মাহফুজুর রহমানের অশ্রু দেখে কাঁদলেন তিন কন্যাও
সিনেমার শুটিংয়ে প্রাণবন্ত মাহফুজুর রহমানকে দেখেছেন তাঁরা। কাজের বাইরে তিনি ছিলেন তিন কন্যার পারিবারিক সদস্য। অসুস্থতার খবর নিতে তাই তো গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হাসপাতালে ছুটে যান তিন কন্যাখ্যাত চিত্রনায়িকা সুচন্দা, ববিতা ও চম্পা। এ সময় মাহফুজুর রহমানের চোখে পানি দেখে কেঁদে ফেলেন তাঁরা।
লাইফ সাপোর্টে আছেন ১০ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত কিংবদন্তি চিত্রগ্রাহক মাহফুজুর রহমান খান। গত সোমবার (২৫ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১০টায় অসুস্থ হয়ে পড়লে স্বজনরা মাহফুজুর রহমান খানকে রাজধানীর গ্রিন লাইফ হাসপাতালে ভর্তি করান। ফুসফুসে রক্তক্ষরণের কারণে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। এরপর আর জ্ঞান ফেরেনি তাঁর।
আজ শুক্রবার এনটিভি অনলাইনকে চম্পা বলেন, ‘মাহফুজ ভাই অসুস্থ, তিনি হাসপাতালে আছেন। এমন খবর শুনে গতকাল বিকেলে আমরা তিন বোন হাসপাতালে যাওয়ার প্রস্তুতি নিই। যাওয়ার কিছুক্ষণ আগে হঠাৎ শুনতে পাই, তিনি মারা গেছেন। খবর শুনে আমরা ভেঙে পড়ি। তখনই বিভিন্ন জায়গায় খবর নিয়ে জানতে পারি, খবরটি ভুল। মাহফুজ ভাই বেঁচে আছেন। আমরা সময় নষ্ট না করে দ্রুত হাসপাতালে যাই। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। ছিলাম রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত।’
মাহফুজুর রহমান চোখের পানি ফেলেছেন জানিয়ে চম্পা বলেন, ‘আমরা তিন বোন যখন মাহফুজ ভাইকে দেখতে আইসিইউতে গেলাম, উনাকে ডাক দিলাম, তিনি তখন চোখের জল ফেলেছেন। আমার মনে হয়েছে, তিনি আমাদের অস্তিত্ব অনুভব করেছেন। আমরাও কেঁদেছি মাহফুজ ভাইয়ের সঙ্গে। এমন প্রাণবন্ত মানুষটিকে এমন অবস্থায় দেখতে হবে, তা কখনো ভাবিনি।’
ডাক্তারের সঙ্গে কথা হয়েছে জানিয়ে চম্পা বলেন, ‘আমরা ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলেছি। হাসপাতালের এমডির সঙ্গে কথা বলেছি। উনারা জানিয়েছেন, আজ শুক্রবার সন্ধ্যার মধ্যে মাহফুজ ভাইয়ের অবস্থা সম্পর্কে জানাবেন। আমার মনে হয়েছে, ডাক্তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন।’
সবার কাছে দোয়া চেয়ে চম্পা বলেন, ‘সবাই দোয়া করবেন আমাদের মাহফুজ ভাই যেন আবারও আমাদের মাঝে ফিরে আসেন।’
‘তিন কন্যা চলচ্চিত্র দিয়ে আমি যাত্রা শুরু করি। তার পর যত ছবিতে কাজ করেছি তার বেশির ভাগ ছবিতেই মাহফুজ ভাই ছিলেন। কাজের বাইরেও উনার সঙ্গে আমাদের পারিবারিক একটা সম্পর্ক ছিল,’ বলছিলেন চম্পা।
মাহফুজুর রহমান খানের জন্ম ১৯৪৯ সালের ১৯ মে, পুরান ঢাকার হেকিম হাবিবুর রহমান রোডের এক বনেদি পরিবারে। তিনি পেশাদার চিত্রগ্রাহক হিসেবে ১৯৭২ সালে প্রথম চলচ্চিত্রে কাজ করেন। এরপর তিনি আলমগীর কবির, আলমগীর কুমকুম, হুমায়ূন আহমেদ, শিবলী সাদিকদের মতো চলচ্চিত্র পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেন। চিত্রগ্রহণের জন্য তিনি ১০ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, আটবার বাচসাস পুরস্কার এবং একবার বিশেষ বিভাগে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার পেয়েছেন।