‘জহির রায়হানকে মৃত্যুর পরও শাস্তি ভোগ করতে হয়েছে’
“আজ ৪৭ বছর পর ‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবিটি নিয়ে খোলামেলাভাবে কথা বলতে পারছি, এ জন্য পরিচালক সমিতিকে ধন্যবাদ। জহির রায়হান ভাষা আন্দোলন করতে গিয়ে, জীবন থেকে নেয়া করতে গিয়ে, যুদ্ধের সময় ছবি তুলে অনেক বড় অপরাধ করেছিলেন। যে কারণে আসলে তাঁর তো মৃত্যুর পরও শাস্তি ভোগ করতে হয়েছে। দুপুরের দিকে তাঁকে রেখে এলাম মিরপুর থানায়, বিকেলেই খবর এলো তিনি নেই। তারপর আর তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাকে আমরা গোসল করাতে পারিনি, দাফন করাতে পারিনি। মৃত্যুর পর শাস্তি ভোগ করতে হয়েছে কারণ গত ৪৭ বছরে তার স্মরণসভা করতে পারিনি।” আজ এফডিসিতে জহির রায়হান কালার ল্যাব অডিটরিয়ামে ‘জীবন থেকে নেয়া ও জহির রায়হান’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এভাবেই বললেন চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেন।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া এই পরিচালক ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে জহির রায়হানের প্রত্যক্ষ সংযোগের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘১৯৫২ সালে ১৪৪ ধারা ভাঙার জন্য ১০ জন করে যে গ্রুপ করা হয়েছিল, তার একটি দলে জহির রায়হান ছিলেন। তিনি শুধু ভাষা আন্দোলনই করেননি, তিনি এ নিয়ে উপন্যাসও লিখে গেছেন। ভাষা আন্দোলনের এত বছর পরও এ নিয়ে কোনো চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়নি। কেউ যদি বানাতে চান, তাহলে ওনার উপন্যাস থেকে করতে পারেন।’
জহির রায়হানের চলচ্চিত্রে সম্পৃক্ত হওয়ার প্রসঙ্গ আমজাদ হোসেন উল্লেখ করেন এভাবে, “জহির রায়হান ‘জাগো হুয়া সাভেরা’ ছবিতে সহকারি পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। সেখানে তিনি এডিটিং শিখেছেন, ক্যামেরার কাজ শিখেছেন, লাইটিং শিখেছেন। এরপর তিনি নিজে ক্যামেরা চালিয়েছেন, এডিটিং করেছেন। ‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবির গল্পটি ওনার বাসায় বসে লিখেছি। ছবির সংগীত পরিচালক ছিলেন খান আতাউর রহমান, এখানে কাজী নজরুলের গান ব্যবহার করা হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের গান ব্যবহার করা হয়েছে। তখনকার সময়ে রবীন্দ্রনাথের গানে মিউজিক ব্যবহার করা নিষেধ ছিল, কিন্তু খান আতাউর রহমান এই গানে মিউজিক ব্যবহার করেছিলেন। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় এ জন্য ধন্যবাদ দিয়েছিলেন আতা ভাইকে।”
‘জীবন থেকে নেয়া ও জহির রায়হান’ শিরোনামের এই আলোচনা সভা শুরু হয় বেলা ১১টায়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। আলোচকদের মধ্যে ছিলেন আমজাদ হোসেন ছাড়াও ছিলেন নায়করাজ রাজ্জাক, সুচন্দা, হাসান ইমাম, আফজাল হোসেন প্রমুখ।