চড়া সুর, কড়া গান
ওজি-ডিওর ব্ল্যাক স্যাবাথ
ব্ল্যাক স্যাবাথ। হেভি মেটাল ঘরানায় অন্যতম পাইওনিয়ার ব্যান্ড। বিশেষ করে তাদের প্রথম তিনটি অ্যালবাম এই ঘরানার জন্য বিশেষভাবেই গুরুত্বপূর্ণ। এমটিভি-র গ্রেটেস্ট মেটাল ব্যান্ড র্যাঙ্কিংয়ে ব্ল্যাক স্যাবাথের অবস্থান সবার উপরে। আর ভিএইচ১-এর ১০০ গ্রেটেস্ট আর্টিস্টস অফ হার্ড রক-এ আছে দ্বিতীয় স্থানে। বেস্ট মেটাল পারফরম্যান্সের জন্য তারা গ্র্যামিও জিতেছে দুই বার।
ব্যান্ডটির জন্ম ১৯৬৮ সালে। সে জন্মও বেশ ঘটনাবহুল। গিটারিস্ট টনি ইয়মি এবং ড্রামার বিল ওয়ার্ড আগে বাজাতেন ‘মিথোলজি’ নামের একটি ব্যান্ডে। সে বছর তাঁরা ব্যান্ডটি থেকে বের হয়ে আসেন। ভাবনায় ছিল, ব্লুজ-রক ব্যান্ড গঠন করবেন। রেয়ার ব্রিড ব্যান্ড থেকে তাঁদের সাথে যোগ দেন বেজিস্ট গিজার বাটলার এবং ভোকালিস্ট ওজি অসবোর্ন। প্রথমেতাঁরা ব্যান্ডের নাম দেন পোল্কা টুল্ক ব্লুজ ব্যান্ড। পরে সংক্ষেপ করে পোল্কা টুল্ক। যোগ দেন গিটারিস্ট জিমি ফিলিপ এবং স্যাক্সোফোনিস্ট অ্যালান ক্লার্ক। কিছুদিন পরেই নাম বদলান, এবারে নাম ‘আর্থ’। নামটি অবশ্য ওসবোর্নের পছন্দ ছিল না। আর আন্তরিকতার অভাবের অভিযোগে লাইন-আপ থেকে বাদ পড়ে যান ফিলিপ-ক্লার্ক দুজনই। বাকি চারজন মিলে আর্থ নামে পারফর্ম করার পাশাপাশি বেশ কয়েকটি ট্র্যাকেরও ডেমো রেকর্ড করেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই তারা আবিষ্কার করেন, একই নামে আরও একটি ব্যান্ড আছে। অনেকেই সেই ব্যান্ডের সাথে তাদের গুলিয়েও ফেলছে। আর কী করা, আরেক দফা নাম বদলাতে হল।
সে সময় তাঁরা যেখানে প্র্যাকটিস করতেন, উল্টো পাশেই ছিল একটি সিনেমা হল। সেখানে তখন চলছিল বরিস কারলোফ অভিনীত ১৯৬৩ সালের মারিও বাভা-র হরর সিনেমা ‘ব্ল্যাক স্যাবাথ’। সিনেমাটি দেখতে ভিড়ও হত বেশ! সেখান থেকেই তারা ব্যান্ডের নাম রাখলেন ব্ল্যাক স্যাবাথ। তাঁদের গানের লিরিকও প্রায়ই হরর ধরনের হত। পাশাপাশি সামাজিক অসমতা, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, মাদকের কুফল, যুদ্ধের ভয়াবহতা নিয়েও গান করেছে ব্যান্ডটি।
নতুন নামে ব্যান্ডটি প্রথম শো করে ১৯৬৯ সালের ৩০ আগস্ট, ওয়ার্কিংটনে। প্রথম গুরুত্বপূর্ণ শো ছিল জন পিলস টপ গিয়ার রেডিও শো। প্রথম সিঙ্গেল ট্র্যাক রিলিজ করে পরের বছরের জানুয়ারিতে, এভিল ওমেন। এর পরের মাসে, ১৯৭০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পায় তাঁদের প্রথম অ্যালবাম, ‘ব্ল্যাক স্যাবাথ’। তুমুল জনপ্রিয়তা পায় অ্যালবামটি। শ্রোতাদের চাহিদা, প্রত্যাশা আর জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে মাস চারেকের মাথাতেই নতুন অ্যালবামের কাজে লেগে পড়েন তাঁরা। দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘প্যারানয়েড’ বাজারে আসে একই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে। এরপর একে একে ব্ল্যাক স্যাবাথ ভলিউম ৪ (১৯৭২), স্যাবাথ ব্লাডি স্যাবাথ (১৯৭৩), স্যাবোটাজ (১৯৭৫), টেকনিক্যাল ফ্যান্টাসি (১৯৭৬) এবং নেভার সে ডাই! (১৯৭৮)।
এরপরই সম্ভবত ব্যান্ডটিতে সবচেয়ে বড় রদবদলটি ঘটে। এমনিতেই ব্ল্যাক স্যাবাথের সবারই কম-বেশি মাদকের সাথে সখ্য ছিল। মদ-কোকেন বলতে গেলে ছিল তাদের নিয়মিত অনুষঙ্গ। কিন্তু ওজি অসবোর্ন আবার এক্ষেত্রে একটু বেশিই ‘অগ্রগামী’ ছিলেন! শেষে অবস্থা এমন দাঁড়াল, ওজিকে দিয়ে গান গাওয়ানোই যায় না! শেষে তাঁকে বাদই দিতে হল। এর বদলে নেয়া হল রেইনবো-র ভোকালিস্ট রোনি জেমস ডিও-কে। সন্ধান দিয়েছিলেন ব্যান্ডের ম্যানেজার ডন আর্ডেনের মেয়ে শ্যারন আর্ডেন। এই শ্যারনই আবার পরে ওজিকে বিয়ে করেন। ওজির গ্ল্যামারাস অ্যাপেয়ারেন্সের, বিশেষ করে ডাবল পিস সাইনের অভাব পূরণ করার ভাবনা থেকেই ডিও ডেভিলস হর্নের প্রচলন করেন, যেটি পরে মেটাল সাইনের স্বীকৃতি পায়।
ডিও অবশ্য বেশিদিন ব্যান্ডটির সঙ্গে থাকেননি। হেভেন অ্যান্ড হেল (১৯৮০) এবং মব রুলস (১৯৮১) অ্যালবাম দুটিতে কাজ করে তিনি বের হয়ে যান। গঠন করেন ‘ডিও’। পরে ১৯৯২ সালের ‘ডিহিউম্যানেইজার’-এও অবশ্য তিনি কাজ করেন। ইতিমধ্যেই ব্ল্যাক স্যাবাথে সদস্যদের যাওয়া-আসার মিছিল শুরু হয়ে গিয়েছিল। এরপরে তা আরও বাড়তে থাকে। টনি ইয়মি ছাড়া ব্যান্ডের সব সদস্যই সেই মিছিলে যোগ দেন।
১৯৯৭ সালে অসবোর্নের ওজফেস্ট-এ পারফর্ম করতে ব্ল্যাক স্যাবাথের প্রথম লাইন-আপের তিন সদস্য আবার একত্রিত হন; টনি ইয়মি, গিজার বাটলার এবং ওজি অসবোর্ন। ডিসেম্বরে তাদের সঙ্গে যোগ দেন বাকিজনও, ড্রামার বিল ওয়ার্ড। ১৯৯৮ এর অক্টোবরে তারা রি-ইউনিয়ন অ্যালবামও প্রকাশ করেন। পরে ওজি আবার তাঁর সলো অ্যালবাম নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এর মধ্যেই ২০০৬ সালে ডিওকে নিয়ে ব্ল্যাক স্যাবাথ প্রকাশ করে ‘দ্য ডিও ইয়ার্স’।
২০১০ সালে ওজি একবার বলেছিলেন, ব্ল্যাক স্যাবাথের প্রথম চারজনের আর একসাথে হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে ২০১১ সালেই তাঁরা আবার একত্র হন। ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে অ্যালবাম প্রকাশের ঘোষণা দেন। জুন মাসে বের হয় ‘১৩’ নামের অ্যালবামটি।
২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে অসবোর্ন আবার জানান, তাঁরা আরও একটা অ্যালবাম বের করতে চান। তারপর ফাইনাল ট্যুর করেই ইতি টানতে চান। অ্যালবামটা না হলেও, ট্যুর কিন্তু ঠিকই হচ্ছে। ২০১৬ সালে ট্যুর করার ঘোষণাও দেয়া হয়ে গেছে। কয়েক মহাদেশের এই ট্যুরে অবশ্য প্রথম লাইন-আপের বিল ওয়ার্ড থাকছেন না। তার বদলে ড্রাম বাজাবেন টমি ক্লুফেটোস। থাকবেন বাকি তিনজনই।
ব্ল্যাক স্যাবাথ
লাইন-আপ
ভোকাল- ওজি অসবোর্ন
গিটার- টনি ইয়মি
বেইজ- গিজার বাটলার
ট্যুরিং মেম্বার- টমি ক্লুফেটোস (ড্রামস), অ্যাডাম ওয়েকম্যান (কীবোর্ড)
গুরুত্বপূর্ণ সাবেক সদস্য- রোনি জেমস ডিও (ভোকাল), বিল ওয়ার্ড (ড্রামস), ভিনি অ্যাপিস (ড্রামস), জিওফ নিকোলস (কীবোর্ড)
স্টুডিও অ্যালবাম
ব্ল্যাক স্যাবাথ (১৯৭০)
প্যারানয়েড (১৯৭০)
মাস্টার অফ রিয়েলিটি (১৯৭১)
ব্ল্যাক স্যাবাথ ভলিউম ৪ (১৯৭২)
স্যাবাথ ব্লাডি স্যাবাথ (১৯৭৩)
স্যাবোটাজ (১৯৭৫)
টেকনিক্যাল ফ্যান্টাসি (১৯৭৬)
নেভার সে ডাই! (১৯৭৮)
হেভেন অ্যান্ড হেল (১৯৮০)
মব রুলস (১৯৮১)
বর্ন এগেইন (১৯৮৩)
সেভেন্থ স্টার (১৯৮৬)
দ্য এটার্নাল আইডল (১৯৮৭)
হেডলেস ক্রস (১৯৮৭)
টাইর (১৯৯০)
ডিহিউম্যানেইজার (১৯৯২)
ক্রস পারপাস (১৯৯৪)
ফরবিডেন (১৯৯৫)
রিইউনিয়ন (১৯৯৭)
ব্ল্যাক স্যাবাথ দ্য ডিও ইয়ার্স (২০০৬)
১৩ (২০১৩)
গুরুত্বপূর্ণ ট্যুর
ব্ল্যাক স্যাবাথ ট্যুর ১৯৭০
প্যারানয়েড ট্যুর ১৯৭০-৭১
মাস্টার অফ রিয়েলিটি ট্যুর ১৯৭১-৭২
নেভার সে ডাই ট্যুর ১৯৭৮
হেভেন অ্যান্ড হেল ট্যুর ১৯৮০-৮১
মব রুলস ট্যুর ১৯৮১-৮২
ওজফেস্ট ট্যুর ১৯৯৭
রিইউনিয়ন ট্যুর ১৯৯৯
ওজফেস্ট ট্যুর ১৯৯৯
ওজফেস্ট ট্যুর ২০০৫
ব্ল্যাক স্যাবাথ রিইউনিয়ন ট্যুর ২০১২-১৪
দ্য এন্ড ট্যুর ২০১৬