১০ দিন ধরে নিখোঁজ পুতিন
পুতিন কোথায় - এটাই বোধ হয় এখন ইউরোপের সবচেয়ে আলোচিত প্রশ্ন। গত ১০ দিন থেকে লাপাত্তা রাশিয়ার এই নেতা। একবারের জন্যও প্রকাশ্যে দেখা যায়নি প্রেসিডেন্টকে।
সবশেষ গত ৫ মার্চ সকালে ইতালির প্রধানমন্ত্রী মাত্তিও রেনজির সাথে এক বৈঠকে দেখা গেছে তাঁকে। এরপর হঠাৎ করে কাজাখস্তানে এক গুরুত্বপূর্ণ সফর বাতিল করেন পুতিন। ৭ মার্চ স্থগিত করা হয় মস্কোয় অনুষ্ঠিতব্য দক্ষিণ ওশেনিয়ার প্রতিনিধিদের পূর্বনির্ধারিত এক চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান। প্রতিনিধিদের মস্কো যেতে নিষেধ করা হয়েছিল অনুষ্ঠানের আগের দিন। এমনকি রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা এফএসবির শীর্ষ কর্মকর্তাদের নির্ধারিত বার্ষিক সভায় দেখা মেলেনি সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা পুতিনের।
এসব ঘটনায় গুজব ডালপালা মেলছে। কোথায় গেলেন প্রেসিডেন্ট? তিনি কি অসুস্থ? নাকি রাষ্ট্রীয় কোনো গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা বা বৈঠকে ব্যস্ত? এর আগেও শিকার বা অবকাশে গিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট। কিন্তু একেবারে খোঁজখবরহীন! এমনটা তো আগে কখনো হয়নি। পুতিনের ‘অন্তর্ধানের’ রহস্য খুঁজতেই নাকি ব্যস্ত হয়ে পড়েছে রাশিয়াসহ ইউরোপের জনতা!
ইউরোপের পত্রপত্রিকাগুলো যথারীতি কানাঘুষা শুরু করে দিয়েছে। নানা উত্তরও ভেসে বেড়াচ্ছে বাতাসে। তবে সেগুলো প্রশ্নের জবাব, নাকি গুজব উসকে দেওয়ার বাহানা, তা প্রশ্নসাপেক্ষ।
ডেইলি মেইল শনিবার দাবি করেছে, অজানা এক জ্বরে ভুগছেন পুতিন। সংবাদে আরো বলা হয় : “এমনও শোনা যাচ্ছে, নিজের ‘লাভ চাইল্ডকে’ [অবিবাহিত দম্পতির সন্তান] দেখতে সুইজারল্যান্ডে গেছেন প্রেসিডেন্ট।” অলিম্পিক শরীরচর্চা প্রতিযোগিতায় রাশিয়ার হয়ে দুবার অংশ নেওয়া এলিনা কাবায়েভার সঙ্গে পুতিনের প্রেমের গুজব অনেক দিনের। ধারণা করা হয়, এলিনার প্রেমে পড়েই পুতিন গত বছর তাঁর স্ত্রী লুদমিলার সাথে ৩০ বছরের বিবাহিত জীবনের ইতি টেনেছিলেন।
নিউইয়র্ক পোস্ট আরো এককাঠি সরেস। দাবি করেছে, দুই সপ্তাহ আগে জন্ম নেওয়া মেয়েকে দেখতে সুইজারল্যান্ড গেছেন প্রেসিডেন্ট। সুইস-ইতালি সীমান্তের কাছে সান্তা আনা ডি সেরগেনো ক্লিনিকে পুতিনের সন্তানের জন্ম দিয়েছেন এলিনা। গত শুক্রবার পত্রিকাটি পুতিন আর তাঁর প্রেমিকার ছবি প্রকাশ করে শিরোনাম করে - ‘মেয়ে হয়েছে!’
ডেইলি বিস্টের বরাত দিয়ে সুইস রেডিও আরএসআই বলছে, ‘অতিসুরক্ষিত’ ওই ক্লিনিকে পুতিন দুটি কামরা নিয়েছেন। একটি কাবায়েভার জন্য, আরেকটি তাঁর দেহরক্ষীদের জন্য।
যুক্তরাজ্যের অনলাইন মেট্রো আবার একটু বাড়িয়ে বলছে - জ্বর নয়, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন প্রেসিডেন্ট। ক্রেমলিনের ভেতরে অ্যাম্বুলেন্স ঢুকছে এমন ছবি দিয়ে পত্রিকাটি দাবি করেছে, রাশিয়ার কয়েকজন হৃদরোগ সার্জনকে নাকি তলব করা হয়েছে প্রেসিডেন্টের বাসভবনে।
আবার কিছু পত্রিকা এমন খবরও প্রকাশ করছে, ‘সেনাবিদ্রোহ’ ঘটেছে রাশিয়ায়। ক্রেমলিনে বন্দী গত ১৫ বছরের রুশ প্রেসিডেন্ট ।
আরো একধাপ এগিয়ে ‘প্রেসিডেন্ট আর বেঁচে নেই’-এমনও লিখে ফেলেছে ইউরোপের ট্যাবলয়েডগুলো। সুইডেন ও ইউক্রেনের সংবাদপত্রে মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হয়েছে-এমনটি দাবি করেছে ব্রিটেনের দ্য মিরর। ‘সুঠাম প্রেসিডেন্টের’ ৬২ বছর বয়সে অকালমৃত্যুর খবরটি নাকি আড়াল করা হচ্ছে বিশ্ব গণমাধ্যম থেকে- এমন দাবিও করেছে মিরর।
অবশ্য গুজব জোরদার হতেই নড়েচড়ে বসেছে ক্রেমলিন। তড়িঘড়ি করে গত শনিবার রুশ সরকারের পক্ষ থেকে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে প্রেসিডেন্টের বৈঠকের কিছু ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। ছবিগুলো শুক্রবার তোলা। তবে ছবি প্রকাশের কিছুক্ষণ পর সামাজিক গণমাধ্যমে গত ৪ মার্চে একই ভঙ্গিতে, একই পোশাকে, একই ব্যক্তির সাথে পুতিনের তোলা অপর একটি ছবি ছড়িয়ে যায়।
দেশটির সরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ‘রাশিয়া ২৪’ পুতিনের বৈঠকের একটি ভিডিও সম্প্রচার করেছে। তবে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদপত্রসহ অন্যান্য পত্রিকাগুলো এ ব্যাপারে নিশ্চুপ, যা সন্দেহ বাড়িয়ে দিচ্ছে আরো।
অবশ্য পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি এস পেসকভ পুতিনের নিখোঁজ হওয়ার খবরকে নিছকই গুজব বলে উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘তিনি (পুতিন) ভালো আছেন।’ রাশিয়ার সংবাদপত্র ফোর্বস রাশিয়াকে তিনি বলেন, ‘ভাবছি রুশ ধনীদের বলব গুজব ছড়ানোর সংবাদ তৈরির একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে।’ তবে পেসকভ কিন্তু বলেননি, পুতিন কোথায় আছেন।