সেলফির যুগে ‘গোপনে’ ত্রাণ তানহার
পরিচালক, শিল্পী ও জ্যেষ্ঠ কয়েকজন কলাকুশলী ছাড়া চলচ্চিত্রের প্রায় সবাই দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কাজ করে থাকেন। করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার বেশ আগে থেকেই চলচ্চিত্রের দৈন্যদশা চলছিল। যে কারণে করোনার প্রকোপ তাঁদের কাছে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা। বর্তমানে এসব সহকর্মীর পাশে দাঁড়িয়েছেন চলচ্চিত্রের সচ্ছল শিল্পী ও কলাকুশলীরা।
তবে অনাহারে থেকেও এসব নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী নিচ্ছেন না অনেক কলাকুশলী। যে ছেলেটি পড়াশোনা শেষ করে চলচ্চিত্র নির্মাণের লক্ষ্যে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন বা যিনি দেশের বাইরে থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে চলচ্চিত্রে ফটোগ্রাফি বা মেকআপম্যান হিসেবে কাজ করছেন, তাঁদের অনেকেই ফেসবুক লাইভ বা ফটোসেশনের কারণে এসব সামগ্রী নিতে আসছেন না।
তবে কোনো কোনো শিল্পী নিজেকে আড়ালে রেখে তাঁদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। এফডিসির সংগঠনগুলোতে পাঠাচ্ছেন নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী। নিজেদের সদস্যদের মধ্যে এই মুহূর্তে যাঁরা বিপাকে পড়েছেন, তাঁদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে এসব সামগ্রী। গতকাল এফডিসির সহকারী পরিচালক সমিতির মাধ্যমে শতাধিক কলাকুশলীর মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করা হয়।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সহকারী পরিচালক সমিতির সভাপতি কাজী মনির আজ মঙ্গলবার এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আজকের সহকারী আগামী দিনের পরিচালক। শাহিদুল ইসলাম খোকন, সোহানুর রহমান সোহান বা এফ আই মানিকের মতো অনেক গুণী নির্মাতা এই সমিতির সদস্য ছিলেন। আমাদের সদস্য হতে গেলে তাঁকে অবশ্যই ডিগ্রি পাস হতে হবে। এখন কাজ অনেকটাই কম, এর মধ্যে শুরু হয়েছে করোনাভাইরাসের প্রকোপ। এই অবস্থায় আমাদের কিছু সদস্য সমস্যায় পড়েছেন, এঁরা সময়ের শিকার, অসহায় নন। এঁদের কেউ না খেয়ে মারা গেলেও লাইনে দাঁড়িয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী গ্রহণ করবেন না। তা ছাড়া সেলফি ও ফেসবুক লাইভে যেভাবে দেখানো হচ্ছে, তাতে সমস্যা থাকলেও এসব গ্রহণ করা সম্ভব নয়।’
চিত্রনায়িকা তানহা মৌমাছিকে ধন্যবাদ জানিয়ে মনির বলেন, ‘আমাদের শিল্পীদের মধ্যে অনেকেই বিষয়টি চিন্তা করছেন। এরই মধ্যে আমাদের সমিতিতে শতাধিক মানুষের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী পাঠিয়েছেন তানহা মৌমাছি। তাঁকে অনেক ধন্যবাদ। তিনি নিজের টাকায় ট্রাক ভাড়া করে এসব দিয়ে গেছেন। আমরা সহকারী পরিচালক, মেকআপম্যান, ড্রেসম্যান, ফটোগ্রাফার ও প্রোডাকশন বয়দের মধ্যে তা বিতরণ করেছি। কোনো ছবি তুলতে হয়নি, নিজের আত্মসম্মান বজায় রেখে এসব সামগ্রী সংগ্রহ করেছেন কলাকুশলীরা।’
চলচ্চিত্র স্থিরচিত্র গ্রাহক সমিতির সভাপতি জি ডি পিন্টু বলেন, ‘তানহা মৌমাছিকে ধন্যবাদ, আমাদের কলাকুশলীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। আমাকে দুদিন আগে সহকারী পরিচালক সমিতি থেকে ফোন দিয়ে জানানো হয়, তানহা কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী পাঠিয়েছে আমাদের কলাকুশলীদের। আমাদের কিছু সদস্য সমস্যায় আছেন, তবে সেলফি আর ফেসবুক লাইভের কারণে কেউ সমস্যার কথা মুখ ফুটে বলছেন না। এমন সময় গোপনে এই সাহায্য দিয়ে চলচ্চিত্রকর্মীদের সম্মানিত করেছেন তানহা।’
পরিচালক শাহীন সুমনের ‘কি দারুণ দেখতে’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ঢালিউডে অভিষেক তানহা মৌমাছির। এরই মধ্যে মুক্তি পেয়েছে ‘চিটাগাইঙ্গা পোয়া নোয়াখাইল্যা মাইয়া’, ‘যে গল্পে ভালোবাসা নেই’, ‘অনেক দামে কেনা’সহ বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র। বর্তমানে তিনি তিনটি চলচ্চিত্রে কাজ করছেন।