সাক্ষাৎকার
চলচ্চিত্র পারে দুই বাংলাকে আবারো এক করতে : প্রসেনজিৎ
পশ্চিম বঙ্গের জনপ্রিয় ও গুণী অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। গতকাল মঙ্গলবার তিনি ঢাকায় আসেন তাঁর নতুন ছবি ‘শঙ্খচিলে’র প্রিমিয়ার অনুষ্ঠানে। গৌতম ঘোষ পরিচালিত বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ এই ছবিতে প্রসেনজিৎ অভিনয় করেছেন মূল চরিত্রে। নতুন ছবি ছাড়াও নানা প্রসঙ্গে প্রসেনজিৎ গতকালই এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দেন এনটিভি অনলাইনকে।
প্রশ্ন : ‘মনের মানুষ’ ছবির পর দীর্ঘ পাঁচ বছর পর গৌতম ঘোষের নতুন চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। ‘শঙ্খচিল’ ছবিতে অভিনয় করার অভিজ্ঞতা আপনার কেমন ছিল?
প্রসেনজিৎ : গৌতম দাদার ছবি মানেই আমার কাছে স্পেশাল। গৌতম দাদার ছবিতে কাজ করা ভাগ্যের ব্যাপার। ‘মনের মানুষ’ ছবিটির পর আমি নিজেই দাদাকে বহুবার বলেছি আবার কবে একসঙ্গে কাজ করব। দাদা শুধু বলতেন অপেক্ষা করতে। এরপর ‘শঙ্খচিল’ ছবির জন্য আমাকে বললেন তিনি। খুব ভালো প্রস্তুতি নিয়ে ছবিটির শুটিং আমরা করেছি। কলকাতার টাকি শহর ও বাংলাদেশের সাতক্ষীরায় আমরা টানা ৩৮ দিন শুটিং করেছি। এত দিনের শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা অনেক রয়েছে। সাতক্ষীরায় শুটিং লোকশনে আমাকে দেখার জন্য রাত ৩টাতেও মানুষজন এসে দাঁড়িয়ে থাকত। শুটিংয়ের সময় প্রতিদিন এ রকম ভিড় ছিল।
প্রশ্ন : ছবির প্রচারণার জন্য সম্প্রতি আপনি কলকাতার কয়েকটি বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা ‘শঙ্খচিল’ নিয়ে কী ভাবছেন বলে আপনি মনে করেন?
প্রসেনজিৎ : হ্যাঁ , আমরা কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়সহ মোট চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। সত্যি বলতে কি, তরুণ প্রজন্মকে খুব ভাবিয়েছে ‘শঙ্খচিল’। তাঁদের বয়স তো খুব কম। সীমান্তবর্তী এলাকার অনেক ঘটনা তাঁদের অজানা। দেশভাগের পুরো ইতিহাসও তাঁরা ঠিকমতো জানেন না। আমার মনে হয়েছে শঙ্খচিলের প্রেক্ষাপট শুনে তাঁরা বেশ ভেবেছে এ বিষয়গুলো নিয়ে। সবার সঙ্গে কথা বলে আমি বুঝেছি তাঁদের মানসিকতা কাঁটাতারের বিভেদ মানে না। চারটা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য টানা তিনদিন ছবির প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলাম আমি। একদম ঘুম হয়নি। প্রচারণা শেষ করেই প্লেনে উঠে বাংলাদেশে চলে এসেছি। ব্যাগ গোছানোরও সময় হয়নি। আমি বেশ ক্লান্ত। তারপরও বাংলাদেশে এসে ভীষণ রকম ভালো লাগছে। ইতিহাস তো কখনো বদলে যাবে না, তবে আমার মন বলছে একমাত্র চলচ্চিত্র ও বিনোদন পারে দুই বাংলাকে আবারো এক করে দিতে। বিনোদন অনেক বড় শক্তি। এতে হয়তো তরুণদের ভূমিকা থাকবে সবচেয়ে বেশি।
প্রশ্ন : ‘শঙ্খচিল’ ছবিতে আপনিও একজন প্রযোজক। ছবিটি প্রযোজনা করার আগ্রহ কেন তৈরি হয়েছিল?
প্রসেনজিৎ : ছবি প্রযোজনা করার ইচ্ছে থাকলে আমি ১৫ বছর আগে তা করতে পারতাম। আমি ছবিটি দুটো কারণে প্রযোজনা করতে আগ্রহী হয়েছিলাম। প্রথমত, এটা গৌতম দাদার ছবি। দ্বিতীয়ত, ছবির বিষয়, গল্প, চিন্তা অসাধারণ। ছবিটি নিয়ে প্রথম আলাপে গৌতম দাদাকে আমি নিজেই বলেছিলাম, ছবির বিষয়বস্তু আমার দারুণ লেগেছে, আমরা সবাই মিলে এটা করে নিব। আর আমি বিশেষভাবে যে জিনিসটা ভেবেছি তা হলো, ঋত্বিক ঘটক দাদা হঠাৎ করে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। মৃণাল সেন, আমাদের মৃণাল দাদা আর ছবি বানাবেন না। লিভিং লিজেন্ডদের মধ্যে গৌতম দাদা অন্যতম। আমার ছেলে বড় হয়ে হয়তো বলতে পারবে, ‘আমার বাবা গৌতম দাদার একটা ছবি প্রযোজনা করেছেন।’
প্রশ্ন : ‘শঙ্খচিল’ ছবিতে সাঁঝবাতি আপনার মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছে। কেমন করেছে সাঁঝবাতি?
প্রসেনজিৎ : সাঁঝবাতিকে আমি এখন মেয়েই মনে করি। শুটিং শেষ হওয়ার পরও আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ হয়েছে। এখনো হয়। ভারি মিষ্টি মেয়ে সাঁঝবাতি। শুটিং চলাকালীন অনেক গরম ছিল। এজন্য আমরা দুজন অনেক তেঁতুলের শরবত খেয়েছি। শুটিংয়ের সময় তেঁতুলের শরবত ছিল আমাদের দুজনেরই প্রিয় খাবার।
প্রশ্ন : আট বছর ধরে দর্শক আপনাকে চলচ্চিত্রে বিভিন্ন চরিত্রে আবিষ্কার করেছেন। প্রতিনিয়ত আপনি আপনার চরিত্রের নতুন ধারা সৃষ্টি করেই চলেছেন। এ বিষয়ে আপনার অভিমত কী?
প্রসেনজিৎ : হ্যাঁ, এটা সত্যি প্রায় সাত-আট বছর ধরে আমি আমার ধারাটাকে পরিবর্তন করেছি। আমার বাণিজ্যিক জায়গাটা আমি এই প্রজন্মের আর্টিস্টদের কাছে ছেড়ে দিয়েছি। এটাই হয়তো নিয়ম। দেখুন, আমি সময় আর ক্যালেন্ডারকে পাল্টাতে পারব না। সময়ের গতিতে আমি যদি না চলতে পারি তাহলে আমি পিছিয়ে থাকব। মানুষ আমাকে রিজেক্ট করার আগে আমি নিজেই সেখান থেকে চলে যাব। কারণ আমরা স্বপ্ন বিক্রি করি। আমার স্বপ্ন এখনো শহর-গ্রাম এবং বিশাল বাণিজ্যিক জায়গাগুলোতে ছড়িয়ে আছে। এ জন্য হয়তো আমিও আছি।
প্রশ্ন : বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনার এখন অনেক ছবি নির্মিত হচ্ছে। যৌথ প্রযোজনার ছবি নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কী রকম?
প্রসেনজিৎ : এখনকার প্রযুক্তি অনেক উন্নত। আজকের নির্মিত সিনেমাগুলো যে গতিতে চলছে আর সিনেমা নিয়ে ভাগাভাগি চলবে না। যৌথ প্রযোজনার ছবি আগেও নির্মিত হয়েছে। সামনে আরো ভালো কিছু ঘটবে। কলকাতার শিল্পীদের সঙ্গে আমি যেভাবে কথা বলি এখানকার শিল্পীদের সঙ্গেও আমি একই ভাবে কথা বলি। আর দুই বাংলা এক যোগে নিয়মিত কাজ করলেও বড় বাজেটের অনেক ভালো ভালো ছবি উপহার দেওয়া সম্ভব।
প্রশ্ন : কোনটা বেশি প্রিয়- বুম্বা না প্রসেনজিৎ?
প্রসেনজিৎ : আমার ডাক নাম তো বুম্বা। ছোটবেলা থেকে বাবা এই নামেই আমাকে ডাকতেন। আর আমি সত্যজিৎদার একটা ছবিতে বুম্বা নামে একটি চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। সেখান থেকেই মূলত নামটা খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠে। এখন এমন অবস্থা প্রসেনজিৎ বলে আমাকে কেউ আর ডাকে না। প্রসেনজিৎ নামটাই উঠে যাচ্ছে। পাবলিক অনুষ্ঠানগুলোতে চিফ মিনিস্টাররাও এখন আমাকে বুম্বাদা বলেই ডাকছেন।