অনুপ্রেরণার গান
অঞ্জনের মালা, পিটারের মেরি
সকাল সকাল স্মৃতির পাতা ছাপিয়ে মগজে ভর করে এক পুরোনো গান, পুরোনো কথা, পুরোনো সুর। অথচ বেমক্কা এঁটে বসা কল্পনার মাঝেও ভীষণ জীবন্ত এক চরিত্র। মালা। ১২ মে সে চলে গিয়েছিল এক অগোছালো স্বপ্নবাজ গায়কের জীবন থেকে। সেই স্মৃতিচারণকে আশ্রয় করে অঞ্জন দত্তের বিখ্যাত গান, স্টেরিও ক্যাসেট থেকে অডিও সিডি কিংবা ইন্টারনেটের জগতে আজও অসম্ভব জনপ্রিয় এই গানটি।
গানটি মৌলিক নয়। অঞ্জন নিজেই জানিয়েছিলেন, পিটার সারস্টেডের ‘হোয়্যার ডু ইউ গো টু মাই লাভলি’ গানটির অনুপ্রেরণাতেই জন্ম নিয়েছিল ‘মালা’। পিটারের গানে সেই চরিত্রের নাম ছিল মেরি ক্ল্যার, নেপলসের বস্তির এক দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে এসে বনেদিপাড়ার মানুষ বনে গিয়েছিল সে। তার পর দেশ-দেশান্তরে ঘুরে বেড়ানো, বিলাসবহুল জীবনযাপন, বনেদি চমকের চলাফেরা। তার পরও গায়কের প্রশ্ন, প্রতি রাতে বিছানায় ঘুমিয়ে পড়ার ক্ষণে কোথায় হারিয়ে যায় সে? যে চিন্তাগুলো তাকে ঘিরে ঘুরপাক খায় অবিরত, তার সন্ধান চায় গায়কের প্রেমিক সত্তা। কথাগুলো ছিল এমন, ‘বাট হোয়্যার ডু ইউ গো টু মাই লাভলি, হোয়েন ইউ অ্যালোন ইন ইয়োর বেড, টেল মি দ্য থটস দ্যাট সারাউন্ড ইউ, আই ওয়ান্ট টু লুক ইনসাইড ইয়োর হেড, ইয়েস আই ডু।’
অনেক ক্ষেত্রেই ধারণা করা হয়েছে, দক্ষিণ ভারতে জন্ম নেওয়া ব্রিটিশ গায়ক পিটার ইয়ার্ডলে সারস্টেড মেরি ক্ল্যার চরিত্রটি সৃষ্টি করেছিলেন সোফিয়া লোরেনের বিষয়ে অনুপ্রাণিত হয়ে। তবে এ বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায়নি। আর অঞ্জনের ‘মালা’ সেই গানটি থেকে অনুপ্রাণিত বটে, তবে তাঁর জগৎটা তেমন অনুপ্রাণিত নয়। সেখানে খাঁটি উপমহাদেশীয় আস্বাদ ও ঘ্রাণ এনে দিয়েছেন অঞ্জন, নিজের সহজাত লেখনীর দক্ষতায় ও মুগ্ধ করা গায়কীতে। আর একটি নির্দিষ্ট তারিখ, ‘১২ মে’; এটুকুই তো ‘মালা’কে বাংলা গানের জগতে কাল্ট করে তুলেছে।
দুটি গানেরই ইউটিউব লিংক রইল, শুনে নেবেন সময় করে—
অঞ্জন দত্তের গান
পিটার সারস্টেডের গান
মালা আসলে কে, তার সুস্পষ্ট জবাব অঞ্জনও জানাননি। নিজেই প্রশ্ন রেখেছেন, ‘মালা কে?’ তবে এটি জানিয়ে রেখেছিলেন, ‘আজ বারোই মে, তাই সকাল থেকেই জন্মদিনের তোড়া তোড়া ফুল।’ আর বিচ্ছেদের কথাটাও এদিনেই এসে ঠেকে—
‘এই শুভদিনে নানান কাজের ফাঁকে পড়ছে কি মনে তোমার?
এই বারোই মে তুমি চলে গিয়েছিলে জীবন থেকে আমার!’
মালা আর বারোই মে সব সময়ই জীবন্ত সংগীতপ্রেমীদের মনে। উপলক্ষ বিচ্ছেদ কি জন্মদিন, যা ইচ্ছে হোক না, কী বা আসে-যায়!