দিতির জন্য দোয়া মাহফিলে আসেননি তেমন কেউ
এফডিসিতে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের মধ্য দিয়ে গতকাল মঙ্গলবার স্মরণ করা হয় জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা পারভিন আকতার দিতিকে। দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে এই আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি। বাদ আসর শিল্পী সমিতির এই আয়োজনে ছিলেন না তেমন কোনো শিল্পী। নায়ক ফারুক, আলমগীর, জায়েদ খান ও বাপ্পী ছাড়া তেমন কোনো তারকা বা শিল্পীকে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়নি।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমি দুদিন যাবত চেষ্টা করে যাচ্ছি এই দোয়া ও মিলাদ মাহফিলকে সফল করতে। আমাদের সমিতির সব সদস্যকে আমি নিজে ম্যাসেজ করেছি। গতকাল দুপুর থেকে আমি মিলাদের ব্যবস্থা করি। কিন্তু দিতি ম্যাডামের মতো একজন শিল্পীর মিলাদে অন্য শিল্পীদের না আসায় আমি হতাশ হয়েছি। সাথে সাথে মনে একটা ভয়ও কাজ করছে। কারণ উনার মতো শিল্পীর মিলাদে যদি বড় শিল্পীরা সাড়া না দেন, তা হলে আমরা মারা গেলে তো কেউ খবরও নেবে না। তারপরও আমি সর্বজন শ্রদ্ধেয় নায়ক ফারুক ও আলমগীর ভাইকে ধন্যবাদ জানাই, আমাদের সাথে থাকার জন্য। নতুন প্রজন্মের নায়ক বাপ্পীকে ধন্যবাদ, মিলাদে আসার জন্য।’
নায়ক বাপ্পী বলেন, ‘দিতি আমার মা, অনেক ছবিতে তিনি আমরা মায়ের চরিত্রে কাজ করেছেন। আমার মায়ের মিলাদে আসব- এটাই স্বাভাবিক। আমি মনে করি এই বন্ধনটা অনেক জরুরি। আমরা আসলেই একটা পরিবার।’
ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে অভিনেত্রী জেসমিন বলেন, ‘বিষয়টি আপত্তিকর। দিতি ম্যাডামের মতো শিল্পীর মিলাদে তেমন কোনো শিল্পী নেই। কেউ কাজে আছেন বললেই তো হবে না। আমরা জানি এখন বাংলাদেশের কোন জায়গাতে কোন ছবির শুটিং চলছে, আর সেই শুটিংয়ে কারা অভিনয় করছেন। আসলে এখানে এসে তো লাভ নেই। দোয়া পড়তে হবে, মেকাপ নিয়ে আসা যাবে না, মাথা নিচু করে ঘোমটা দিয়ে ছবি তুলতে হবে। এটা যদি কোনো মন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর অনুষ্ঠান হতো তাহলে দেখতেন- সবাই মেকাপ নিয়ে হাজির হয়ে যেত। আমি বলতে চাই, আসুন আমরা আমাদের ভালোবাসি, নিজেদের শ্রদ্ধা করতে শিখি।’
নায়ক ফারুক বলেন, ‘আমি জানি না এর আগে শিল্পীদের মৃত্যুবাষিকীতে এভাবে মিলাদের আয়োজন করা হতো কি না, হলেও আমি খবর পেতাম না। আজ অনেক শিল্পীই এখানে আসেননি, এমনও হতে পারে তাঁদের অন্য কোথাও কাজ আছে। সবাই দোয়া করবেন দিতি যেখানে আছেন, যেন ভালো থাকেন। তিনি দুদিন আগে গিয়েছেন, আমরা দুদিন পরে যাব, যেতে তো হবেই।’
দীর্ঘ তিন মাস ক্যানসারের চিকিৎসার পর ভারতের মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অব অর্থোপেডিকস অ্যান্ড ট্রমাটোলজি (এমআইওটি) হাসপাতাল থেকে ২০১৫ সালের ৮ জানুয়ারি অসুস্থতা নিয়েই দেশে ফিরেছিলেন অভিনেত্রী দিতি। ওই দিনই তাঁকে ভর্তি করানো হয় গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে। আজকের এই দিনে তিনি এই হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
পারভীন সুলতানা দিতি জন্মগ্রহণ করেন ১৯৬৫ সালের ৩১ মার্চ, নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁয়ে। ১৯৮৪ সালে নতুন মুখের সন্ধানের মাধ্যমে দেশীয় চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত হন দিতি। তাঁর অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র উদয়ন চৌধুরী পরিচালিত ‘ডাক দিয়ে যাই’, কিন্তু ছবিটি শেষ পর্যন্ত মুক্তি পায়নি। দিতির মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র ছিল ‘আমিই ওস্তাদ’। ছবিটি পরিচালনা করেছিলেন আজমল হুদা মিঠু। এরপর দিতি দুই শতাধিক ছবিতে কাজ করেছেন। সুভাষ দত্ত পরিচালিত ‘স্বামী স্ত্রী’ ছবিতে অভিনয় করে তিনি প্রথমবারের মতো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।
মৃত্যুর আগপর্যন্ত দিতি ছোটপর্দার কিছু একক ও ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করেছেন। এ ছাড়া তিনি রান্নাবিষয়ক অনুষ্ঠানও উপস্থাপনা করেছেন।
হীরামতি, দুই জীবন, ভাই বন্ধু, উছিলা, লেডি ইন্সপেক্টর, খুনের বদলা, আজকের হাঙ্গামা প্রভৃতি দিতির উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র।