‘মুহাম্মদ’ (স.) চলচ্চিত্রের জন্য গড়া হয় মক্কার প্রতিরূপ
নানা আলোচনা আর সমালোচনার জন্ম দিয়ে অবশেষে মুক্তি পেয়েছে ইরানের বিখ্যাত পরিচালক মাজিদ মাজিদির ছবি ‘মুহাম্মদ (স.) : দ্য মেসেঞ্জার অব গড’। দীর্ঘ সাত বছর গবেষণা করে, শিয়া আর সুন্নি আলেমদের সঙ্গে আলোচনা করে, বিপুল পরিমাণ সরকারি অর্থ ব্যয় করে চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছেন মাজিদি। তাই এই চলচ্চিত্রের সঙ্গে তৈরি হয়েছে বিরাট সব ইতিহাস।
স্ক্রল ডট ইনের এক প্রতিবেদন বলছে, ছবির বেশির ভাগ অংশের শুটিং হয়েছে ইরানের ‘কম’ শহরে। কিছু দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার শহর বেলা-বেলাতে। ‘কম’ শহরে তো রীতিমতো ছবির পটভূমির সময়কার মক্কা নগরীর পুঙ্খানুপুঙ্খ প্রতিরূপ (রেপ্লিকা) তৈরি করা হয়েছিল। পুরো ছবির চিত্রায়নের সময় গণমাধ্যমের দিকে কড়া নজর রাখা হয়েছিল। কোনো সংবাদকর্মী বা গণমাধ্যমের প্রবেশাধিকার ছিল না ছবির সেটে।
ছবির সেটের বিষয়ে মাজিদি জানান, ছবির প্রয়োজনে তেহরানের কাছের শহর কমে পুরো মক্কা নগরীর সেই সময়কার রেপ্লিকা তৈরি করা হয়েছিল। খুব ছোট ছোট বিষয়গুলোও নজরে রাখা হয়েছিল।
পুরো ছবির শুটিং শেষ হওয়ার পর এর বিভিন্ন দৃশ্যের স্থিরচিত্র প্রকাশ করা হয় ছবির প্রযোজনা সংস্থার পক্ষ থেকে। সেখানে দেখা যায়, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (স.)-এর সময়ে কাবাঘরের অবস্থা, সেই সময় মক্কার পরিবেশ, ঘরবাড়ি, বাজার, আসবাব সবকিছু পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্দায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। পোশাকের মাধ্যমেও সেই সময়ের আবহ তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।
এ ছাড়া ছবির কিছু দৃশ্যের জন্য পুরো দল নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার লিমপুপু প্রদেশের বেলা-বেলা শহরে গেছেন মাজিদি।
দি ইরান প্রডেক্ট ডট কম জানিয়েছে, ছবির কলাকুশলী বাছাই করা হয়েছে পরিচালক মাজিদ মাজিদি ও মেকাপ আর্টিস্ট গিয়ানেত্তো ডি রসির প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে।
ছবির চিত্রনাট্যের সঙ্গে ইতিহাসকে মেশাতে মাজিদি সহায়তা নিয়েছেন ইরান, মরক্কো, তিউনিশিয়া, লেবানন, ইরাক ও আলজেরিয়ার বিভিন্ন ইসলামিক পণ্ডিত, ইতিহাসবিদদের। আরবি, ফার্সি ও ইংরেজি ভাষায় মুক্তি দেওয়া হয়েছে চলচ্চিত্রটি।
শুধু ছবির সেট নয়। ছবির কোনো ক্ষেত্রেই কোনো আপস করেননি মাজিদি। আবহসংগীতের জন্য ভারত থেকে উড়িয়ে নিয়েছেন অস্কারজয়ী ভারতীয় সংগীত পরিচালক এ আর রহমানকে। বিশাল বাজেটের এই ছবিতে কাজ করেছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কারিগরি বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা। সিনেমাটোগ্রাফি করেছেন তিনবার অস্কার জেতা ইতালির ভিত্তোরিও স্তোরেরো, এডিটিং করেছেন ইতালির রবার্টো পেরপিগনানি, স্পেশাল ইফেক্টের কাজ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের স্কট ই অ্যান্ডারসন এবং মেকআপ করেছেন ইতালির গিয়ানেত্তো ডি রসি।
মহানবীর (স.) অভূতপূর্ব জন্ম এবং কৈশোরের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময়টুকু এখানে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে দক্ষ নির্মাণশৈলীর মাধ্যমে।
নান্দনিকভাবে চিত্রায়িত এই ছবিটির দৈর্ঘ্য ১৭১ মিনিট, এটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় চার কোটি মার্কিন ডলার। ছবিটি আংশিকভাবে অর্থায়ন করেছে দেশটির সরকার। আর এটি নির্মাণে সময় লেগেছে সাত বছরেরও বেশি।