হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ সব সময় আছেন : শ্রেয়া গুহঠাকুরতা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে আজ রোববার বিকেল ৬টা ৪৫ মিনিটে এনটিভিতে প্রচারিত হবে বিশেষ সংগীতানুষ্ঠান ‘হৃদয়-বীণায় গাহি রে’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিভিন্ন পর্যায়ের বৈচিত্র্যময় গান নিয়ে সাজানো অনুষ্ঠানে যৌথ ও এককভাবে সংগীত পরিবেশন করবেন ভারতের শিল্পী শ্রেয়া গুহঠাকুরতা ও বাংলাদেশের শিল্পী নূরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে গান গাওয়া প্রসঙ্গ ও অন্যান্য বিষয়ে এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন ভারতের সংগীতশিল্পী শ্রেয়া গুহঠাকুরতা।
এনটিভি অনলাইন : রবীন্দ্রসংগীত তো নিয়মিত গাইছেন। কবিগুরুর জন্মবার্ষিকী কিংবা প্রয়াণ দিবসে গান গাইতে আপনার কেমন অনুভূতি হয়?
শ্রেয়া গুহঠাকুরতা : শুধু তাঁর জন্মবার্ষিকী কিংবা প্রয়াণ দিবসে নয়, হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ সব সময় আছেন। সত্যি বলতে, আমাদের জীবনে সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি রবীন্দ্রনাথকে নিয়েই থাকা হয়। কখনো তাঁর গান রেওয়াজ করছি, কাউকে গান শেখাচ্ছি আবার কখনো গানের অনুষ্ঠানে আমি নিজেই গাইছি। ছোটবেলায় রবীন্দ্রনাথকে তো আমার দাদু মনে হতো। কারণ আমাদের বাসার সব জায়গায় তাঁর ছবি ছিল। তখন মনে হতো রবীন্দ্রনাথ তো দাদুর মতোই। অজান্তে রবীন্দ্রনাথ ওতপ্রোতভাবে এমন ভাবে জড়িয়ে আছে তাঁকে মনে করার জন্য আলাদা কোনো দিন-ক্ষণ আমার লাগে না। কিন্তু এটাও মানতে হবে এখন মিডিয়ার যুগ। টিভি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সবাইকে মনে করিয়ে দেওয়া হয় যে আজকে ২৫ বৈশাখ, আজকে ২২ শ্রাবণ। তবে কিছু মানুষের মনে-প্রাণে রবীন্দ্রনাথ সবসময় আছেন।
এনটিভি অনলাইন : রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী হওয়ার ইচ্ছে কি ছোটবেলা থেকেই আপনার ছিল?
শ্রেয়া গুহঠাকুরতা : সাংস্কৃতিক পরিবারে আমি জন্মগ্রহণ করেছি। ছোটবেলা থেকে গান, নাচ সব আমাকে চর্চা করতে হয়েছে। কলকাতার প্রথম দুটো গানের স্কুল ছিল ‘গীতবিতান’ ও ‘দক্ষিণী’ যাঁর প্রতিষ্ঠাতা আমার দাদু শুভ গুহঠাকুরতা। শান্তি নিকেতনের বাইরে রবীন্দ্রনাথের গানের চর্চা ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছেলে রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি আমার দাদুকে এ দায়িত্ব দিয়েছিলেন। দাদু, স্বরাজ দাদা ও কণিকা দিদি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান জনপ্রিয় করার পিছনে অনেক অবদান রেখেছিলেন। এখন আমাদের দুটো স্কুলে শুধু কলকাতার আড়াই হাজার স্টুডেন্ট আছে। এ ছাড়া পুরো পৃথিবীতে আমাদের স্কুলের অনেক শাখাও আছে। স্কুলে সংগীত, নাচ ও নাটকের বিভাগ আছে। আমার চাচা ও দাদারা গানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাই আমারও জন্মের পর থেকে গানের সঙ্গে বেড়ে উঠা। চার বছর বয়সে আমি প্রথম প্লে-ব্যাক করি এবং ওই ছবিতে অভিনয় করি। তপন শুভ পরিচালিত ছবিটির নাম ছিল ‘দীপার প্রেম’। এরপর ১৩ বছর বয়সে ‘অন্তর্ধান’ ছবিতে অভিনয় করে আমি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছি।
এনটিভি অনলাইন : খুব কম বয়সে অনেককিছু অর্জন করেছেন…
শ্রেয়া গুহঠাকুরতা : এসব অর্জন আমার কাছে মুখ্য নয়। আমার প্রধান উদ্দেশ্য হলো, রবীন্দ্রনাথের গান করা এবং তাঁর গান বিশ্বে ছড়ানো।
এনটিভি অনলাইন : আপনি দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসে আছেন। এখন থাকছেন যুক্তরাষ্ট্রে । বিদেশে রবীন্দ্রনাথের গানের প্রভাব ও চর্চা কেমন হয়?
শ্রেয়া গুহঠাকুরতা : আমার হাজব্যান্ড একজন আইনজীবী। তাঁর বদলির চাকরি। আমরা দীর্ঘদিন ফ্রান্সে ছিলাম। এখন আমেরিকায় আছি। আমি বলব, বাংলা ভাষাভাষীর লোক যেখানে আছে সেখানেই ররীন্দ্রনাথ ও নজরুল আছেন। এজন্য এ বিষয়ে দেশ ও বিদেশের পার্থক্য আমি খুঁজে পাই না। তবে আমার মনে হয়েছে বিদেশে রবীন্দ্রনাথের গানের চর্চা বেশি হয়। কারণ মানুষ ‘হোম সিক’ থাকে। মানুষ তাঁর শেকরগুলো ধরার চেষ্টা করে। ১২ মাসে ১৩ পার্বণ যেমন হয় তেমনি অনেক সাংস্কৃতিক সংগঠন বিদেশে রবীন্দ্রনাথের গানের অনুষ্ঠানের আয়োজন সারা বছর করে থাকে। আমি নিজেও অনেক দেশে রবীন্দ্রনাথের গান পরিবেশন করতে গেছি, এখনো তা করছি।
এনটিভি অনলাইন : বাংলাদেশে গান গাইতে আপনার কেমন লাগে?
শ্রেয়া গুহঠাকুরতা : বাংলাদেশের দর্শক অনেক ভালো। এত ভালো দর্শক আমি কোথাও পাইনি। এটা আমি সব জায়গাতেই বলি। সাক্ষাৎকার দিচ্ছি তাই এটা বলছি, কিংবা কাউকে খুশি করার জন্য এটা বলছি, তা কিন্তু নয়। বাংলাদেশিরা গানের অনেক প্রশংসা করে। আমাদের কলকাতায় দেখি বলিউডের পিছনে সবাই গান নিয়ে ছোটে। সেটা কিন্তু এখানে হয় না। এখানে যতবার এসেছি ততবার মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। এটা অনুপ্রেরণা দেয়।
এনটিভি অনলাইন : আপনার দাদার বাড়ি তো বরিশালে। সেখানে কখনো যাওয়া হয়েছে?
শ্রেয়া গুহঠাকুরতা : আমি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, সিলেট ও পাবনায় গিয়েছি কিন্তু বরিশালে কখনো যাওয়া হয়নি। ওখানে আমাদের আত্মীয় আছে। আমার যাওয়ার ইচ্ছেও আছে। আমি যখন ঢাকায় অনুষ্ঠানে করেছি তখন বরিশালে থেকে অনেকেই এসে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন।
এনটিভি অনলাইন : শুনেছি বাংলাদেশের সংগীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার সঙ্গে আপনার ভালো সখ্যতা রয়েছে...
শ্রেয়া গুহঠাকুরতা : যখন বন্যাদি নামে পরিচিতি পাননি ঠিক তখন থেকে তাঁকে আমি চিনি। কলকাতায় তিনি যখন গান শিখেছেন তখন থেকে তাঁকে আমি জানি। ঢাকায় তাঁর বাসায় আমি গিয়েছি। তিনি আমাকে অনেক আদর করেন। বন্যাদিকে ভীষণ ভালো লাগে আমার। আর বন্যাদি এটাও জানেন তাঁর জায়গা আমার মনে কতখানিজুড়ে আছে।
এনটিভি অনলাইন : আবার বাংলাদেশে কবে আসবেন?
শ্রেয়া গুহঠাকুরতা : এখন বলতে পারছি না। তবে আসা তো হবেই।