দৃশ্যম
মোহনলাল বা কমল হাসান প্রতিদ্বন্দ্বী নন : অজয়
নব্বই দশকে অজয় দেবগন নামটি ছিল তুমুল অ্যাকশনের প্রতিশব্দ। ‘এক হি রাস্তা’, ‘বিজয়পথ’, ‘ফুল অউর কাঁটে’ ছবিগুলো এখনো সে সময়ের দর্শকের মুখে মুখে শোনা যায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরো ভিন্ন চরিত্রে এসেছেন অজয়। অভিনয়েও নিজের ক্ষমতা জানিয়েছেন ‘ওমকারা’ বা ‘জখম’-এর মতো ছবিগুলো দিয়ে। কয়েক দিন আগে মুক্তি পেয়েছে তাঁর বহু প্রতীক্ষিত ছবি ‘দৃশ্যম’; যে ছবির তামিল, তেলেগু, মালায়লামসহ রয়েছে অজস্র ভার্সন। ‘দৃশ্যম’ আর নিজেকে নিয়ে বলিউডলাইফের সঙ্গে আলাপ করেছেন এই অভিনেতা।
প্রশ্ন : অনেক দিন পর এমন কঠিন একটি চরিত্র? এমন কিছুই কি খুঁজছিলেন?
অজয় : হ্যাঁ, এমন দারুণ কিছু একটার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম বলতে পারেন। অনেকেই বলতেন যে তাঁরা ‘হাম দিল দে চুকে সনম’, ‘জখম’ বা ‘ওমকারা’র অজয়কে মিস করেন। কিন্তু আমি তাঁদের সব সময় বলেছি, আমি একদিন এগুলোর থেকেও দারুণ কোনো স্ক্রিপ্ট পাব। এই ছবিটা (দৃশ্যম) তেমনই। দুর্দান্ত এর স্ক্রিপ্ট। অরিজিনাল স্ক্রিপ্টটি যিনি লিখেছেন, তাঁকে অভিবাদন। তিনি ছিলেন বলেই এমন একটি ছবি আমরা পেয়েছি।
প্রশ্ন : ‘দৃশ্যম’-এ আপনি সাধারণ একজন মানুষ, কিন্তু ‘সিংহাম’-এ আগ্রাসী এক পুলিশ অফিসার। কোন চরিত্রটা আপনার সঙ্গে বেশি মেলানো যায়?
অজয় : আমি নিজেও সাধারণ মানুষ, তাই এ ছবির সঙ্গেই নিজেকে বেশি মেলাব। কিন্তু আমার পরিচালক নিশিকান্ত সব সময় অভিযোগ করেছেন যে আমার কথাবার্তা, সদাচরণ কিংবা চেহারা প্রায়ই নায়কোচিত দেখায়, কাজেই সেগুলো আমার সাধারণ করে ফেলতে হবে। আমি তাঁকে বলতাম যে আমি সাধারণই আছি; কিন্তু তিনি আমাকে আরো সাধারণ হতে বলতেন! আমি হাঁটলে সবাই ভাবত যে আমি সিংহামের মতো হাঁটছি, কিন্তু আমার হাঁটা তো আসলে এমনই! কী আর বলব, আমাকে এমনকি আমার হাঁটার ভঙ্গিটাও বদলে ফেলতে হয়েছে।
প্রশ্ন : অভিনেতা হিসেবে একেক চরিত্রের জন্য নিজেকে কি আলাদাভাবে প্রস্তুত করেন?
অজয় : না, বিষয়টি সে রকম নয়। আমি সেটে গিয়ে ঠিক যা করা দরকার, তা-ই করি। পরিচালকের সঙ্গে আলাপ করি, আমার যাচাইগুলো তাকে বলি এবং তার পর সব ঠিকঠাক হলে শুট শুরু করি। আমি রিহার্সেলও করি না, কারণ রিহার্সেল করতে গেলে আমি লাইন ভুলে যাই। আমার সঙ্গে যাঁরাই কাজ করেছেন, তাঁরা জানেন যে শটটা এক টেকেই ‘ওকে’ করতে হবে।
প্রশ্ন : ‘দৃশ্যম’-এ কাজ করার জন্য আলাদা কোনো কারণ?
অজয় : স্ক্রিপ্ট। এটাই আসল কারণ।
প্রশ্ন : এই ছবির অনেক রিমেক হয়েছে। কাজেই আপনার ‘দৃশ্যম’ আগের তিনটি ছবির সঙ্গেও তুলনা করা হতে পারে, একই সঙ্গে মোহনলাল বা কমল হাসানের সঙ্গে আপনার অভিনয় ক্ষমতার তুলনা করা হতে পারে। আপনি কোনো চাপ অনুভব করছেন সে জন্য?
অজয় : সিনেমা সব সময়ই তুলনা করা হয়, হবে। তবে অভিনয় ক্ষমতা নিয়ে যদি কিছু বলেন, তাহলে আমার চিন্তা নেই। আপনি তখনই চাপ অনুভব করবেন যখন প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে। মোহনলাল বা কমল হাসানের মতো অভিনেতাদের সঙ্গে আমার তুলনাই হয় না, তাঁরা আমার চেয়ে অনেক সিনিয়র এবং অনেক ভালো অভিনেতা। আর তাঁরা তো আমার প্রতিদ্বন্দ্বীই নন। আমি এমনকি তাঁদের ছবিগুলোও দেখিনি, কারণ আমার ভয় ছিল যে আমি তাঁদের অভিনয়ে প্রভাবিত হয়ে পড়ব। দুর্বল কোনো অভিনেতা হলে তো অন্য কথা ছিল, কিন্তু এখানে তো ব্যাপার উল্টো। আমি পর্দায় যখনই মোহনলালকে দেখব, আমি হয়তো প্রভাবিত হয়ে পড়ব। এ জন্য আমি অন্য ‘দৃশ্যম’ দেখিনি।
প্রশ্ন : তামিল ও মালয়ালাম ভার্সনের সঙ্গে ‘দৃশ্যম’ হিন্দি ভার্সনের পার্থক্য কী?
অজয় : এটা আরো শহুরে বলতে পারেন, কিছু দরকারি সংযোজন-বিয়োজন রয়েছে। নাটকীয়তা আরো বাড়ানো হয়েছে, তবে মূল কাহিনীতে কোনো হাত দেওয়া হয়নি।
প্রশ্ন : ইদানীং অভিনেতারা নিজেদের বয়স ‘অ্যাকসেপ্ট’ করছেন এবং বয়স্কদের চরিত্রে অভিনয় করছেন, আপনারও কি একই চিন্তা?
অজয় : অবশ্যই, কেন নয়! আমার ৬০ বছরের কোনো লোকের চরিত্রে অভিনয় করতেও আপত্তি নেই। নতুন চ্যালেঞ্জ এটাই, আর এই চ্যালেঞ্জটা আমি বুঝিও। নিজের বয়স নিয়ে আমি খুশি। ২৫ বছর বয়সে যেমন মনে হতো, তার চেয়ে নিজেকে অনেক শক্তিশালী লাগে এখন।
প্রশ্ন : আপনি নাকি কাজলের জন্য একটি ছবি প্রযোজনা করবেন?
অজয় : হ্যাঁ, এ বছরের শেষের দিকেই কাজলের জন্য একটি ছবি নির্মাণ করব। তবে আমি কিন্তু ওই ছবিতে অভিনয় করব না।
প্রশ্ন : ‘শিভে’ ছবির কী অবস্থা?
অজয় : ‘শিভে’ আমার খুবই উচ্চাভিলাষী একটি প্রোজেক্ট। অনেক কাজ হচ্ছে এখন, আর শিডিউলটা খুবই পরিশ্রমসাধ্য। আমরা অনেক কাজ করেছি এর মধ্যে। এখন প্রি-প্রোডাকশনের কাজ চলছে এবং আরো বেশ খানিকটা সময় চলবে।
প্রশ্ন : রোহিত শেঠির সঙ্গে কাজের নতুন কোনো পরিকল্পনা?
অজয় : হ্যাঁ, আমাদের কথা চলছে। ‘গোলমাল-৪’ করব না ‘সিংহাম-৩’, এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।