করোনায় ছেলের বন্ধুর বাবার মৃত্যুতে ক্ষুব্ধ চয়নিকা চৌধুরী
করোনাভাইরাসজনিত কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরো ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে ১১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া নতুন করে আরো ৪৩৪ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে মোট তিন হাজার ৩৮২ জন করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে দেশে।
তবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেও অনেকে নাকি সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছে না, এমন অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি ছোটপর্দার জনপ্রিয় নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরীর ছেলের বন্ধুর বাবা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেও নাকি বিনা চিকিৎসায় মারা যান। নিজের ফেসবুক হ্যান্ডেলে এমন অভিযোগ করেন এই গুণী নির্মাতা।
এ বিষয়ে ফেসবুকে চয়নিকা চৌধুরী লেখেন, ‘শোনা কথা আমি বিশ্বাস করি না। কিন্তু এখন নিজে বুঝেই বিশ্বাস করলাম। আমি আমার বাসায় জানিয়ে দিয়েছি, ঈশ্বর না করুক আমার যদি করোনা হয়, আমাকে কখনোই কোনো হাসপাতালে নেবে না।’
ছেলের বন্ধুর বাবা-মাসহ পুরো পরিবার করোনায় আক্রান্ত জানিয়ে চয়নিকা লেখেন, ‘আমার ছেলে অনন্যর বন্ধুর বাবা ডায়ালিসিস করতে গিয়ে করোনা নিয়ে আসে তিন দিন আগেই। তারা মিরপুরে থাকে। টেস্ট করে জানা যায় মা-বাবা দুজনের করোনায় আক্রান্ত। কুর্মিটোলায় দুজনকেই নেওয়া হয়। এর ভেতর ১০-১২ বছরের আরো ওর ছোট দুই ভাইবোনও করোনায় আক্রান্ত। কাজের মেয়েও। বাবার ডায়াবেটিস। মা-ও হাসপাতালে। কিন্তু গতকাল বিকেল অবধি কোনো খাবার নাই, ডাক্তার নাই। গলাব্যথা গরম জলও চেয়ে পায় নাই। অক্সিজেনও না। শুধু সান্ত্বনার বাণী—এই তো এখনি ডাক্তার আসবে। সন্ধ্যায় অনেক কষ্টে খাবার এলো, ওষুধ ইনজেকশন কিছুই দেবে না তারা। অনন্যর বন্ধু আর তার বড় বোন অনেক কষ্টে ইনজেকশন নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছাল। কিন্তু সারারাত গেল সেই ইনজেকশন পুশ করার কাউকে পাওয়া গেল না।’
ছেলের বন্ধুর বাবার মৃত্যুর খবর জানিয়ে চয়নিকা আরো লেখেন, ‘আজ সকালে বাবা মারা গেল। মার অবস্থা খারাপ। বাবার লাশ আজ দাফন করা হয়েছে, বড় বোনকে দেখতেও দেয়নি। আজ, এখন বড় বোনকে বাড়িওয়ালা বাসায় ঢুকতে দিচ্ছে না। কী করুণ কাহিনি! সারা দেশে মানুষ মরছে। কষ্ট পাচ্ছে। অক্সিজেন নাই। ডাক্তার আসে না ভয়ে। হয়তো প্রপার পোশাক নেই। এই বাচ্চাগুলো কী করবে এখন!’
প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে চয়নিকা চৌধুরী আরো লেখেন, ‘আহ! ঈশ্বর সবাইকে সাহায্য করো। আমাদের মুক্ত করে দাও। আমাদের ক্ষমা করে দাও। ছোট ছোট বাচ্চাগুলো কী করে সব সামাল দেবে? আর পারছি না। বুক ভরা কষ্ট! মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার কানে কি তাদের কান্না পৌঁছেছে? আপনি কি অবগত? আপনাকে ভালোবাসি, শ্রদ্ধা করি, মুগ্ধ হয়ে আপনার কথা শুনি। প্লিজ আমাদের বাঁচান! আর সহ্য হচ্ছে না!’
আজ (২১ এপ্রিল) মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ বিষয়ে এনটিভি অনলাইনকে চয়নিকা চৌধুরী বলেন, ‘আসলে এখন করোনা একটি আতঙ্কের নাম। আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। দেখা গেল হাসপাতালে ডাক্তারদের পর্যাপ্ত পিপিই নেই, পর্যাপ্ত অক্সিজেন নেই। যে কারণে ডাক্তাররা রোগীর কাছে আসছেন না, আবার যাঁরা আসছেন তাঁদের অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন। আমি হাসপাতালে যেতে চাই না, কারণ মৃত্যুর আগে অন্তত পানিটা পান করার জন্য পাব।’
চয়নিকা আরো বলেন, ‘কিছু কিছু জায়গাতে আমার মনে হচ্ছে তথ্য গোপন করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী আমাদের দেশের মানুষকে অনেক ভালোবাসেন। তিনি প্রতিদিনই লাইভে এসে কথা বলছেন। আমি গতকালও দেখেছি, মহানগর হাসপাতালের কিছু স্ক্রিনশট দেখিয়ে তিনি বলছেন, আমরা যে মাস্ক ব্যবহার করি, সেগুলোর বক্সগুলো ঠিক আছে, তবে ভেতরের জিনিসটা ঠিক আছে কি না পরীক্ষা করে দেখতে হবে। তিনি তো সবার খবর নিচ্ছেন। যা করার দরকার, তা-ই করছেন। আসলে প্রধানমন্ত্রী একা কিছু করতে পারবেন না, যদি আমরা সবাই মিলে উনাকে সহযোগিতা না করি।’
২০০১ সালে ‘শেষ বেলা’র মাধ্যমে চয়নিকা চৌধুরী নাটক নির্মাণ শুরু করেন। এরই মধ্যে তিনি দুই শতাধিক নাটক নির্মাণ করেছেন।
নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরীর প্রথম নির্মিত চলচ্চিত্র ‘বিশ্বসুন্দরী’। মার্চ মাসের শেষে ছবিটি মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। করোনাভারাসের প্রকোপে মুক্তি স্থগিত করা হয়। ছবিতে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন আলোচিত নায়িকা পরী মণি ও ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা সিয়াম। ছবির চিত্রনাট্য রুম্মান রশীদ খানের।