আমার জীবনে সবচেয়ে বড় টার্নিং পয়েন্ট ‘দুর্গা’ : অরিজিৎ
অরিজিৎ মুখার্জি। কলকাতার জনপ্রিয় পরিচালক। দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে মিডিয়ায় কাজ করছেন তিনি। বেশ কিছু মেগা টিভি সিরিয়াল পরিচালনা করে পরিচিতি পেয়েছেন। এর মধ্যে ‘দুর্গা’ শিরোনামে মেগা সিরিয়াল পরিচালনা করে শুধু কলকাতায় নয়, বাংলাদেশেও জনপ্রিয়তা পেয়েছেন তিনি। সম্প্রতি ‘লাইফ’ নামে তাঁর নির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটি অরিজিৎ অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত হয়েছে। ছবিটি ও অন্য আরো অনেক বিষয়ে এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে সম্প্রতি কথা বলেছেন অরিজিৎ মুখার্জি।
এনটিভি অনলাইন : ‘লাইফ’ ছবিটি নির্মাণ করার আগ্রহ কেন হলো?
অরিজিৎ মুখার্জি : আজকাল দেখা যায়, কিশোর ও কিশোরীদের সুইসাইড করার প্রবণতা বেড়ে গেছে। আমি চাই, সংগ্রাম করে সবাই বেঁচে থাকুক। জীবন অনেক সুন্দর। জীবনে বাধা আসবেই। বাধাগুলো উপভোগ করতে হবে। তাহলে জীবনে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। জীবন কখনো আরাম দেবে না। তাই এই ছবি নির্মাণ করেছি। আত্মহত্যা কোনো সমস্যার সমাধান হতে পারে না। ছবিটিতে অভিনয় করেছেন আয়ুষ মুখার্জি, পায়েল মজুমদার প্রমুখ।
এনটিভি অনলাইন : নিজের ইউটিউব চ্যানেল করার পেছনে বিশেষ কোনো কারণ আছে কি?
অরিজিৎ মুখার্জি : ২৫ বছর বিভিন্ন চ্যানেলে আমি কাজ করেছি। এর মধ্যে স্টার জলসা, জিটিভি, ইটিভি বাংলা অন্যতম। সব সময়ই আমি মেগা সিরিয়াল নির্মাণ করেছিলাম। একসময় কাজের জন্য আমি দেশের বাইরে যাই। লম্বা সময় দেশের বাইরে থাকতে হয় আমাকে। দেশে ফিরে এসে আমি ঠিক করি, একটা নিজের ইউটিউব চ্যানেল করব। কারণ, সময়ের এখন পরিবর্তন হয়েছে। আর একটা কথা বলতে চাই, চ্যানেল কর্তৃপক্ষ চায় তাদের পছন্দ অনুযায়ী নাটক ও অনুষ্ঠান নির্মাণ হোক। একজন পরিচালক তো সৃজনশীল। স্বাধীনভাবে কাজ করার তাগিদেই নিজের ইউটিউব চ্যানেল করেছি। নিজেকে নিয়ে এখন ভাবছি।
এনটিভি অনলাইন : আপনার পরিচালিত ‘দুর্গা’ সিরিয়ালটি বাংলাদেশেও অনেক জনপ্রিয় ছিল। সিরিয়ালটি আপনার ক্যারিয়ারে কতখানি প্রভাব রেখেছিল?
অরিজিৎ মুখার্জি : দুর্গা সিরিয়ালে অলৌকিক ক্ষমতার খেলা ছিল। দুর্গা চরিত্রটিতে অভিনয় করেছেন সনদীপ্তা সেন। দামিনী নামে একটি নেতিবাচক চরিত্রও ছিল। যখন আমরা সিরিয়ালটি নির্মাণ করি, তখন টেকনোলজি এত উন্নত ছিল না। শুটিং করার সময় মনে হতো আমরা প্রতিদিন পরীক্ষা দিচ্ছি। তখনকার প্রজেক্টগুলো করার মধ্যে একটা চ্যালেঞ্জও ছিল। সব সময় ভাবতাম, ‘একটা কিছু করতে হবে, একটা কিছু ঘটাতে হবে।’ দুর্গা সিরিয়ালের প্রতিটি দৃশ্য করা চ্যালেঞ্জিং ছিল। একটা দৃশ্যে দুর্গা মূর্তি থেকে জল বের হয় এবং সারা ঘরে জল ছিল। এই দৃশ্য করা সহজ কাজ ছিল না। পানির পাম্প নিয়ে এসে কাজটা করেছি। দৃশ্যটি করতে অনেক বুদ্ধির খেলা ছিল।
আমি মনে করি, একজন রাইটার, পারফরমার ও ডিরেক্টর লাইফে যদি চ্যালেঞ্জ না পায়, তাহলে সে সেটা করতে পারে না। চ্যালেঞ্জ নিতে জানলে কাজের গতি বাড়ে। উৎসাহ পাওয়া যায়।
হ্যাঁ, আমার জীবনে সবচেয়ে বড় টার্নিং পয়েন্ট দুর্গা। জিটিভিতে ‘সারগাম’ অনুষ্ঠানটিও দীর্ঘদিন পরিচালনা করেছি আমি। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শুভংকর ভাস্কর, জয়িতাসহ অনেকে অংশগ্রহণ করেছিলেন। অডিশনের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাঁরা লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এখন তাঁরা স্টার।
এনটিভি অনলাইন : আপনি নারী ক্ষমতায়ন নিয়ে অনেক কাজ করেছেন। এখনো করছেন। আপনার দৃষ্টিতে নারীরা কর্মক্ষেত্রে এখন কতটা সফল?
অরিজিৎ মুখার্জি : আমি নারীদের একটা কথা বলতে চাই, ‘প্রথম দিনই অন্যায়ের প্রতিবাদের জন্য যদি রুখে দাঁড়াতে পারো, তাহলে আগামী দিনেও পারবে। তা না হলে কোনো দিনও রুখে দাঁড়াতে পারবে না।’
আমি মনে করি, নারীরা এখন অনেক বেশি পুরুষদের থেকে এগিয়ে আছে। আমি অনেক চ্যানেলে দেখেছি, বড় পোস্টে যাঁরা আছেন, তাঁরা সবাই নারী। আমার সহকারী পরিচালক ছয়জন থাকলে পাঁচজনই নারী। তার কারণ নারীরা ধীরস্থির। কোনো সিদ্ধান্ত নিতে গেলে তাঁরা ১০ বার ভাবে। আন্তরিকভাবে তাঁরা কাজটা করে। মেকি ভাব তাঁদের কম। নারীরা বস্তু হতে পারে না। যুগ এখন পাল্টেছে।
এনটিভি অনলাইন : আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
অরিজিৎ মুখার্জি : ২০১৯ সালে আমি প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাণ করার পরিকল্পনা করেছি। বলতে পারেন, এখান বড় পর্দায় ছবি বানানোর জন্য ছোট পর্দায় রিহার্সেল করছি। ভালোভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি।
আমরা প্রতিদিন বাসা থেকে বের হওয়ার সময় দেখি, আয়নায় আমাদের কী রকম দেখাচ্ছে। আমি সেই আয়নাটাকেই সমাজকে দেখাতে চাই। এ ধরনের গল্পের চরিত্র নির্মাণ করার স্বপ্ন রয়েছে আমার।