সিংগাইর পৌর ভোটে শেষ দিনের প্রচারে ব্যস্ত প্রার্থীরা

পুনঃতফসিল অনুযায়ী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে মানিকগঞ্জের সিংগাইর পৌরসভা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। সে হিসেবে আজ মঙ্গলবারই নির্বাচনী প্রচারের শেষ দিন, মধ্যরাত পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচার চালাতে পারবেন প্রার্থীরা।
এদিকে শেষ সময়ের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত আওয়ামী লীগ, বিএনপি, খেলাফত মজলিসসহ স্বতন্ত্র ছয় মেয়র ও ৩৪ কাউন্সিলর পদপ্রার্থীসহ সাত মহিলা কাউন্সিলর পদপ্রার্থী। প্রার্থীদের পোস্টারে ছেয়ে গেছে পৌর এলাকা। মাইকে মাইকে প্রার্থীদের গুণকীর্তন ও প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে চাওয়া হচ্ছে ভোট।
শুরুতে এ পৌরসভায় কাউন্সিলর পদপ্রার্থী ছিলেন ৩৭ জন। গত রোববার সকালে নির্বাচনী প্রচার চালাতে গিয়ে পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী জামাল উদ্দিন বেপারী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এ কারণে ওই ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। ফলে প্রচার বন্ধ রেখেছেন এ ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী অন্য দুই প্রার্থী।
আর মেয়র পদে বিএনপি মনোনীত বর্তমান মেয়র খোরশেদ আলম ভূঁইয়া জয় (ধানের শীষ), আওয়ামী লীগের আবু নঈম মো. বাশার (নৌকা), খেলাফত মজলিসের মাওলানা আশরাফ আলী (দেয়ালঘড়ি), আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ মীর মো. শাজাহান (জগ), স্বতন্ত্র তোফায়েল হোসেন (নারকেল গাছ) ও মো. হাফিজ উদ্দিন (মোবাইল ফোন) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
প্রথমবারের মতো স্থানীয় নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হওয়ায় প্রার্থী ও ভোটারদের মধ্যে ভিন্ন আমেজের সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে এই পৌর নির্বাচনে ধানের শীষ, নৌকা ও জগ প্রতীকের মধ্যেই মূল লড়াই হবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। মেয়রসহ সব প্রার্থীই তাঁদের কর্মী ও সমর্থক নিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে প্রচার চলাচ্ছেন।
এদিকে ভোটারদের আকৃষ্ট করতে অফিসপাড়া, গ্রামগঞ্জে, হাটবাজার ও চায়ের দোকান থেকে শুরু করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাচ্ছেন প্রার্থী ও সমর্থকরা। অন্যদিকে ভোটাররাও প্রার্থীদের কাছে তাঁদের পৌর নাগরিক নানা সমস্যার কথা স্বতঃস্ফূর্তভাবে তুলে ধরছেন। নানা সমস্যার সমাধান ও নতুন নতুন প্রতিশ্রুতি নিয়ে নিজেদের উপস্থাপন করছেন প্রার্থীরা। বিশেষ করে আগামী দিনের মেয়র নির্বাচনে নানা হিসাব-নিকাশ করছেন ভোটাররা।
বিএনপি মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী খোরশেদ আলম ভূঁইয়া জয় বলেন, “গতবার আমি মেয়র নির্বাচিত হয়ে ব্যাপক উন্নয়ন করেছি এই পৌরসভায়। পৌরসভাকে ‘গ’ থেকে ‘খ’ শ্রেণিতে উন্নীত করেছি। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে ভোটাররা আমাকে বিজয়ী করে পৌরসভাকে ‘ক’ শ্রেণিতে উন্নীত করার সুযোগ দেবেন।”
আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আবু নঈম মো. বাশার বলেন, ‘প্রচারকালে ভোটারদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। আমি জয়ী হয়ে স্কুল-কলেজসহ এলাকার উন্নয়ন ও বেকার সমস্যার সমাধান করব।’
আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মীর মো. শাজাহান বলেন, ‘গতবার অল্প কিছু ভোটের ব্যবধানে আমি পরাজিত হয়েছিলাম। বর্তমান মেয়র পৌরসভায় তেমন উন্নয়ন করেননি, ভোটারদের চাহিদা পূরণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। এ কারণে ভোটাররা আমাকে এবার নির্বাচিত করে উন্নয়নের সুযোগ দেবেন।’
রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মুনীর হোসাইন খান জানান, ১ নম্বর ওয়ার্ডে একজন কাউন্সিলর পদপ্রার্থী মারা যাওয়ায় ওই পদে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। নির্বাচনী এলাকার পরিবেশ শান্ত রয়েছে। আচরণবিধি ভঙ্গে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালাচ্ছে। ৭ জানুয়ারি শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই ভোট গ্রহণ সম্পন্ন করা হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, ঘোষিত তফসিলে ৩০ ডিসেম্বর সারা দেশে ২৩৬টির মধ্যে মানিকগঞ্জ ও সিংগাইর পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভোটার তালিকা ত্রুটির অভিযোগে এক রিটে সিংগাইর পৌরসভার নির্বাচন স্থগিত করেন হাইকোর্টে। পরে আপিলে স্থাগিত আদেশ বাতিল করা হলে পুনঃতফসিল ঘোষণা করা হয় এই পৌরসভায়।