শাস্তি হলেই চাকরিচ্যুত হবেন না সরকারি কর্মচারীরা
আদালত কোনো সরকারি চাকরিজীবীকে শাস্তি দিলেই তিনি চাকরিচ্যুত হবেন না। এ ছাড়া কোনো আদালত যে পরিমাণ অর্থদণ্ডই প্রদান করুন না কেন, চাকরিচ্যুতি অথবা চাকরিতে বহাল রাখার বিষয়টি রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে। এসব বিধান যুক্ত করেই ‘সরকারি চাকরিজীবী আইন-২০১৫’ এর খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে।
চাকরিচ্যুতির জন্য এক বছরের অধিক মেয়াদে কারাদণ্ড অথবা দুর্নীতি ও নৈতিক স্খলনজনিত দণ্ডের শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে আইনের খসড়ায়। গত ১৩ জুলাই মন্ত্রিসভা এ আইনের খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন করেছে।
নতুন এই আইন কার্যকর হলে সরকারি চাকরিজীবীদের বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি মামলা হলেই পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করতে পারবে না। আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের আগে ফৌজদারি মামলার আসামি কোনো সরকারি চাকরিজীবীকে গ্রেপ্তার করতে হলে সরকারের অনুমতি নিতে হবে।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন সচিব ড. কামাল আবদুন নাসের চৌধুরী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সরকারি কর্মচারীদের জন্য এটি কোনো প্রিভেনটিভ ল’ (রক্ষামূলক আইন) নয়। এটি হবে একটি রেগুলেটরি আইন। এ সংক্রান্ত একটি আইন করা সংবিধানেরই ১৩৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আমাদের ওপর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। প্রশাসনকে আরো গতিশীল করা, প্রজাতন্ত্রের সর্বস্তরের কর্মচারীদের কাজের দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এ ধরনের একটি আইনের খুবই প্রয়োজন।’ তিনি আরো বলেন, “দেশে ফৌজদারি কার্যবিধি, দণ্ডবিধিসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ আইন রয়েছে। ওই সব আইন তার স্বাভাবিক গতিতে চলবে। এগুলোতে প্রত্যেক নাগরিকের জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। কাজেই ‘সরকারি কর্মচারী আইন-২০১৫’ অন্য নাগরিকদের চেয়ে বাড়তি কোনো সুবিধা দেবে না। এটি শুধু চাকরির শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে কার্যকর ভুমিকা পালন করবে।”
খসড়া আইনের ১৩ নম্বর ধারার (গ) উপধারায় বলা হয়েছে যে, ‘দুর্নীতি ও নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধ ব্যতীত অন্য কোনো অপরাধে কোনো কর্মচারী উপযুক্ত আদালত কর্তৃক এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং ২০ হাজার টাকার ঊর্ধ্বে জরিমানা বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হইলে তাহাকে চাকুরিতে বহাল রাখিবার বিষয়ে রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হইবে, এক বৎসরের অধিক মেয়াদে কারাদণ্ড অথবা দুর্নীতি ও নৈতিক স্খলনজনিত যেকোন দণ্ডের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মচারী চাকুরি হইতে চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত হইবেন।’
একই ধারার (ক) উপধারায় বলা হয়েছে, ‘কর্মচারী আইনানুগভাবে দায়িত্ব পালনকালে ক্ষতিগ্রস্ত হইলে আইনের আশ্রয় লাভের অধিকারী হইবেন।’ (খ) উপধারায় বলা হয়েছে, ‘কর্মচারী দায়িত্ব পালন সংক্রান্ত কোনো অপরাধের অভিযোগ সম্পর্কে যথোপযুক্ত সংস্থা তদন্ত করিতে ও উপযুক্ত আদালতে অভিযোগ দায়ের করিতে পারিবেন, তবে এ সংক্রান্ত ফৌজদারি মামলায় আদালত কর্তৃক অভিযোগপত্র গৃহীত হইবার পূর্বে কর্মচারীকে গ্রেপ্তারের প্রয়োজন হইলে সরকারের অনুমোদন লাগিবে।’
আইনের সুবিধা পাবেন না যাঁরা :
প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের জন্য এই আইন করা হলেও আইনের সুবিধা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন বিভাগের কিছু কর্মচারীকে। আইনের ৩ নম্বর ধারার (ক) উপানুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, ‘সংবিধানে বর্ণিত প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত কর্মচারীগণ এই আইনের আওতাভুক্ত হইবেন।’ (খ) উপানুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘(ক) উপানুচ্ছেদে বিবৃত আওতার সামগ্রিকতাকে ক্ষুণ্ণ না করিয়া নিম্মোক্ত ব্যক্তিবর্গ এই আইনের আওতা বহির্ভুত হইবেন। (১) সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিগণ (২) বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসের সদস্যবৃন্দ (৩) সুপ্রিম কোর্টের আওতাধীন কর্মচারী (৪) প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগে নিযুক্ত সকল সামরিক ও অসামরিক কর্মচারী (৫) সাময়িক সময়ের জন্য গঠিত কোনো কমিশন বা কমিটির সদস্যবৃন্দ (৬) রেলওয়ে সংস্থাপন কোড- এর আওতাভুক্ত কর্মচারীগণ (৭) ওয়ার্কচার্জড, কন্টিনজেন্সি ও অ্যাপ্রেন্টিস হিসেবে নিয়োজিত কর্মচারীগণ (৮) এডহক নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীগণ (৯) নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের নিজস্ব জনবল (১০)ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশসহ বিভিন্ন শৃঙ্খলা বাহিনীতে নিযুক্ত অধঃস্তন কর্মচারী (১১) জেলার পদমর্যাদার নিন্মতর কর্মচারীগণ (১২) পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীগণ।’
মন্ত্রিসভার অনুমোদনপ্রাপ্ত এই আইনটিকে প্রচলিত কয়েকটি আইনের ওপর প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। আইনের ২ নম্বর ধারায় এ বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইন, অধ্যাদেশ, বিধি, প্রবিধান, উপ-আইন, নীতিমালা, বিজ্ঞপ্তি আদশে ও নির্দেশ ভিন্নরূপ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের আওতাভুক্ত প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের ক্ষেত্রে এই আইনের বিধান কার্যকর হইবে।’
প্রসঙ্গত, দণ্ডপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবীদের চাকরিচ্যুতির বিষয়ে বিদ্যমান আইনটি ১৯৮৫ সালের। ‘দি পাবলিক সার্ভেন্ট (ডিসমিসাল অন কনভিকশন) অর্ডিনেন্স,১৯৮৫’ তে বলা হয়েছে যে, কোনো উপযুক্ত আদালত কোনো গণকর্মচারীর বিরুদ্ধে (১) ৬ মাসের অধিক মেয়াদের কারাদণ্ড এবং/অথবা এক হাজার টাকা জরিমানা প্রদান করলে তার প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ তাকে চাকরিচ্যুত করবেন।