সাক্ষাৎকার
নাটক লিখি সাধারণ মানুষের জন্য : সাগর জাহান

দেশের জনপ্রিয় নাট্যকার ও পরিচালকদের মধ্যে একজন সাগর জাহান। এখন পর্যন্ত শতাধিক নাটক লিখেছেন তিনি। পরিচালনাও করেছেন অসংখ্য নাটক। দর্শকদের আরমান ভাই ও সিকান্দর বক্স সিরিজের নাটকসহ অসংখ্য জনপ্রিয় নাটক উপহার দিয়েছেন তিনি। শুধু কমেডি নয়, থ্রিলার, রোমান্টিক, সিরিয়াস ও মৌলিক গল্পের নাটক লিখছেন ও পরিচালনা করছেন তিনি। এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে আলাপে এবারের ঈদের জন্য নির্মিত নাটক ও অন্যান্য প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেছেন সাগর জাহান।
প্রশ্ন : এবারের ঈদের জন্য কয়টি নাটকটি নির্মাণ করেছেন?
উত্তর : তিনটি। এনটিভিতে ‘মাধবীলতা গ্রহ আর না’, বাংলাভিশনে ‘অ্যাভারেজ আসলাম’ ও আরটিভিতে ‘চুপ! ভাই কিছু ভাবছে!’ নাটকগুলো প্রচারিত হবে। তিনটা নাটকের গল্পের ধরন, গঠন একেবারেই আলাদা। নাটকগুলো থেকে দর্শক অনেক সচেতনতামূলক বার্তা পাবেন।
প্রশ্ন : ঈদ উপলক্ষে তিনটি নাটক নির্মাণ কি কম না বেশি?
উত্তর : কমই বলা যায়। কারণ আমি আসলে সব সময় সংখ্যার চেয়ে মানসম্মত কাজ করার দিকে নজর বেশি দিয়েছি। একসঙ্গে বেশি কাজ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
প্রশ্ন : টিভিতে ঈদে প্রচারিত নানা অনুষ্ঠানমালা নিয়ে আপনার ব্যক্তিগত কোনো অভিমত আছে কি?
উত্তর : মানুষ ঈদে নাটক দেখতে পছন্দ করে এটা সত্য। তবে ঈদে সবচেয়ে বেশি খুশি থাকে শিশুরা। তখন তাদের ছুটিও থাকে। আমি যদি ব্যক্তিগত মতামত দিই তাহলে বলব, ঈদের দিন চ্যানেলগুলোতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শুধু শিশুদের নিয়ে অনুষ্ঠান প্রচার করলে ভালো হবে। ঈদের দিন শুধুমাত্র শিশুদের নিয়ে অনুষ্ঠান প্রচারের পক্ষে আমি। অন্তত একদিন শিশুরা মন ভরে তাদের পছন্দ অনুযায়ী অনুষ্ঠান দেখতে পাবে। এ ছাড়া আমাদের দেশে তুলনামূলক শিশুদের অনুষ্ঠান কম হয়। আমাকে যদি ঈদের অনুষ্ঠানমালায় শিশুদের ওপর নাটক কিংবা অনুষ্ঠান বানাতে বলে আমি টাকা ছাড়াই বানাতে আগ্রহী হব।
প্রশ্ন : আপনি তো শিশুশিল্পী হিসেবে অসংখ্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। এরপর গানও গেয়েছেন। অ্যালবামও বের হয়েছে। অভিনয় কিংবা গান একেবারে ছেড়ে দেওয়ার কারণ কি ছিল?
উত্তর : একটা সংস্কৃতিমনা পরিবার থেকে আমি বেড়ে উঠেছি। আমার বাবা আনোয়ার জাহান নান্টু সংগীত পরিচালক ছিলেন, চাচা চিত্রপরিচালক দেলোয়ার জাহান ঝন্টু ও বড় ভাই চিত্রপরিচালক ইস্পাহানি আরিফ জাহান। তাঁদের অনুপ্রেরণায় মূলত শৈশবে মাস্টার সাগর নামে প্রায় ৩০-এর ওপরে চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছি। শিশুশিল্পী হিসেবেই আমি অভিনয় করেছি। কিন্তু অভিনয় আমাকে কখনো টানেনি। এরপর গানের প্রতি মনোযোগী হতে শুরু করেছিলাম। গিটার বাজানোও শিখেছি। সাউন্ডটেক থেকে আমার কথা, সুর ও কণ্ঠে জীবনমুখী গানের অ্যালবাম ‘বেকার’ বের হয়েছিল। সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট আমাকে অনেক ভাবাতো। কিন্তু গানের প্রতিও বেশিদিন আগ্রহ ধরে রাখতে পারিনি।
প্রশ্ন : নাটক লেখা কবে থেকে শুরু করলেন? নিজের লেখা জনপ্রিয় দুই নাটক আরমান ভাই ও সিকান্দার বক্স সম্পর্কে কিছু বলুন।
উত্তর : নাটক লেখা শুরু করার সময় পরিচালক অরণ্য আনোয়ার ভাই আমাকে অনেক অনুপ্রাণিত করেছেন। ২০০৫ সালে আমার লেখা প্রথম নাটক ‘নীল গ্রহ’ অরণ্য আনোয়ার পরিচালনা করেছিলেন। ২০০৭ সালে হুমায়ূন আহমেদের লেখা উপন্যাস ‘ছায়াবীথি’র চিত্রনাট্য আমি লিখেছিলাম। নাটকটি পরিচালনা করেছিলেন হুমায়ুন ফরিদী। তিনি আমার অনেক প্রশংসা করেছিলেন। বলেছিলেন, ‘তুই খুব ভালো করছোস। সততা নিয়ে কাজ কর। ধীরে ধীরে এই কাজে অনেক দূর যেতে পারবি।’ হুমায়ূন আহমেদ স্যারও নাটকটির চিত্রনাট্য পড়ে হুমায়ুন ফরিদীর কাছে প্রশংসা করেছিলেন বলে শুনেছি। আমি নাটক লিখি মূলত সাধারণ মানুষদের জন্য। যে ঘটনাগুলো আমাদের চারপাশে ঘটছে, সেগুলো থেকে আমি লেখার চেষ্টা করি।
প্রশ্ন : নিজের লেখা ও পরিচালনায় জনপ্রিয় দুই নাটক আরমান ভাই ও সিকান্দার বক্স সম্পর্কে কিছু বলুন।
উত্তর : ভারতের নাটক আমাদের দেশে দর্শকরা যখন বেশি দেখা শুরু করল তখন খুব অবাক হচ্ছিলাম। পরে বিষয়টা নিয়ে আমি লাইট অ্যান্ড শ্যাডোর কর্ণধার মুজিবর ভাইয়ের সঙ্গে শেয়ার করি। তাঁকে আমি আমার আরমান ভাই নাটকটির আইডিয়ার কথা বলি। তিনি খুব পছন্দ করেছিলেন। আরমান ভাই সিরিজের নাটক কিন্তু তখন বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। আর সিকান্দার বক্স সিরিজের নাটক লেখার সময় আমি নাটকটির নাম দিয়েছিলাম ‘সে এখন অনেক বড়’। পরবর্তীতে বাংলাভিশনের শামীম শাহেদ ও তারেক আকন্দ ভাই মিলে নাটকের চরিত্র সিকান্দার বক্সের নামে নাটকের নাম রাখার কথা আমাকে বলেন। তাঁরা আমার নাটক দুটির টেলিভিশনে অনেক প্রমোশন করেছেন। আমি তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ। কারণ ভালো কাজের প্রচারণা অনেক জরুরি।
প্রশ্ন : নাট্যকার থেকে পরিচালক হয়েছেন। নাট্য পরিচালনায় আসা আপনার জন্য কি চ্যালেঞ্জিং ছিল?
উত্তর : আমার পরিচালনায় প্রথম নাটক ছিল ‘দূরের মেঘ’। নাটকটিতে অভিনয় করেছেন মাহফুজ আহমেদ ও রিচি সোলায়মান। নাট্যকার থেকে পরিচালনায় আসা আমার জন্য অনেক ভয়ের কারণ ছিল। যাঁরা নাট্যকার থেকে পরিচালনায় আসেন তাঁদের সবার হয়তো এ রকম হয়। শুরুতে খুব চ্যালেঞ্জ ছিল কারণ এ বিষয়ে তেমন পড়াশোনা আমার ছিল না। আর একটা কথা বলতে চাই, লাইট অ্যান্ড শ্যাডোর কর্ণধার মুজিবর রহমান ভাই আমার নাটক প্রযোজনা করেছেন। তাঁর অনুপ্রেরণা আমি সারা জীবন মনে রাখব।
প্রশ্ন : আপনার বেশির ভাগ নাটকে মোশাররফ করিম অভিনয় করেন। তাঁর সম্পর্কে কিছু বলুন।
উত্তর : সবাই জানেন মোশাররফ ভাই গুণী অভিনয়শিল্পী। ভালো একজন মানুষও তিনি। একজন ভালো অভিনয়শিল্পী ভালো নাটকে অভিনয়ে করবেন, এটাই স্বাভাবিক। তাঁর সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নাই। তাঁর অভিনীত মঞ্চনাটকও আমি দেখেছি। অনেক আগে থেকেই তাঁকে আমি চিনতাম। ২০০৫ সালে তাঁর সঙ্গে একটা মিডিয়া হাউসে আমার প্রথম কথা হয়েছিল। তারপর থেকে আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরী হয়। আমাদের তখন কেউই চিনতেন না। মোশাররফ ভাইয়ের একটা কথা এখনও আমার মনে আছে তিনি বলেছিলেন, ‘সাগর, আমরা একদিন জনপ্রিয় হব। কিন্তু আমাদের টাকা থাকবে না। আমরা সৎভাবে কাজ করে যাব।’ এ ছাড়া তাঁর সঙ্গে দেখা হলেই তিনি বলতেন, ‘সাগর, তোমার লেখা কতদূর?’
প্রশ্ন : আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
উত্তর : চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চাই। আগামী বছর চলচ্চিত্র নির্মাণ করার কথা ভাবছি। আমার চলচ্চিত্র হবে সাধারণ মানুষদের জন্য। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।