রেসিপিতে ‘রজনীগন্ধা’র রহস্য জানালেন কেকা ফেরদৌসী
দেশের জনপ্রিয় রন্ধন বিশেষজ্ঞ কেকা ফেরদৌসী। প্রায় দুই যুগ ধরে তিনি টেলিভিশনে রান্নার অনুষ্ঠান করছেন। রান্নাবিষয়ক বইও লিখেছেন ১৪টি। তিন বছর ধরে চ্যানেল আই ভবনে ‘সেহরি নাইট ’ নামে একটি অনুষ্ঠান করছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে তাঁর আমন্ত্রণে ‘সেহরি নাইট’ অনুষ্ঠান হয়েছিল। অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে এসেছিলেন মিডিয়ার একঝাঁক তারকা। খাবারের মেন্যুতে ছিল বিফ, কাবাব, টিক্কা, ফিশ, চিকেন, রাইস, নানরুটি, ফ্রাইড চিকেন, শুঁটকির ভর্তা,আচার, সালাদ ও অনেক আইটেমের ডেজার্ট ইত্যাদি ।
‘সেহরি নাইট’ অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা ও অন্যান্য অনেক বিষয় নিয়ে এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন কেকা ফেরদৌসী। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন নাইস নূর।
এনটিভি অনলাইন : ‘সেহরি নাইট’ অনুষ্ঠানটি তিন বছর ধরে করছেন। এ সম্পর্কে জানতে চাই।
কেকা ফেরদৌসী : যানজটের জন্য অনেকে বলে ইফতার খেতে কোথাও আসতে পারি না। পরে চিন্তা করলাম ‘সেহরি নাইট’ করি। কেউ যানজটে পড়বে না। সবার সঙ্গে দেখাও হবে। এভাবে অনুষ্ঠানটি করা। অনুষ্ঠানে হামদ, নাত ও কাওয়ালি হয়। ভালোই লাগে। আমরা প্রতিবার চ্যানেল আই ভবনের ছাদ বারান্দায় অনুষ্ঠানটি করেছি। গত বছর বৃষ্টির কবলে পড়েছিলাম। এরপর আমরা দৌড়াদৌড়ি করে ক্যান্টিনে এসেছিলাম। আমার ইউনিটের যাঁরা সহযোগী ছিলেন, তাঁরা কেউই খাবার পায়নি। আমি নিজেও অল্প একটু ভাত ও পানি খেয়ে রোজা রেখেছিলাম। এ জন্য এবার ছাদ ও ক্যান্টিনে দুই জায়গায় খাবারের ব্যবস্থা রেখেছিলাম।
এনটিভি অনলাইন : এবার সেহরি নাইটে আপনার রান্না করা বিশেষ আইটেম কী ছিল?
কেকা ফেরদৌসী : আমার রেসেপিতে সব রান্না হয়েছে। এ ছাড়া আমি নিজে মেজবানি মাংস রান্না করেছি। ডেজার্টের মধ্যে পুডিং ও হালুয়াসহ অনেক কিছু বানিয়েছি।
এনটিভি অনলাইন : এবার আপনার রান্নার অনুষ্ঠান নিয়ে কথা বলি। আপনার উপস্থাপনায় ‘মনোহর ইফতার’-এর ২০ বছর পূর্ণ হয়েছে। এবারে অনুষ্ঠানটি করার অভিজ্ঞতা কেমন?
কেকা ফেরদৌসী : ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আমরা পুরো অনুষ্ঠান ফুল দিয়ে সাজিয়েছি। অতিথিকে আমরা ফুল উপহার দিচ্ছি। আমি যে কোন রান্না করার পর সেটা অন্য রকমভাবে পরিবেশন করতে পছন্দ করি। এবার আমি ফুল দিয়ে খাবার ডেকোরেশন করেছি।
এনটিভি অনলাইন : আপনার অনুষ্ঠানের একটা পর্বে উপস্থাপক রাবা খান অতিথি হয়ে গিয়েছিলেন। সেই পর্বে নুডলসের সঙ্গে রজনীগন্ধা ফুল পরিবেশন করায় ফেসবুকে অনেক ট্রল হয়েছে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য জানতে চাই।
কেকা ফেরদৌসী : খাবার পরিবেশন আমরা অনেক কিছু দিয়েই করি। ফুল দিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অনেক সময় খাবার সাজানো হয়। এটা যে আমি এবার প্রথম করেছি তা নয়। এর আগেও আমি ফুল ধুয়ে সেটা দিয়ে খাবার পরিবেশন করেছি। সাজিয়েছি। তখন কিন্তু অনেক কথা হয়নি।এ বছর অনেক কথা হচ্ছে। সবাই আমাদের অনুষ্ঠান দেখে মজা করে আমাদেরও ভালো লাগে। ভালো কথা বললে ভালো লাগে। খারাপ কথা বললে অনেক সময় খারাপ লাগে। এসব নিয়ে আমি ভাবি না। কে কী বলেছে আমার কাছে খারাপ লাগেনি। মানুষ অনুষ্ঠানটি দেখে বলেই নানা কথা বলে। না দেখলে তো বলত না। যার জন্যে আমার কাছে খারাপ লাগে না। মিডিয়াতে আমি যে জায়গায় আছি আমাকে কেউ এসব বলে নামাতে পারবে না, উপরেও উঠাতে পারবে না। আমি আমার কাজের মধ্য দিয়ে পরিচয় নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই।
এনটিভি অনলাইন : আপনি ইফতারে কি খেতে পছন্দ করেন?
কেকা ফেরদৌসী : আমি সব ধরনের খাবার খাই। তবে ইফতারে সামন্য খাবার খেতে পছন্দ করি। ছোলা, পেঁয়াজু ও জিলাপি খাই। সারা দিন রোজা রাখার পর মিষ্টি খেতে পছন্দ করি আমি।
এনটিভি অনলাইন : ‘বাংলার থালা’ নামে রাজধানীর বনানীতে আপনি একটি রেস্তোরাঁ দিয়েছেন। কেমন চলছে রেস্তোরাঁ ব্যবসা?
কেকা ফেরদৌসী : আমার অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল, বাংলাদেশের খাবারের আইটেম রেখে একটা রেস্তোরাঁ দিব। সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন আমি করেছি। এখনো বুঝতে পারছি না কতটা জনপ্রিয় হয়েছে তবে রমজানের পর বুঝতে পারব। আমার রেস্তোরাঁয় ৫০ জন একবারে খেতে পারবেন। আমার রেসিপিতে সব খাবার রান্না হয় এখানে। তিনজন শেফ রয়েছে। এর মধ্যে একজন পুরুষ আর বাকি দুজন নারী। আমি শুধুনারী শেফ দিয়ে রেস্তোরাঁ চালাতে চেয়েছিলাম। এর কারণ আমি চাই নারীরা স্বাবলম্বী হোক। কিন্তু এখন বাংলার থালা রাত ১২ টা থেকে ২ পর্যন্ত খোলা থাকে। এটা নারী শেফদের জন্য কঠিন কাজ হচ্ছে। ভবিষ্যতে নারী শেফদের নিয়ে আমি আরো ভাবব।
এনটিভি অনলাইন : আপনার ‘বাংলার থালা’ রেস্তোরাঁ নিয়েও অনেক সমালোচনা ও আলোচনা হচ্ছে। বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখছেন?
এনটিভি অনলাইন : বাংলার থালা নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, এখানে নুডলস পাওয়া যাবে কি না! সবার বোঝা উচিত ,এটা বাংলাদেশি খাবারের দোকান। নুডুলস তো বাংলাদেশি খাবার নয় যে এটা বাংলার থালা রেস্তোরাঁয় থাকবে। যার যা ইচ্ছে বলুক। আমি কিছু মনে করি না। যারা এসব কথা বলে তাদের বিবেচনা করে কথা বলা উচিত। বাংলার থালার নুডলসের কী আইটেম পাওয়া যাচ্ছে! এটা কোন কথা!
এনটিভি অনলাইন : আপনার রান্নার হাতেখড়ি কার কাছে?
কেকা ফেরদৌসী : আমার মায়ের (রাবেয়া খাতুন, কথাসাহ্যিতিক) কাছে। আম্মা বিক্রমপুরের মেয়ে। পুরান ঢাকায় বড় হয়েছে। আমার মা অনেক রান্না করতে পারে। এখনো মার কাছে জানতে চাই এটা কীভাবে করব? ওটা কীভাবে করব? আমি যা রান্না করি মা পছন্দ করে। আর মা আমার কাছে যা খেতে চায় আমিও রান্না করি। মা খুব সংযত। আমিও খুব সংযতভাবে খাওয়া-দাওয়া করতে পছন্দ করি।
এনটিভি অনলাইন : আপনি তো শাহরিয়ার নাজিম জয়ের উপস্থাপনায় ‘সেন্স অব হিউমার’ অনুষ্ঠানে অতিথি হয়েছে। অনুষ্ঠানে কী কী বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে?
কেকা ফেরদৌসী : এবার আমার মনোহর ইফতার অনুষ্ঠানের স্পন্সর ভিম। জয় বলেছে, হারপিকের স্পন্সর নিয়ে রান্নার অনুষ্ঠান করতে। জয় আমার সেন্স অব হিউমার নিয়েছে। আমিও জয়ের নিয়েছি। জয় আমাকে বলেছে, আপনি তো আগের শুকনা হয়েছেন। আমি উত্তরে বলেছি, তাতে তোমার কী? তুমি কি আমাকে নায়িকা বানাবা? অনেক বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে আমাদের।
এনটিভি অনলাইন : এখন অবসরে আপনার সময় কীভাবে কাটে?
কেকা ফেরদৌসী : আমার নাতি কায়সারের সঙ্গে সময় কাটাই। কায়সারের সাত বছর বয়স। কায়সার ফুটবল খেলতে পছন্দ করে। খেলাও দেখে।
এনটিভি অনলাইন : সামনে রাশিয়া বিশ্বকাপ। আপনার ফুলবলে প্রিয় দলের নাম জানতে চাই।
কেকা ফেরদৌসী : আমার পছন্দের টিম জার্মানি। গত বিশ্বকাপে আমি অস্ট্রেলিয়াতে ছিলাম। সেখানে কেউ জার্মানি দলকে সমর্থন করেনি। আমি একাই করেছিলাম।
এনটিভি অনলাইন : শেষ প্রশ্ন । রান্নার অনুষ্ঠান নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
কেকা ফেরদৌসী : ১৯৯৯ সাল থেকে মনোহর ইফতার অনুষ্ঠানটি করছি। অনুষ্ঠানের শুরু থেকে আমরা স্পন্সর পেয়েছি। প্রথমে কোন ফ্যাশন হাউজের শাড়ির স্পন্সর আমি পেয়েছিলাম। অন্যান্য কোম্পানিও স্পন্সর করেছে। তবে আমার মনে হয়, ইউনিলিভার সবথেকে বেশি স্পন্সর করেছে। এ বছরও তাঁরা করছে। রান্নার অনুষ্ঠান সৌদি আরব, মালেয়শিয়া, কাতার ও ভারতসহ অনেক দেশে আমি করেছি।
যদি আমি বেঁচে থাকি ও সুস্থ থাকি তাহলে অনুষ্ঠানটি সামনের বছর ভিন্নভাবে নিয়ে আসব। আমি দেখেছি আমার অনুষ্ঠানের একটি পর্বে কয়েক হাজার কমেন্ট এসেছে। অনুষ্ঠানে আট মিনিটের বিজ্ঞাপন থাকে। এই ছোট অনুষ্ঠানেই কয়েক হাজার মানুষের কমেন্ট আসে তাহলে তো বুঝতে হবে অনুষ্ঠানটি জনপ্রিয়। আমার কথা একটাই, তা হলো মানুষ রান্নার অনুষ্ঠান পছন্দ করে। দেখার পর তাঁরা ভালো কিংবা মন্দ বলবে। এটা তাঁদের অধিকার। আমি কারো কথায় মন খারাপ করি না। হয়তো মানুষ ভালোবাসে বলেই আমার রান্নার অনুষ্ঠান দেখে।