রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এফডিসি : একজন মিজু আহমেদ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থেকে ঢাকাই ছবির শক্তিমান এক খল অভিনেতা হয়ে ওঠার গল্প রয়েছে যে মানুষটির, তিনি হঠাৎ করেই চলে গেছেন এই জগতের মায়া ছেড়ে। মিজু আহমেদের মৃত্যু এক শোকাবহ সময় নিয়ে এসেছে ঢালিউডের জন্য। আজীবন কাজ করে যাওয়া এই মানুষটি কাজের জন্যই ট্রেনে করে যাচ্ছিলেন ঢাকার বাইরে, সেই কাজের আগেই প্রস্থান ঘটল তাঁর।
ছোটবেলা থেকেই থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মিজু আহমেদ। তবে সে জন্য পড়ালেখায় কিন্তু অনিয়মিত হননি, ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী। ১৯৫৩ সালের ১৭ নভেম্বর কুষ্টিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন মিজু আহমেদ। জন্মের সময় তাঁর নাম রাখা হয় মিজানুর রহমান। শৈশবকাল থেকে তিনি থিয়েটারের প্রতি আগ্রহী ছিলেন। পরে তিনি কুষ্টিয়ার স্থানীয় একটি নাট্যদলের সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৭৭ সালে শেখ নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘নদের চাঁদ’ ছিল তাঁর অভিনীত প্রথম ছবি। ১৯৯১ সালে অভিনীত ‘দাঙ্গা’ ছবিটি তাঁর ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেয়, তিনি প্রতিষ্ঠিত হয়ে ওঠেন এফডিসির শক্তিমান খলতারকা ‘মিজু আহমেদ’ হিসেবে।
পরিচালক শেখ নজরুল ইসলাম মিজু আহমেদের কথা স্মরণ করেন এভাবে, “আমার হাত ধরেই চলচ্চিত্রে আসেন মিজু আহমেদ। ছবিতে আমি তাকে পাঁচ হাজার টাকা পারিশ্রমিক দিয়েছিলাম। আমার ছবির কাজের পর তিনি ‘তৃষ্ণা’ চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত হন। যদিও আমার ছবিটি পরে মুক্তি পেয়েছে। তার পর আমার প্রায় ৪০টি ছবিতে তিনি অভিনয় করেছেন। তিনি আমার সঙ্গে শেষ কাজ করেন ২০০৯ সালে ‘মা বড় না বউ বড়’ ছবিতে। সেখানে আমি তাকে এক লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়েছিলাম। কাজের প্রতি আগ্রহ তাঁকে ভালো অভিনেতা হতে সাহায্য করেছে।”
পরিচালক কাজী হায়াৎ প্রথমে পেয়েছিলেন মিজু আহমেদের মৃত্যুসংবাদ। তাঁর সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে বললেন এভাবে, “শেখ নজরুল ইসলাম পরিচালত ‘নদের চাঁদ’ ছবিতে মিজু চলচ্চিত্রে পা রাখে, কিন্তু আমি তাকে চিনতাম সহশিল্পী হিসেবে। আমার সঙ্গে পরিচয় হওয়া পর জানতে পারি মিজু রাজশাহী ইউনির্ভাসিটি থেকে মাস্টার্স করেছে। ছোটবেলা থেকে সে থিয়েটারে কাজ করত। আমি তাকে নিয়ে ভাবতে লাগলাম। ১৯৯১ সালে আমি মিজু আহমেদকে ‘দাঙ্গা ছবিতে যুক্ত করি। তার অভিনয় দেখে বুঝতে পারি যে কত বড় শক্তিশালী অভিনেতা সে! প্রথম ছবিতে তাকে আমি ১০ হাজার টাকা দিয়েছিলাম, তারপর ‘ত্রাস’ ছবিতে তাকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিলাম। এরই মধ্যে মিজুকে অন্য পরিচালকরাও অনেক টাকা দিয়ে তাঁকে কাজের সঙ্গে যুক্ত করতে শুরু করল, এরপর আর তাকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।”
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সম্মানিত এই অভিনেতার উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলো হলো—তৃষ্ণা (১৯৭৮), মহানগর (১৯৮১), সারেন্ডার (১৯৮৭), চাকর (১৯৯২), সোলেমান ডাঙ্গা (১৯৯২), ত্যাগ (১৯৯৩), বশিরা (১৯৯৬), আজকের সন্ত্রাসী (১৯৯৬), হাঙ্গর নদী গ্রেনেড (১৯৯৭), কুলি (১৯৯৭), লাঠি (১৯৯৯), লাল বাদশা (১৯৯৯), গুণ্ডা নাম্বার ওয়ান (২০০০), ঝড় (২০০০), কষ্ট (২০০০), ওদের ধর (২০০২), ইতিহাস (২০০২), ভাইয়া (২০০২), হিংসা প্রতিহিংসা (২০০৩), বিগ বস (২০০৩), আজকের সমাজ (২০০৪), মহিলা হোস্টেল (২০০৪), ভণ্ড ওঝা ২ (২০০৬) প্রভৃতি। নিজের চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থা ফ্রেন্ডস মুভিজের ব্যানারে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র প্রযোজনাও করেছেন তিনি।