বাংলা ছবিতে কাজ করবেন মহিমা চৌধুরী

শিনা বোরা হত্যাকাণ্ড নিয়ে পরিচালক অগ্নিদেব চট্টোপাধ্যায়ের ‘ডার্ক চকলেট’ ছবিতে অভিনয় করার জন্য কলকাতার টলিউডে পা রেখেছেন বলিউড অভিনেত্রী মহিমা চৌধুরী। পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্কে তিনি বললেন, ‘ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দার্জিলিংয়ের অপূর্ব সৌন্দর্যের মধ্যে আমার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা। পাঞ্জাবি জাঠ পরিবারে আমার জন্ম। আমাদের তিন ভাই বোনের মধ্যে আমি ছিলাম সবচেয়ে শান্ত। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনা ও খেলাধুলার প্রতি আমার ভীষণ আগ্রহ ছিল। ইন্টারস্কুল প্রতিযোগিতায় আমি বরাবরই প্রথম কিংবা দ্বিতীয় হতাম। সেই সঙ্গে নাটকে অভিনয় করারও নেশা ছিল আমার। তবে যেহেতু আমরা মেয়েদের স্কুলে পড়াশোনা করতাম, তাই ছোটবেলায় নাটকে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পুরুষ চরিত্রে অভিনয় করেছি। ছোটবেলায় আমাদের বোর্ডিং স্কুলে প্রতি শনিবার ইংরেজি ছবি দেখানো হতো। সেই সঙ্গে বাংলা ছবিও দেখানো হতো। আমি বাংলার প্রয়াত চলচ্চিত্র স্রষ্টা সত্যজিৎ রায়ের ছবি দেখেই বড় হয়েছি। যে কারণে আজ বাংলা ভাষা বুঝি এবং কমবেশি বলতেও পারি। এভাবেই আমার স্কুলজীবন কাটতে থাকে।’
ক্যারিয়ারের শুরুর দিককার কথা এখনো ভোলেননি মহিমা। তিনি বলেন, ‘বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছোটবেলার স্বপ্ন বদলাতে শুরু করে। বাবা চেয়েছিলেন আমি আইএএস পরীক্ষায় বসি। কিন্তু আমি ক্রিয়েটিভ কিছু করতে চেয়েছিলাম। বাবা-মা অবশ্য আমার সেই ইচ্ছাকে বাধা দেননি। ফলে আমি অভিনয়ের জগৎটাকেই বেছে নিলাম। প্রথমে বিজ্ঞাপনের কাজ শুরু করি। আমির খান, ঐশ্বরিয়া রায়ের সঙ্গে পেপসি কোম্পানির একটা বিজ্ঞাপন করি প্রথমে। এরপর আস্তে আস্তে মুম্বাইকে জানতে শুরু করি। তারপর যখন মনে করলাম, সিনেমায় অভিনয় করতে পারব, তখনই অভিনয়টা শুরু করি।’
বিজ্ঞাপন থেকে সিনেমা। আর সিনেমায় পা রেখেই মহিমার প্রথম ছবি ‘পরদেশ’ সুপারডুপার হিট। জানালেন, “প্রথম প্রথম তো ভাবতেই পারিনি আমি অভিনেত্রী হয়ে গিয়েছি। তবে ‘পরদেশ’ ছবি হিট হওয়ার পর আর আমাকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এর পর থেকে একের পর এক ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছি। সেই সঙ্গে প্রচুর স্টেজ শো আর বিজ্ঞাপনের কাজ করে গিয়েছি। তবে বিয়ের পর ঠিক করে ফেলেছিলাম আর অভিনয় করব না। কিন্তু আমার মা, স্বামী এবং আট বছরের মেয়ে আরিয়ানা চাইল ফের অভিনয় করি। ফলে রাজি হয়ে গেলাম। বিয়ের পর অবশ্য প্রথম ২০০৮ সালে মুক্তি পাওয়া ‘হোপ অ্যান্ড এ লিটল সুগার’ নামে একটি ইংরেজি ছবি করেছিলাম।”
শুধু অভিনয় নয়, আজকের যুগে দাঁড়িয়ে মেয়েদের অবস্থান নিয়েও ভাবেন মহিমা। জানালেন, ‘আমাদের এই বিশাল দেশে একেক জায়গায় নারীদের অবস্থান একেক রকম। শহরে এক রকম, আবার গ্রামে আরেক রকম। গ্রামের অনেক জায়গায় এখনো নারীশিক্ষার গুরুত্ব নেই। কন্যাভ্রূণ হত্যা করা হয়, নারীরা কাজের জন্য বাইরে যেতে পারেন না। তবে শহরের চিত্র কিছুটা আলাদা।’ মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়েও মহিমা মুখ খুললেন। জানালেন, ‘এখনো শহরে মেয়েদের নিরাপত্তা নিশ্চিত নয়। দিল্লি শহরে তো রাত ১১টা বেজে গেলেই মেয়েদের বাইরে বের হতে গেলে ভাবতে হয়। আবার মুম্বাইতে মেয়েরা সারা রাতই বলা যায় নিরাপদ। কলকাতাও অনেকটা নিরাপদ।’ নারীদের সাংসারিক জীবন নিয়েও প্রশ্ন তুললেন মহিমা। বললেন, ‘সন্তানকে বড় করা থেকে শুরু করে সংসারের যাবতীয় দায়িত্ব নারীদেরই কেন সামলাতে হয়, তা আমার জানা নেই! সংসারের দায়িত্ব নারী-পুরুষ উভয়ের ভাগাভাগি করে নেওয়া উচিত বলেই মনে করি আমি। আমার স্বামী তো আমার কাজে যেমন হস্তক্ষেপ করেন না, তেমনি সংসারের দায়িত্বও তাঁকে শেখানো লাগে না।’
মহিমার কাছে তাঁর জীবনের আইডল তাঁর মা। মায়ের পজিটিভ এবং আত্মত্যাগী দিক তাঁর জীবনের অনুপ্রেরণা বলেই জানান তিনি। বললেন, ১৯৭৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর তাঁর জন্ম। প্রিয় ফুল রজনীগন্ধা। প্রিয় রং অফ হোয়াইট। প্রিয় পোশাক বলতে বাড়িতে পরতে ভালোবাসেন শর্ট পোশাক আর বাইরে ওয়ান পিস ড্রেস। প্রিয় ছবি নিজের অভিনীত প্রথম ছবি ‘পরদেশ’, যা তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। প্রিয় পরিচালক শেখর কাপুর। প্রিয় অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন। প্রিয় অভিনেত্রী রেখা। প্রিয় গায়ক কিশোর কুমার। গায়িকা আশা ভোঁসলে। আর প্রিয় খাবার মায়ের হাতের রান্না বাঙালি খাবার। যার মধ্যে অবশ্য চচ্চড়ি, ছোলার ডাল, পটোলের ডালনা, বেগুন ভাজা। আর মিষ্টির মধ্যে চমচম, নাড়ু, মিষ্টিদই। ভগবান কিংবা ভূত কোনোটাতেই বিশ্বাস করেন না। বাড়িতে মাদার মেরির ছবি বেড সাইট টেবিলে রাখা আছে। তবে জীবনের অনেকগুলো বছর বলিউড দাপানোর পর এবার বাংলা ছবিতে কাজ করতে চান মহিমা। জানালেন, ‘বাংলায় অভিনয় করতে চাই। তবে অবশ্যই সফট রোলে।’