়। আমি দেশকে যেমন ভালোবাসি ঠিক তেমনি মাকেও ভালোবাসি।
আজ খেকে ৩০ বছর আগে আমার মা মারা গেছেন। কিন্তু আমার মনে হয় মায়ের কখনো মৃত্যু হয় না। মা-সন্তানের সম্পর্ক অনেক নিঃস্বার্থ। আমরা অনেক আবেগি জাতি। আমার সঙ্গে কারো নুতন পরিচয় হলে সবাই বলে, “আমি কি আপনাকে ‘মা’ ডাকতে পারি?” তখন মা ডাক শোনার জন্য সত্যি লোভ হয়।
‘মা’ তো ‘মা’: সাবিহা জামান
‘মা’ শব্দটি আমার সব থেকে প্রিয়। ‘মা’ তো ‘মা’। আমার ছেলে উৎস যখন নাটক করত তখন ও অনেক শিল্পীকে মা বলে ডাকত। আমি শুটিং করতে এসে যখন ‘মা’ ডাকটা শুনি তখন হৃদয় ভরে যায়। এখন শুটিং না থাকলে বরং খারাপ লাগে।
যারা অভিনয়ের প্রয়োজনে মা ডাকে তাদের আপন সন্তান মনে হয়। তাদের অনেকদিন না দেখলেও কষ্ট হয়। আমি টিভি নাটক করার পর মঞ্চ নাটক করা শুরু করেছি।
সব জায়গায় মা চরিত্রেই অভিনয় করছি। ভীষণরকম ভালো লাগে। এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।