ভালোবাসা আইসক্রিমের মতো, যত্ন নিতে হয় : রেদওয়ান রনি
রেদওয়ান রনি পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্রটি ছিল ‘চোরাবালি’। প্রথম ছবিতেই পেয়েছিলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। আসছে ২৯ এপ্রিল মুক্তি পাচ্ছে তাঁর দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ‘আইসক্রিম’। এ ছবি নিয়ে কি কিছু প্রত্যাশা করছেন রনি? এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে আলাপ করেছেন রেদওয়ান রনি।
প্রশ্ন : চলচ্চিত্রের নাম ‘আইসক্রিম’ কেন?
উত্তর : তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ না করলে আইসক্রিম কিন্তু গলে যায়। আইসক্রিম দেখতেও সুন্দর। মানুষের সঙ্গে মানুষের ভালোবাসার সম্পর্ক আইসক্রিমের মতো। ভালোভাবে নার্সিং না করলে গলে যায় মানে, সম্পর্ক ভেঙে যায়। আমার মতে, ভালোবাসা হলো আইসক্রিমের মতো, যত্ন নিতে হয়। ‘আইসক্রিম’ ছবির গল্প সমসাময়িক। ছবিতে আমি একটা ভালোবাসার সম্পর্ক দেখাতে চেয়েছি। কতখানি সফল হয়েছি, সেটা দর্শক ভালো বলতে পারবেন। ভালোবাসায় বিশ্বাস থাকা অনেক জরুরি। বিশ্বাস ভেঙে গেলে সম্পর্ক আর জোড়া লাগানো যায় না। তাই কোনো কিছুর বাড়াবাড়ি ঠিক নয়। সম্পর্কে ঝগড়া, মান-অভিমান হতেই পারে। এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে মনের ভেতর ভালোবাসা থাকলে ভাঙা সম্পর্কও জোড়া লাগতে পারে। ‘আইসক্রিম’ ছবিতে সম্পর্কের অনেক বিষয় দেখানো হয়েছে।
প্রশ্ন : ছবির নায়ক-নায়িকা একেবারে নতুন। নতুনদের নিয়ে কাজ করতে কেন আগ্রহী হয়েছেন?
উত্তর : ছবিতে আমি দর্শককে ফ্রেশ ইমোশন দেখাতে চেয়েছি। তাই নতুনদের নিয়েছি। যাঁদের হাসি-কান্না-দুঃখ অভিনয় এর আগে দর্শক দেখেননি। একটু রিস্ক তো ছিলই। আমার মনে হয়, আমি ভালো স্টোরি টেলার। যদি আমার স্টোরি বলার ভালো ক্ষমতা থাকে, তাহলে একটা স্টোরি স্ক্রিনে দেখাতে আমি পুরাতন কিংবা নতুন আর্টিস্ট নিয়েও করতে পারি। আইসক্রিমের শুটিং আমি বাংলাদেশের অনেক দূরবর্তী জায়গায় গিয়ে করেছি। অনেক কষ্ট করেছি আমরা। কিন্তু অ্যাক্টিং আমি আমার আর্টিস্টদের কাছ থেকে ভালো পেয়েছি। তুষি, রাজ-উদয়ের অনুভূতি পর্দায় দর্শকের কাছে সত্যি মনে হবে। এমন আশা নিয়ে ছবিটি আমি নির্মাণ করেছি।
প্রশ্ন : ‘আইসক্রিম’ ছবিটি নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কী রকম?
উত্তর : আমি বলব, ‘আইসক্রিম’ ছবির গল্প সবার জানা দরকার। এখন প্রেমের সম্পর্কগুলো খুব দ্রুত ভেঙে যায়। সম্পর্কের এই বিষয়গুলো আমি যেমন ভাবছি, তেমনি অনেক মানুষও ভাবছেন। ‘আইসক্রিম’ ছবির গল্প দর্শকের মনের অনেক প্রশ্নের উত্তর দেবে। তাই প্রত্যাশা অনেকখানি। এখন শুধুই অপেক্ষা।
প্রশ্ন : আপনার প্রথম চলচ্চিত্র ‘চোরাবালি’তে জয়া আহসানের বিপরীতে কলকাতার নায়ক ইন্দ্রনীল অভিনয় করেছেন। অথচ দ্বিতীয় ছবিতে নতুন অভিনয়শিল্পী। এ বিষয়ে কিছু বলুন...
উত্তর : আমি সিনেমাটিক একটা গল্প ‘চোরাবালি’তে বলতে চেয়েছিলাম। ছবিতে নায়ক হিসেবে আমি এমন একজনকে চেয়েছি, যাঁর অভিনয় ও শারীরিক গঠন ভালো হবে। ইন্দ্রনীলের মধ্যে সেটা আমি খুঁজে পেয়েছিলাম। তবে শুরুতে আমি নতুন নায়ক নেওয়ার চেষ্টা করেছি। আর জয়া আপার অভিনয় তো শুরু থেকেই ভালো লাগত। তাঁকে ‘চোরাবালি’র গল্প বোঝানোর পর তিনি অভিনয় করতে রাজি হয়েছিলেন।
প্রশ্ন : শুনেছি ‘চোরাবালি’তে প্রয়াত শক্তিশালী অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি একদিন অভিনয় করেছিলেন?
উত্তর : আমার প্রথম ছবিতে ফরীদি ভাইকে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার ছিল। ‘চোরাবালি’র শুটিং উনাকে নিয়ে একদিন করতে পেরেছিলাম। এর পর তো তিনি না-ফেরার দেশে চলে গেলেন। ছবিটি নিয়ে তিনি আমাকে অনেক পরামর্শ দিয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে আমার বহুবার মিটিং হয়েছিল।
প্রশ্ন : ছোটবেলা থেকেই কি আপনার পরিচালক হওয়ার ইচ্ছা ছিল?
উত্তর : ছোটবেলা থেকে আমি বই পড়তে খুব পছন্দ করতাম। আমার বাবা বাংলা সাহিত্যের একজন টিচার ছিলেন। বাবা প্রচুর বই পড়তেন। তাই আমাদের বাসায় অনেক ধরনের বই ছিল। শৈশবে বড়দের অনেক বইও পড়েছি। হুমায়ূন আহমেদ, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা বই ছিল আমার অনেক প্রিয়। বই পড়লে কল্পনাশক্তি অনেক বৃদ্ধি পায়। বই পড়ার সময় কল্পনা করে আমি সেই দৃশ্য দেখার চেষ্টা করতাম। আর কলেজে পড়ার সময় আমার পরিচালক হওয়ার প্রথম ইচ্ছা হয়েছিল। আমি রাজশাহী নিউ গভর্নমেন্ট ডিগ্রি কলেজে পড়েছি। কলেজে আমার প্রিয় বন্ধু ছিল রানা। ও দেখতে নায়কদের মতো ছিল। রানার ইচ্ছা ছিল, ও নায়ক হবে। পরে আমরা দুই বন্ধু মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, যেভাবে হোক আমাদের উদ্দেশ্য আমরা সফল করব। এরপর ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য আমরা দুজন একসঙ্গে এসেছিলাম। হঠাৎ রোড অ্যাক্সিডেন্টে রানা মারা যায়। আমি এখনো এটা মানতে পারি না। যা হোক, তার পর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, একা কিছু না করে যৌথভাবে করব। তারপর মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয় আমার। এভাবে পরিচালনার সঙ্গে ধীরে ধীরে যুক্ত হই আমি।
প্রশ্ন : আপনার পরিচালনায় প্রথম কাজ কী ছিল?
উত্তর : চলচ্চিত্র নির্মাণের আগ্রহ ছিল শুরু থেকেই। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। ২০০৫ সালে উড়োজাহাজ শিরোনামে একটি টেলিফিল্ম নির্মাণ করেছি আমি। এর পর আমার ও ফাহমির পরিচালনায় ‘হাউসফুল’ সিরিয়ালটি ছিল আমার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট। দর্শক এই নাটকের মাধ্যমে মূলত আমাকে চিনেছেন। ‘হাউসফুল’ নাটকটি দেখেননি এমন দর্শক খুব কম। কারণ সে সময় আমরা দর্শকের প্রচুর সাড়া পেয়েছিলাম।
প্রশ্ন : আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
উত্তর : প্রচুর ভালোমানের চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চাই। এ ছাড়া আমার নিজের ব্যবসা প্রসার করার চেষ্টা করব। যাই কিছু করি না কেন, মিডিয়ার বাইরে কিছু চিন্তা করব না।