যে কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ‘বাঙ্কার বাস্টার’ বোমা চায় ইসরায়েল

ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনার মধ্যে এখনও দেশটির সামরিক হস্তক্ষেপ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেননি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে বুধবার (১৮ জুন) হোয়াইট হাউসের সাউথ লনে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “পরবর্তী সপ্তাহটি হবে গুরুত্বপূর্ণ।”
ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, ইরানি কর্মকর্তারা আলোচনার আগ্রহ দেখাচ্ছেন, তবে তাদের এখন “অনেক দেরি হয়ে গেছে”। খবর আল জাজিরার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির মূল কেন্দ্র ফোর্দো ফুয়েল এনরিচমেন্ট প্ল্যান্ট ধ্বংসে কেবলমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের বাঙ্কার বাস্টার বোমা কার্যকর হতে পারে। এই বোমাগুলো মাত্র যুক্তরাষ্ট্রের কাছে রয়েছে এবং সেগুলো কেবল বি-২ স্টিলথ বোমারু দিয়ে নিক্ষেপ করা সম্ভব।
বাঙ্কার বাস্টার কী?
‘বাঙ্কার বাস্টার’ এমন বোমা যা ভূগর্ভস্থ সুসুরক্ষিত লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করতে সক্ষম। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে শক্তিশালী এই ধরণের বোমা হলো জিবিইউ-৫৭, যার ওজন প্রায় ৩০ হাজার পাউন্ড। এটি ২০০ ফুট (৬১ মিটার) মাটির গভীরে ঢুকে বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে।
প্রতিটি বি-২ বোমারু দুইটি করে জিবিইউ-৫৭ বোমা বহন করতে পারে। প্রয়োজনে একাধিক বোমার মাধ্যমে ধারাবাহিক আঘাত হেনে গভীরে প্রবেশ করানো হয়।
ইসরায়েলি বোমার সীমাবদ্ধতা
ইসরায়েল বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র-নির্মিত জিবিইউ-২৮ এবং বিএলইউ-১০৯ বাঙ্কার বাস্টার ব্যবহার করে। তবে এই বোমাগুলোর প্রবেশক্ষমতা সীমিত, যা ফোর্দোর মতো গভীর ভূগর্ভস্থ স্থাপনা ধ্বংসে যথেষ্ট নয়।
২০২৪ সালে ইসরায়েল বৈরুতে হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহকে হত্যায় বিএলইউ-১০৯ ব্যবহার করেছিল বলে জানা গেছে।
কতটা গভীরে ‘ফোর্দো’?
তেহরান থেকে প্রায় ৯৫ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত ফোর্দো স্থাপনাটি পাহাড়ের ভিতর ৮০-৯০ মিটার (২৬০-৩০০ ফুট) গভীরে অবস্থিত। এই স্থাপনার নির্মাণ শুরু হয় ২০০৬ সালের দিকে এবং ২০০৯ সালে এটি কার্যকর হয়।
২০১৫ সালের ইরান পরমাণু চুক্তি (জেসিপিওএ) অনুযায়ী ফোর্দোতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ রাখার কথা ছিল, তবে যুক্তরাষ্ট্র ২০১৮ সালে চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ালে ইরান সেখানে আবারও কার্যক্রম শুরু করে।
ফোর্দো এখন রাশিয়া ও ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে সুরক্ষিত, যদিও ইসরায়েলের আগ্রাসনে কিছু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইতোমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ইসরায়েলের ‘অস্তিত্ব রক্ষার যুদ্ধ’
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা ধ্বংস করাই এই অভিযান চালানোর মূল লক্ষ্য।
ইসরায়েলের যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ইয়েখিয়েল লাইটার বলেন, “এই পুরো অভিযান তখনই সফল হবে যখন ফোর্দোকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করা হবে।”
অন্য পারমাণবিক স্থাপনাও হামলার শিকার
ইসরায়েল ইতোমধ্যে ইরানের বৃহত্তম পারমাণবিক স্থাপনা নাতাঞ্জ-এর ওপর হামলা চালিয়ে তার উপরিভাগ ধ্বংস করেছে। এতে করে ভূগর্ভস্থ অংশও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা আইএইএ জানিয়েছে।

তেজস্ক্রিয়তা ছড়ানোর আশঙ্কা
আইএইএ প্রধান রাফায়েল গ্রোসি জানান, এখন পর্যন্ত নাতাঞ্জ ও ইসফাহান পারমাণবিক স্থাপনার বাইরের রেডিয়েশন মাত্রা স্বাভাবিক থাকলেও পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ফোর্দো শহরটি ইরানের সপ্তম বৃহত্তম শহর কোম-এর প্রায় ২০ মাইল দক্ষিণে অবস্থিত। শহরটি ধর্মীয় ও রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রায় ১৪ লাখ মানুষ এখানে বাস করে।