সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তার : রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবে রাষ্ট্রপক্ষ
সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারের আগে কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি লাগবে না বলে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছেন, তার বিরুদ্ধে আপিল করবে রাষ্ট্রপক্ষ। আজ বৃহস্পতিবার সকালে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে দেওয়া রায়ের পরে এমনটা জানান অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘অনেকেই সরকারি কর্মচারীদের হয়রানি করতে মিথ্যা মামলা দায়ের করে থাকেন। তখন ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাদের। এই ভোগান্তি এড়াতেই সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারের আগে কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি একটা বিধান রাখা হয়েছিল। তবে, আদালত আজকে যে রায় দিয়েছেন, সে রায়ের বিরুদ্ধে আমরা অবশ্যই আপিল করব।’
এর আগে আজ সকালে সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে সরকারের পূর্বানুমতি নেওয়ার বিধান বাতিল করেন হাইকোর্ট।
গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে সরকারের পূর্বানুমতি নেওয়ার বিধান কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। গতকাল বুধবার শুনানি শেষে আজ রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন আদালত।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. আজিজুর রহমান দুলু, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী ইশরাত হাসান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
আইনজীবী মো. আজিজুর রহমান বলেন, ‘একটি ফৌজদারি মামলা তদন্তাধীন। সেই মামলায় সুলতানা পারভীনসহ অন্যরা জামিন নেননি। পরে তাদের কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না জানতে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বলা হয়, এসব কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের আগে অনুমতি লাগবে। এমনকি, এস এম রাহাতুল ইসলামকে ইতোমধ্যে বরিশালে পদায়ন করা হয়। এ অবস্থায় আইনের ৩ ও ৪১ (১) ধারা চ্যালেঞ্জ করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার পদায়ন ও অন্যদের পদায়ন না করতে ওই রিটটি করা হয়।’
গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট তাঁর রুলে ফৌজদারি মামলার বিবাদী কুড়িগ্রামের তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন, সহকারী কমিশনার রিন্টু বিকাশ চাকমা ও সিনিয়র সহকারী কমিশনার নাজিম উদ্দিনকে পদায়ন না করতে যথাযথ নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না এবং এস এম রাহাতুল ইসলামকে বরিশালে সহকারী কমিশনার হিসেবে পদায়ন করা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। জনপ্রশাসন সচিব, স্বরাষ্ট্রসচিবসহ বিবাদীদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। ওই রুলে সরকারি চাকরি আইনের এমন বিধান কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, তাও জানতে চান হাইকোর্ট।
এর এগারো মাসের মাথায় আজ সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে পূর্বানুমতির বিধান বাতিল করলেন হাইকোর্ট।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের সরকারি চাকরি আইনের ৪১ (১) ও ৩ ধারার বৈধতা নিয়ে কুড়িগ্রামের স্থানীয় সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিটটি করেন। ৩ ধারায় আইনের প্রাধান্য বিষয়ে এবং ৪১ ধারায় ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত কর্মচারীর ক্ষেত্রে ব্যবস্থাদি সম্পর্কে বলা আছে।
আইনের ৪১ (১) ধারা বলছে, কোনো সরকারি কর্মচারীর দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সম্পর্কিত অভিযোগে দায়ের করা ফৌজদারি মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র গৃহীত হওয়ার আগে তাঁকে গ্রেপ্তার করতে হলে, সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি গ্রহণ কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি গ্রহণ করতে হবে।