‘পুত্র’ ক্ষুধা মেটানোর মতো একটি চলচ্চিত্র : ফেরদৌস

ফেরদৌস আহমেদ। বাংলাদেশ ও ভারতের জনপ্রিয় অভিনেতা। সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে তাঁর অভিনীত চলচ্চিত্র ‘পুত্র’। সরকারি অনুদানে নির্মিত ছবির কাহিনী লিখেছেন হারুন রশীদ। পরিচালনা করেছেন সাইফুল ইসলাম মান্নু। সমাজে বিশেষ শিশুদের গল্পের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছে ছবিটি। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে ছবিটিতে অভিনয় করেছেন বলে জানান ফেরদৌস। এ ছাড়া ছবিটিতে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা এবং অন্য আরো অনেক বিষয় নিয়ে এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে আলাপ করেছেন ফেরদৌস। তাঁর সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন নাইস নূর।
এনটিভি অনলাইন : অনেক বাণিজ্যিক ছবির নায়ক আপনি। কিন্তু বছরের শুরুতে মুক্তি পেল আপনার সামাজিক ইস্যুভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘পুত্র’। কোন বিষয়টি দেখে মূলত ছবিটিতে কাজ করতে আপনি আগ্রহী হয়েছিলেন?
ফেরদৌস : কয়েক বছর ধরে আমি ভাবছিলাম, অনেক বাণিজ্যিক ও বিনোদনমূলক ছবিতে অভিনয় করেছি, এখন আমার ভিন্ন কিছু করা প্রয়োজন। ঠিক সেই সময় ‘পুত্র’ ছবির অভিনয়ের প্রস্তাব আমি পাই। ছবির গল্পের চিত্রনাট্য পড়ে খুব ভালো লাগে। কাজটির প্রতি তখনই আমার মমতা হয়। কারণ ছবির গল্প এগিয়েছে সমাজের বিশেষ শিশুদের অবস্থা নিয়ে। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে ছবিটিতে অভিনয় করেছি। দেখুন, একজন শিল্পীর অনেক ক্ষুধা থাকে। আমারও আছে। ‘পুত্র’ ক্ষুধা মেটানোর মতো একটি চলচ্চিত্র।
এনটিভি অনলাইন : ছবিটি থেকে কি আশানুরূপ সাড়া পেয়েছেন?
ফেরদৌস : আমার পরিচিত এ পর্যন্ত যাঁরা যাঁরা ছবিটি দেখেছেন তাঁরা অনেক প্রশংসা করেছেন। অনেক সামাজিক ইস্যুভিত্তিক ছবি দেখতে অনেকের বোরিং লাগে। কিন্তু এই ছবিটির নির্মাণশৈলী ভিন্ন রকম হয়েছে। অনেক বিনোদন পাওয়া যাবে ছবিতে। আর ছবিতে সামাজিক বার্তাও রয়েছে। তবে আমার মনে হয় ছবির প্রচারণা আরো অনেক বেশি হওয়া প্রয়োজন ছিল।
এনটিভি অনলাইন : একজন শিল্পী হিসেবে আপনি বিশেষ শিশুদের অভিভাবকদের উদ্দেশে কিছু বলবেন কি?
ফেরদৌস : আমাদের দেশে অনেক বিশেষ শিশুদের মা-বাবা মনে করেন, এটা তাঁদের জন্য সম্মান হানিকর। অনেকে আবার তাঁদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে চান না। আমি এটা না জেনে বলছি না। আমি নিজেও অনেক বিশেষ শিশুর মা-বাবাকে দেখেছি। রাজধানীর ক্যান্টনমেন্টে বিশেষ শিশুদের পড়ার ‘প্রয়াস স্কুল’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান আছে। সেখানে একবার আমি গিয়েছিলাম। তখন বিশেষ শিশুদের নিয়ে আমার ভালো অভিজ্ঞতা হয়েছিল।
বিশেষ শিশুদের অনেক বিশেষ ক্ষমতা আছে যেটা আমাদের মধ্যে অনেকের নেই। আমরা বুঝতে পারি, বিশেষ শিশুর মা-বাবার অনেক কষ্ট হয়। কিন্তু তাঁদের শিশুকে স্বাভাবিকভাবে বড় করে তুলতে তাঁদের ভূমিকা থাকতে হবে অনেক বেশি। শুধু তাঁদের নয়,আমাদের সমাজের প্রত্যেকের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। বিশেষ শিশুদের সাথে মিশতে হবে। কথা বলতে হবে। আমরা হয়তো ‘পুত্র’ ছবিটি করে বিশেষ শিশুদের নিয়ে সবার আরো একবার ভাবার সুযোগ করে দিলাম। ছবিটি দেখে সবাই যদি আলোচনা করেন, নতুন করে বিশেষ শিশুদের নিয়ে ভাবেন তাহলে আমরা কিছুটা হলেও সফল হব।
এনটিভি অনলাইন : এবার আপনার মুক্তির অপেক্ষায় থাকা ছবিগুলো নিয়ে জানতে চাই। মুক্তির অপেক্ষায় আছে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘পোস্ট মাস্টার ৭১’। ছবিটির প্রযোজকও আপনি। কবে মুক্তি পাচ্ছে ছবিটি?
ফেরদৌস : ছবিটি সেন্সরে কিছুদিনের মধ্যে আমরা জমা দেব। ইচ্ছে আছে ২৬ মার্চ ছবিটি মুক্তি দেওয়ার। মুক্তিযুদ্ধের গল্পের ওপর নির্মিত ছবিতে আমার সব সময় অভিনয় করতে ভালো লাগে। তবে মুক্তিযুদ্ধের ওপর ছবি নির্মাণ করাও এখন ব্যয়বহুল। আজ থেকে ৪০ বছর আগের ঢাকা দেখানো সত্যিই কষ্টকর।
মুক্তিযুদ্ধের একটা বিষয়কে টার্গেট করে আমরা ‘পোস্ট মাস্টার ৭১’ নির্মাণ করেছি। একজন পোস্ট মাস্টারের গল্প এখানে পাওয়া যাবে। মুক্তিযুদ্ধের সময় যে দেশকে ভালোবেসেছে যে যাঁর যাঁর অবস্থান থেকে যুদ্ধ করেছে। যে নারী মুক্তিযোদ্ধাদের রান্না করে খাইয়েছেন তিনিও একজন মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদানও অসীম।
এনটিভি অনলাইন : ‘পোস্ট মাস্টার ৭১’ ছাড়াও আপনার মুক্তির অপেক্ষায় আছে ‘পবিত্র ভালোবাসা’ ‘মেঘকন্যা’, ‘গন্তব্য’, ‘শূন্য হৃদয়’, ‘বিউটি সার্কাস’ ছবিগুলো। কোন ছবিটি নিয়ে আপনি বেশি আশাবাদী?
ফেরদৌস : সব ছবির মধ্যে আলাদা বিনোদন পাবেন দর্শক।‘পবিত্র ভালোবাসা’ ছবিতে আমাকে আর মৌসুমীকে ভিন্নভাবে পাবেন দর্শক। পর্দায় আমাদের রসায়নে অনেক চমক আছে। ‘গন্তব্য’ ছবির গল্পও অসাধারণ। ‘মেঘকন্যা’ ছবিটি রোমান্টিক। ‘বিউটি সাকার্স’ ছবির শুটিং যত দূর করেছি এক কথায় দারুণ।
এনটিভি অনলাইন : আপনি তো অভিনয়ের পাশাপামি প্রযোজনাও করছেন। নতুন ছবির ঘোষণা কবে দিবেন?
ফেরদৌস : নতুন ছবির চিত্রনাট্যের কাজ চলছে। মাসখানেক পরে ছবির ও শিল্পীদের নাম ঘোষণা করব। নতুন পরিচালক ও শিল্পীদের নিয়ে কাজ করব।আশা করছি, এ ছবিটিও দারুণ হবে।
এনটিভি অনলাইন : আপনি সবসময় নতুনদের নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী। কেন?
ফেরদৌস : নতুনদেন চিন্তাভাবনা নতুন থাকে। কাজের প্রতি স্পৃহা তাঁদের বেশি। তাঁদের চিন্তা-ভাবনার সঙ্গে আমার চিন্তার সমন্বয় করে একটা কিছু তৈরি করতে আমার ভালো লাগে। এ ছাড়া নতুনদের প্লাটফর্ম তৈরি করে দেওয়ার মাঝেও আলাদা আনন্দ কাজ করে আমার। আমাদের কাউকে না কাউকে তো নতুনদের জায়গা করে দিতে হবে। আমি ‘এক কাপ চা’ ছবিটি নতুন পরিচালককে দিয়ে নির্মাণ করিয়েছিলাম। ছবিটি কিন্তু গ্রহণ করেছেন দর্শক।
এনটিভি অনলাইন : অভিনয় নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
ফেরদৌস : সংখ্যা নয় এখন থেকে ছবির মানের দিকে নজর রাখব। অনেক চিন্তা-ভাবনা করে এখন এগুতে চাই। আশা করছি, বরাবরের মতো দর্শক আমাকে ভালোবাসা দিবেন।