চড়া সুর, কড়া গান
ডিপ পার্পল, বারবার বদলাবার!
১৯৬৮ সালে ইংল্যান্ডের হার্টফোর্ডশায়ারে গঠিত হয় একটি ব্যান্ড। প্রথম দিকে তেমন সাড়া না ফেললেও পরে ব্যান্ডটি বেশ প্রভাবশালী হয়ে ওঠে। বিশেষ করে হার্ড রক ও হেভি মেটাল ঘরানার অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যান্ডগুলোর একটি হিসেবে ধরা হয় একে। নাম ‘ডিপ পার্পল’। ‘লেড জ্যাপেলিন ও ব্ল্যাক স্যাবাথ’র পাশাপাশি এই ব্যান্ডটিকেও হেভি মেটালের পাইওনিয়ারের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ব্যান্ডটি অবশ্য আগাগোড়া এই ঘরানায় গান করেনি। প্রথম দিকে তাদের গানে ক্ল্যাসিক্যালের বেশ ভালো প্রভাব ছিল। পরে মূলত হার্ড রক ও হেভি মেটাল ঘরানার গান করেই ব্যান্ডটি তুমুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। প্ল্যানেট রক ব্যান্ডটিকে তাদের ‘মোস্ট ইনফ্লুয়েন্সিয়াল ব্যান্ডস এভার’ তালিকার পঞ্চম স্থানে রেখেছে। ২০০৮ সালে তাদের ওয়ার্ল্ড মিউজিক অ্যাওয়ার্ডে ‘লিজেন্ড অ্যাওয়ার্ড’ দেওয়া হয়।
এরও অনেক অনেক আগে তারা পেয়েছিল এক বিচিত্র সম্মাননা। ১৯৭২ সালে লন্ডনের রেইনবো থিয়েটারে এক কনসার্টে অংশ নেয়। সেই কনসার্টের জন্য ‘দ্য গ্লোব’স লাউডেস্ট ব্যান্ড’ হিসেবে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে তাদের নাম ওঠে। সুর তাদের চড়া ছিল বটে! তবে আরেকটি বিষয়েও তাদের স্বীকৃতি দিতে হয় (নাকি অদ্ভুত প্রাপ্তি!), বারবার বদলে যাওয়ার নিরিখে। দফায় দফায় সাতবার বদলেছে এই ব্যান্ডের লাইনআপ, তবে ব্যান্ড দিব্যি টিকে রয়েছে আজও! অবশ্য এই বারবার বদলে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে বাতচিত ঠিকঠাক করা ছিল গোড়া থেকেই। বুঝতে হবে, ‘ডিপ পার্পল’ একটু ভিন্ন তরিকারই ব্যান্ড।
ব্যান্ডটি গঠনের গল্পের শুরু ১৯৬৭ সালে। সে বছর ক্রিস কার্টিস আচমকা হাজির হন টনি এডওয়ার্ডসের কাছে। ক্রিস কার্টিস ছিলেন ‘সার্চার্স’ ব্যান্ডের ড্রামার। আর টনি লন্ডনের ব্যবসায়ী। দুই বন্ধুর একটা লেবেল বা সংগীত প্রযোজনা সংস্থাও ছিল ‘হায়ার-এডওয়ার্ডস-কোলেটা (এইচইসি) এন্টারপ্রাইজ’। তো ঘটনা হলো, কার্টিস টনিকে একটা ব্যান্ড গঠনের প্রস্তাব দিলেন, যার অ্যালবাম বের হবে ওই লেবেল থেকে। তবে ব্যান্ডটা আর দশটা সাধারণ ব্যান্ডের মতো নয়। কার্টিসের ভাষায়, ওটা হবে একটা ‘সুপারগ্রুপ’। অনেকটা ‘মিউজিক্যাল রাউন্ড অ্যাবাউট’-এর মতো। অর্থাৎ ব্যান্ডের সদস্যরা আসবে-যাবে, কিন্তু ব্যান্ডটা থেকেই যাবে। ব্যান্ডের প্রয়োজন অনুযায়ী এর সদস্য পরিবর্তন করা হবে।
টনিরও চিন্তাটা মনে ধরল। টনিকে ম্যানেজার রেখে ব্যান্ড গঠনের কাজও শুরু হলো। কার্টিসের সঙ্গী হিসেবে ব্যান্ডে প্রথমে নেওয়া হলো কার্টিসেরই প্রতিবেশী জন লর্ডকে। জন লর্ড ছিলেন ভীষণ ক্ল্যাসিক্যাল অনুরক্ত। বাজাতেনও একটা ক্ল্যাসিকাল যন্ত্র—হ্যামন্ড অর্গান। জন লর্ড আগে বাজাতেন ‘রোলিং স্টোন’-এর রোনি উডের ভাই আর্ট উডের সঙ্গে। তারপর ব্যান্ডে যুক্ত হলেন গিটারিস্ট রিচার্ড ব্ল্যাকমোর। তাঁরা তিনজন কাজকর্মও শুরু করলেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই খিটিমিটি লাগিয়ে দিলেন কার্টিস। তার পর একদিন বলেই দিলেন, এই প্রোজেক্টে তাঁর আর তেমন উৎসাহ নেই। কিন্তু জন লর্ড আর ব্ল্যাকমোর ছাড়লেন না।
কাজেই ব্যান্ডের বাকি সদস্যও সংগ্রহ করা হলো। বেইজ গিটারে যোগ দিলেন নিক সিম্পার। ড্রামসে প্রথমে পছন্দ করা হয় ববি উডম্যানকে। তবে শেষ পর্যন্ত নেওয়া হয় ইয়ান পেইসকে। আর ভোকালিস্ট হিসেবে যোগ দেন রড এভান্স। চূড়ান্ত হয় ব্যান্ডটির প্রথম লাইনআপ। ব্যান্ডটির ধরন অনুযায়ী, পরে বিভিন্ন সময়ে এর লাইনআপে প্রচুর পরিবর্তন এসেছে। ব্যান্ডটির বিভিন্ন লাইনআপ পরিচিত মার্ক ওয়ান, টু, থ্রি—এ ধরনের পর্যায়ক্রমিক নামে। বর্তমানে ব্যান্ডটির মার্ক সেভেন লাইনআপ চলছে। মানে এখনকার লাইনআপটা ব্যান্ডটির লাইনআপ পরিবর্তনের সপ্তম পর্যায়ে এসে থিতু হয়েছে।
প্রথম লাইনআপ চূড়ান্ত হওয়ার পর ১৯৬৮ সালের মার্চ থেকে ব্যান্ডটি জ্যামিং শুরু করে। মানে একাট্টা হয়ে বাজনদারির চর্চা আর কী! মাঝে ডেনমার্ক ও সুইডেনে দুটো ছোটখাটো ট্যুরও করে। কিন্তু তখনো ব্যান্ডের নাম ঠিক করা হয়নি। সদস্যরা ব্যান্ডের জন্য নাম প্রস্তাব করতে থাকেন। তার মধ্যে থেকে ব্ল্যাকমোরের প্রস্তাবিত ‘ডিপ পার্পল’ নামটাই সবার মনে ধরে। ব্ল্যাকমোর নামটা দিয়েছিলেন তাঁর দাদির প্রিয় গানের নাম থেকে। আরেকটা নামও সবার পছন্দ হয়েছিল, ‘কংক্রিট গড’। কিন্তু নামটা একটু বেশিই রুক্ষ হয়ে যাচ্ছে বলে সবার মনে হয়।
পরের মাসেই তারা প্রথম অ্যালবামের কাজ শুরু করে। জুলাই মাসে বের হয় অ্যালবামটি ‘শেডস অব ডিপ পার্পল’। পরপরই প্রকাশ করে দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘দ্য বুক অব ট্যালিসিন’। পরের বছর বের হয় তৃতীয় অ্যালবাম ‘ডিপ পার্পল’। সবই গড়পরতা কিসিমের সাফল্য পায়।
১৯৬৯ সালে তৃতীয় অ্যালবাম প্রকাশের পর ‘ডিপ পার্পল’ আমেরিকা ট্যুরে গিয়েছিল। সে সময়েই জন লর্ড আর ব্ল্যাকমোর ভাবতে থাকেন, আরো চড়া সুরে কড়া গান করতে হবে। সেটা নিয়ে তাঁরা পেইসের সঙ্গে আলাপও করেন। এভান্স ও সিম্পারকে ছাঁটাই করা হয়। কারণ, তাঁরা যে ধরনের গান করতে চাইছিলেন, সেই তালের সঙ্গে এভান্স ও সিম্পার ঠিক খাপ খাওয়াতে পারবেন বলে তাঁদের মনে হয়নি। এভান্সের বদলে ভোকালিস্ট হিসেবে যোগ দেন ইয়ান গিলান। আর বেইসে যোগ দেন রজার গ্লোভার। এভাবে দাঁড়িয়ে যায় ‘ডিপ পার্পল’-এর মার্ক টু লাইনআপ। দলটির সাতখানা লাইনআপের মধ্যে এটিই সফলতম। এই লাইনআপই ব্যান্ডটিকে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ও সাফল্যের শীর্ষে নিয়ে যায়।
এই লাইনআপের প্রথম প্রকাশিত গান অবশ্য ব্যর্থ হয়। ‘হালেলুইয়া’র টিভি ভিডিও প্রকাশ করার পরও গানটি জনপ্রিয়তা পায়নি। ১৯৬৯ সালে মূলত জন লর্ডের উৎসাহে ব্যান্ডটি একটা অর্কেস্ট্রা গ্রুপের সঙ্গে কনসার্ট করে। ওটা ছিল এ ধরনের প্রথম কনসার্ট। এই কনসার্ট করতে গিয়েই জন লর্ডের ক্ল্যাসিক্যাল প্রীতি ও বাকিদের হার্ড রক প্রেমের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। আর এই দ্বন্দ্বের ফল হয় ভয়াবহ ভালো! ‘ডিপ পার্পল’ পুরোপুরি হার্ড রক ঘরানায় ঝুঁকে পড়ে।
পরের বছর থেকেই ‘ডিপ পার্পল’র সাফল্যযাত্রার শুরু। ১৯৭০-এর মাঝামাঝিতে মুক্তি পায় তাঁদের দ্রুত লয়ের উচ্চ নাদের নতুন ঘরানার প্রথম অ্যালবাম ‘ডিপ পার্পল ইন রকস’। হার্ড রক ঘরানার অ্যালবামটি তুমুল জনপ্রিয় হয়। লেড জ্যাপেলিনের ‘লেড জ্যাপেলিন টু’, ব্ল্যাক স্যাবাথের ‘প্যারানয়েড’র পাশাপাশি এই অ্যালবামটিকেও হেভি মেটালের সূচনাজ্ঞাপক অ্যালবাম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। অ্যালবামটির ‘স্পিড কিং’, ‘ইনটু দ্য ফায়ার’, ‘চাইল্ড ইন টাইম’ গানগুলো ভীষণ জনপ্রিয় হয়। পরের অ্যালবাম ‘ফায়ারবল’ও জনপ্রিয়তা পায়। তবে সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করে এর পরের অ্যালবাম ‘মেশিন হেড’। অ্যালবামটি রেকর্ড করার কথা ছিল মন্ট্রিউক্স ক্যাসিনোতে। কিন্তু সেখানে তাদের এক পারফরম্যান্সের সময় অতি উৎসাহী ভক্তের ভুলে আগুন লেগে যায়। সেই ঘটনা নিয়েও একটি গান অ্যালবামে জায়গা করে নেয়। ‘স্মোক ইন দ্য ওয়াটার’ ‘ডিপ পার্পল’র অন্যতম জনপ্রিয় গান। এ ছাড়া অ্যালবামটির জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে আছে ‘হাইওয়ে স্টার’, ‘স্পেস ট্রুকিন’, ‘লেজি’।
‘ডিপ পার্পল’ তখন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। অথচ আরেক দফা রদবদল করতে হলো। ব্ল্যাকমোরের সঙ্গে মনকষাকষি করে ব্যান্ড ছাড়লেন গিলান। পরে তাঁকে অনুসরণ করলেন গ্লোভারও। তাঁদের বদলি হিসেবে প্রথম নেওয়া হলো গ্লেন হিউজকে। প্রথমে তিনি বেইজ বাজানোর পাশাপাশি কিছুদিন ভোকালও দেন। পরে ভোকালিস্ট হিসেবে নেওয়া হয় ডেভিড কভারডেলকে। তখনো কভারডেল নিতান্তই অখ্যাত এক গায়ক। জুয়াটা অবশ্য বিফলে যায়নি। নতুন এই লাইনআপও জনপ্রিয়তা ধরে রাখে। এই লাইনআপ নিয়েই ‘ডিপ পার্পল’ ১৯৭৪ সালে দুটো অ্যালবাম বের করে। এর মধ্যে দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘স্টর্মব্রিঙ্গার’ বেশি জনপ্রিয় হয়। অ্যালবামটির ‘লেডি ডাবল ডিলার’, ‘দ্য জিপসি’, ‘সোলজার অব ফরচুন’ গানগুলো বেশ জনপ্রিয় হয়।
তবে অ্যালবামটি নিয়ে নিজের অপছন্দের কথা প্রকাশ্যেই জানান ব্ল্যাকমোর। অ্যালবামটির ‘ফাঙ্কি’ মিউজিককে তিনি ‘জুতা কালি করার সংগীত’ও বলেন। আর সবার ধারণাকে সত্য প্রমাণ করে পরের বছরই ব্যান্ড থেকে বের হয়ে যান তিনি। রোনি জেমস ডিওর সঙ্গে মিলে নতুন ব্যান্ড গঠন করেন—রেইনবো। ‘ডিপ পার্পল’ হারায় এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সদস্যকে। তাঁর বদলে যোগ দেন মার্কিন টমি বোলিন। বোলিনের কথা অবশ্য ব্ল্যাকমোরই বলে দিয়েছিলেন।
ব্ল্যাকমোর-পরবর্তী লাইনআপ নিয়ে ১৯৭৫ সালে ‘ডিপ পার্পল’র নতুন অ্যালবাম প্রকাশিত হয় ‘কাম টেস্ট দ্য ব্যান্ড’। কিন্তু তেমন একটা সাড়া ফেলতে পারে না। ব্যান্ডটা অনেকখানিই জৌলুস হারিয়ে ফেলে। শেষ পর্যন্ত ১৯৭৬ সালের ১৫ মার্চ লিভারপুল এম্পায়ার থিয়েটারে ‘ডিপ পার্পল’ শেষবারের মতো পারফর্ম করে। তার পরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন তাঁরা। সিদ্ধান্তটা নিতে গিয়ে কভারডেল নাকি কেঁদেই দিয়েছিলেন। জুলাই মাসে প্রকাশ্যে ব্যান্ডটি ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা আসে। সবাই যে যার মতো সলো ক্যারিয়ার বা নতুন ব্যান্ড নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যান।
আট বছর অপেক্ষার পর আবার ফিরে পাওয়া গেল ‘ডিপ পার্পল’কে। তা-ও সেই সোনালি সময়ের মার্ক টু লাইনআপে—গিলান, জন লর্ড, ব্ল্যাকমোর, গ্লোভার ও পেইস। সে বছরেরই অক্টোবরে তাঁদের নতুন অ্যালবামও আসে ‘পারফেক্ট স্ট্রেঞ্জার্স’। ১৯৮৬ সালে সোনালি সময়ের লাইনআপ আবার ফিরে এলেও তা বেশিদিন অটুট থাকেনি। ১৯৮৯ সালেই আবার গিলান-ব্ল্যাকমোর গোলমাল পাকে। আবারও ব্যান্ড ছাড়তে হয় গিলানকে। নতুন ভোকালিস্ট হিসেবে যোগ দেন ব্ল্যাকমোর-ডিওর ‘রেইনবো’র জো লিন টার্নার।
এই নতুন মার্ক ফাইভ লাইনআপ মাত্র একটি অ্যালবামের কাজ করে—স্লেভস অ্যান্ড মাস্টার্স। তারপর আবারও গিলানকে ফেরাতে তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। বিশেষ করে ব্যান্ডটির ২৫ বছরপূর্তি সামনে রেখে জন লর্ড, পেইস, গ্লোভার—তিনজনই গিলানকে ফেরাতে উঠেপড়ে লাগেন। ব্ল্যাকমোর আপত্তি করলেও শেষ পর্যন্ত মেনে নেন। গুজব আছে, ব্ল্যাকমোরকে রাজি করাতে নাকি তাঁর অ্যাকাউন্টে আড়াই হাজার ডলার পাঠানো হয়েছিল! আবার ফিরে আসে ‘মার্ক-টু’। প্রকাশ করে ‘দ্য ব্যাটল রেজেস অন...’।
অ্যালবামটির অনেক গানই লিখেছিলেন টার্নার। সেগুলো যখন গিলান গাইলেন, তাঁর গায়কী ব্ল্যাকমোরের পছন্দ হলো না। আবারও গিলান-ব্ল্যাকমোর দ্বন্দ্ব শুরু হলো। ১৯৯৩ সালের নভেম্বরে আবারও ‘ডিপ পার্পল’ ছাড়লেন ব্ল্যাকমোর। তাঁর বদলি হিসেবে কিছুদিন বাজালেন আরেক কিংবদন্তি গিটারিস্ট জো স্যাট্রিয়ানি। পরে যোগ দেন স্টিভ মোর্স।
‘ডিপ পার্পল’র এই মার্ক সেভেন লাইনআপই সবচেয়ে বেশিদিন স্থায়ী হয়েছে। এই লাইনআপের প্রথম অ্যালবাম ‘পারপেন্ডিকুলার’। তেমন ব্যবসা না করতে পারলেও বৈচিত্র্যে ভরপুর অ্যালবামটি সমালোচকদের ব্যাপক প্রশংসা কুড়ায়।
এর পর থেকেই ‘ডিপ পার্পল’ এই লাইনআপেই থিতু হয়ে আছে। ঘরানাও পরিবর্তন করেনি। বের করেছে বেশ কিছু অ্যালবাম। আর কনসার্ট-ট্যুর তো করছেই। মাঝে কেবল একটি পরিবর্তন এসেছে। ২০০২ সালে ক্ল্যাসিক্যাল ভক্ত জন লর্ড হ্যামন্ড অর্গানে ক্যারিয়ার গড়তে ব্যান্ড ছেড়েছেন। অবশ্য ব্যান্ডকে মোটেই অকূল পাথারে ভাসাননি। তাঁর বদলে যোগ দিয়েছেন ডন অ্যারে। মাঝে ২০০১ সালে যখন হাঁটুর সমস্যার কারণে জন লর্ড ব্যান্ডটির সঙ্গে বাজাতে পারেননি, তখন তাঁর বদলি হিসেবে বাজিয়েছিলেন ডন। জন লর্ড ‘ডিপ পার্পল’ ছেড়ে দেওয়ার পর এখন ইয়ান পেইস-ই ব্যান্ডটির একমাত্র সদস্য, যিনি ব্যান্ড গঠনের পর থেকেই এর সঙ্গে রয়ে গেছেন। ২০১২ সালে জন লর্ড মারা যান।
এই মার্ক সেভেন লাইনআপ নিয়ে ‘ডিপ পার্পল’ এখনো পারফর্ম করে যাচ্ছে। ঠিক নিয়মিত না হলেও তাঁরা অ্যালবামও বের করছে। ২০১৩ সালে বের হয়েছে তাঁদের সর্বশেষ অ্যালবাম ‘নাউ হোয়াট?!’ অ্যালবামটি একেবারে কম সাড়া ফেলেনি।
জন লর্ডের কল্যাণে শুরুতে খানিকটা ক্ল্যাসিক্যাল ঘেঁষা থাকলেও ‘ডিপ পার্পল’ পরে হার্ড রক ঘরানায় গান করতে শুরু করে। আর এই ঘরানায় তারা ব্যাপক প্রভাবশালী হয়ে ওঠে। হার্ড রক থেকে উদ্দাম বিটের গানকে নিয়ে যায় হেভি মেটালে। তাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়নি এমন হেভি মেটাল ব্যান্ড খুঁজে পাওয়া মুশকিল। ‘মেটালিকা’, ‘অ্যারোস্মিথ’, ‘প্যানটেরা’, ‘বন জোভি’, ‘ইউরোপা’, ‘মোটরহেড’ থেকে শুরু করে ‘আয়রন মেইডেন’, ‘জুডাস প্রিস্ট’, ‘ডেফ লেপার্ড’ পর্যন্ত একবাক্যে তাদের প্রভাব স্বীকার করে নেয়।
লাইনআপ
ভোকালিস্ট—ইয়ান গিলান
গিটার—স্টিভ মোর্স
বেইজ—রজার গ্লোভার
ড্রামস—ইয়ান পেইস
হ্যামন্ড অর্গান—ডন অ্যারে
সাবেক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য : রিচার্ড ব্ল্যাকমোর (গিটার), জন লর্ড (হ্যামন্ড অর্গান), জো স্যাট্রিয়ানি (গিটার), রড এভান্স (ভোকালিস্ট), নিক সিম্পার (বেইস), টমি বোলিন (ভোকালিস্ট), জো লিন টার্নার (গিটার)।
অ্যালবামগুলো
শেডস অব ডিপ পার্পল (১৯৬৮)
দ্য বুক অব ট্যালিসিন (১৯৬৮)
ডিপ পার্পল (১৯৬৯)
ডিপ পার্পল ইন রক (১৯৭০)
ফায়ারবল (১৯৭১)
হু ডু উই থিংক উই আর (১৯৭৩)
বার্ন (১৯৭৪)
স্টর্মব্রিঙ্গার (১৯৭৪)
কাম টেস্ট দ্য ব্যান্ড (১৯৭৫)
পারফেক্ট স্ট্রেঞ্জার্স (১৯৮৪)
দ্য হাউস অব ব্লু লাইট (১৯৮৭)
স্লেভস অ্যান্ড মাস্টার্স (১৯৯০)
দ্য ব্যাটল রেজেস অন... (১৯৯৩)
পারপেন্ডিকুলার (১৯৯৬)
অ্যাবানডন (১৯৯৮)
ব্যানানাস (২০০৩)
র্যাপচার অব দ্য ডিপ (২০০৫)
নাউ হোয়াট?! (২০১৩)
গুরুত্বপূর্ণ কনসার্টগুলো
ডিপ পার্পল ডেব্যু ট্যুর (১৯৬৮)
শেডস অব ডিপ পার্পল ট্যুর (১৯৬৮)
দ্য বুক অব ট্যালিসিন ট্যুর (১৯৬৮-৬৯)
ইন রকস ওয়ার্ল্ড ট্যুর (১৯৭০-৭১)
ফায়ারবল ওয়ার্ল্ড ট্যুর (১৯৭১-৭২)
মেশিন হেড ওয়ার্ল্ড ট্যুর (১৯৭২-৭৩)
স্টর্মব্রিঙ্গার ওয়ার্ল্ড ট্যুর (১৯৭৪-৭৫)
কাম টেস্ট দ্য ব্যান্ড ওয়ার্ল্ড ট্যুর (১৯৭৫-৭৬)
রিইউনিয়ন ট্যুর (পারফেক্ট স্ট্রেঞ্জার্স ওয়ার্ল্ড ট্যুর) (১৯৮৪-৮৫)
ডিপ পার্পল ২৫ ইয়ার্স অ্যানিভার্সারি ট্যুর (দ্য ব্যাটল রেজেস অন... ট্যুর) (১৯৯৩)
ডিপ পার্পল সিক্রেট ইউএসএ ট্যুর (১৯৯৪-৯৫)
ডিপ পার্পল এশিয়ান অ্যান্ড আফ্রিকান ট্যুর (১৯৯৫)
পারপেন্ডিকুলার ওয়ার্ল্ড ট্যুর (১৯৯৬-৯৭)
কনসার্টো ওয়ার্ল্ড ট্যুর (২০০০-০১)
দ্য সংস দ্যাট বিল্ট রক ট্যুর (২০১১-১২)
নাউ হোয়াট?! ওয়ার্ল্ড ট্যুর (২০১৩-১৫)
ওয়ার্ল্ড ট্যুর (২০১৬)