সাক্ষাৎকার
আমার বউ আমার আসল নায়িকা : নোবেল
আদিল হোসেন নোবেল, দেশের জনপ্রিয় একজন মডেল ও অভিনেতা। নিজের পেশাজীবন নিয়েই তিনি ব্যস্ত থাকেন। তবে সময় পেলে মডেলিং কিংবা অভিনয়টাও করেন। মাঝেমধ্যে পরিচালক হিসেবে নিজেকে আবিষ্কার করতে চান। হয়ে ওঠে না ব্যস্ততার কারণে। দীর্ঘদিন ধরে মিডিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে নিজের ভাবনাগুলো অবশ্য ভাগাভাগি করেন অন্য পরিচালকদের সঙ্গে। চলচ্চিত্রে অভিনয়ের ইচ্ছা একদমই নেই। নিজের স্ত্রীকেই প্রিয় নায়িকা বলে উল্লেখ করেছেন। মিডিয়া ও নিজের জীবন নিয়ে এমন সব ভাবনার কথা সম্প্রতি এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন নোবেল।
প্রশ্ন : মডেলিংয়ের পাশাপাশি আপনি অভিনয়েও জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। পরিচালকরা চাইলেও আপনি অভিনয়ে নিয়মিত হননি। এর পেছনে কোনো কারণ আছে কি?
উত্তর : আমি একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে অনেক দিন ধরে কাজ করছি। আসলে এটাই আমার মূল পেশা। আমি একাগ্র চিত্তে এই কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। অন্যদিকে মডেলিং ও অভিনয় যখন আমি করি, তখন সেখানেও পেশাদারিত্ব থাকে। কারণ, এই কাজেও আমি অনেক মনোযোগী। তবে হ্যাঁ, অভিনয় কম করি কারণ, মূল পেশায় আমি বেশি সময় দিই। আর নাটকে কম অভিনয় করার একটা সুবিধাও আছে। সেটা হলো, আমি বেছে বেছে আমার পছন্দ অনুযায়ী কাজ করতে পারি। এতে কাজের মান ঠিক থাকে।
প্রশ্ন : রোমান্টিক নাটকে অভিনয় করেছেন আপনি। আপনার কাছে ভালোবাসার অর্থ কী?
উত্তর : আমরা অনেক সময় বলে থাকি, ভালোবাসা নিঃস্বার্থ ও নিঃশর্ত হতে হয়। কিন্তু কখনো কখনো বাস্তবতা ভিন্ন। সব কাজের পেছনে যুক্তি থাকে। ভালোবাসার পেছনেও সর্বপ্রথম যুক্তি খুঁজে বের করতে হবে। ভবিষ্যৎ নিয়ে পরিকল্পনা থাকবে পরিষ্কার। ভালোবাসার অর্থ দুজনের কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ হতে হবে। এসবের ঘাটতি থাকলে আমার কাছে মনে হয়, সম্পর্কগুলো দ্রুত ভেঙে যায়। অবশ্য এটা পুরোপুরি আমার অভিমত।
প্রশ্ন : আপনি তো ভালো গানও গাইতে পারেন। গত বছর একটি বেসরকারি টিভি অনুষ্ঠানে আপনি গানও গেয়েছিলেন। সামনে গান নিয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে কি?
উত্তর : হ্যাঁ, একটি অনুষ্ঠানে ‘মন কী যে চায় বলো, যারে দেখি লাগে ভালো ’ এই গানটি গেয়েছিলাম। গানটি অনেক মজার ও চমৎকার। গান অনেক সাধনার বিষয়। আমি এসব কখনোই করিনি। শুধু শখের বশে টুকটাক গান গাই। তাই বিশেষ কোনো পরিকল্পনা নেই। আর গান গাওয়ার চেয়ে শুনতেই বেশি ভালো লাগে আমার। আমি একসময় প্রচুর পিংক ফ্লয়েড শুনতাম। এ ছাড়া পুরোনো দিনের যেকোনো গান আমার পছন্দ।
প্রশ্ন : শুনেছি, আপনি সময় পেলে পরিবারসহ দেশের বাইরে অনেক কনসার্ট দেখতে যান। সত্যি কি তাই?
উত্তর : হ্যাঁ, সুযোগ পেলে আমি আমার স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বাইরে কনসার্ট দেখতে যাই। গত বছর ঈগলস ব্যান্ডের কনসার্ট দেখতে ক্যালিফোর্নিয়ায় গিয়েছিলাম। বাপ্পা মজুমদারও আমাদের সঙ্গে গিয়েছিলেন। সামনে কনসার্ট দেখার জন্য আবারও বাইরে যেতে পারি। পরিকল্পনা করছি।
প্রশ্ন : একজন নোবেল হওয়ার পেছনে কার অবদান সবচেয়ে বেশি বলে মনে করেন?
উত্তর : এ প্রশ্নের উত্তর দিতে হলে আমাকে অনেকের নাম বলতে হবে। মডেলিং যখন আমি শুরু করি, তখন আমার মধ্যে অনেক ভীতি ছিল। মনে মনে চিন্তা করেছিলাম, পারব তো? তবে আমার মধ্যে আত্মবিশ্বাস ঠিকই ছিল। আসলে আমাদের পরিবার খুব কনজারভেটিভ। আমি কার সঙ্গে কথা বলব কি বলব না, সেটাও খেয়াল রাখতেন। রাতে বাড়ির বাইরে যাওয়া নিষেধ ছিল আমার। সেখানে আমি মডেলিং করব, এটা তো চিন্তাই করতে পারেননি তাঁরা। আমার কাজিন নাসির ভাই ও তাঁর স্ত্রী তুলি আপা একটা অ্যাড এজেন্সির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তুলি আপা সে সময় অনেক নামকরা মডেল ছিলেন। তাঁরাই আমাকে মডেলিং করার প্রথম প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তখন আমি তাঁদের বলেছিলাম, আমার মাকে রাজি করানোর জন্য। ব্যাপারটা এ রকম, মা রাজি হলে করব, না হলে নয়। তাঁরা সেটা করেছিলেন। এভাবেই র্যাম্প মডেলিংয়ের মাধ্যমে শুরু হয় আমার পথচলা। এরপর আফজাল হোসেন ভাইয়ের নির্দেশনায় প্রথম বিজ্ঞাপন করেছিলাম আমি। তাঁর কাছ থেকে শিখেছি অনেক কিছু, যা হয়তো এখনো কাজে লাগছে। এ ছাড়া আমার পরিবার, বন্ধুবান্ধব সবার অনেক অবদান রয়েছে। সুনির্দিষ্ট করে সবার নাম বলা এখন কঠিন।
প্রশ্ন : তরুণ মডেলরা অনেকেই আপনাকে অনুসরণ করেন। তাঁদের প্রতি আপনার পরামর্শ কী?
উত্তর : ফোকাস ঠিক রাখতে হবে। কাজটা যেন পাঁচমিশালি নয়। হুট করে কিছু হয় না। প্রস্তুতি নিতে হবে।
প্রশ্ন : আপনার সহশিল্পী হিসেবে সবার প্রথমেই মডেল ও অভিনেত্রী মৌ-এর নাম এসে যায়। তাঁর সম্পর্কে কিছু বলুন।
উত্তর : মৌ আর আমি খুব ভালো বন্ধু। ও আমাকে তুই করে সম্বোধন করে। কিন্তু আমি ওকে এখনো তুমি করেই ডাকি। এটা নিয়ে মৌ অনেক বকাঝকা করে আমাকে। আর মৌ অনেক মেধাবী শিল্পী। আমরা একসঙ্গে অনেক কাজ করেছি। অনেক সহযোগিতা পেয়েছি ওর কাছ থেকে।
প্রশ্ন : অনেকের সঙ্গেই তো কাজ করেছেন। আপনার কোন নায়িকাকে বেশি পছন্দ?
উত্তর : সত্যি বলতে, আমার বউ আমার আসল নায়িকা। এ ছাড়া আর কেউ নেই।
প্রশ্ন : দীর্ঘদিন ধরে মিডিয়ায় কাজ করছেন। কখনো পরিচালনা করার ইচ্ছা আছে কি?
উত্তর : সত্যি বলতে, মাঝেমধ্যে খুব ইচ্ছা হয়। সমাজের জন্য কিছু দায়বদ্ধতা রয়েছে। মাঝেমধ্যে নিজের মাথায় সৃজনশীল অনেক কিছু ঘোরে। দেখা যাক! সামনে কী হয়! আর অনেক সময় আমার এই চিন্তাগুলো নাট্য পরিচালকদের জানাই, তাঁরা আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন। অনেক সময় আমার মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে তাঁরা চিত্রনাট্য তৈরি করেন।
প্রশ্ন : মডেলিং, বিজ্ঞাপন ও টিভি নাটক করছেন; কিন্তু চলচ্চিত্রে আপনাকে এখনো দেখা যায়নি, এর কারণ কী?
উত্তর : আমার চলচ্চিত্রে কাজ করার ইচ্ছা নেই। যদি নিজে চাইতাম, তাহলে অনেক আগেই করতাম। আমার কাছে যে ধরনের চলচ্চিত্রের গল্পের প্রস্তাব এসেছিল, সেগুলো আমার পছন্দ হয়নি। এখনো চলচ্চিত্রে কাজ করার প্রস্তাব পাই। সত্যি কথা, আমার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই।