হানির ম্যাসাজ ছাড়া ঘুমই আসছে না রাম-রহিমের
‘হানিকে আমার সঙ্গে রাতে থাকতে দিন। ও আমায় ম্যাসাজ করে দেয়। ওকে ছাড়া ঘুমাতে পারছি না। ঘুম আসছেই না।’- আবার এমনতর আবেদন জানালেন ধর্ষণের অভিযোগে দণ্ড পাওয়া ভারতের স্বঘোষিত ধর্মগুরু ‘ধর্ষক বাবা’ রাম-রহিম ওরফে গুরমিত সিং।
হানিপ্রীত বাবা রাম রহিমের পালিত মেয়ে। এর আগে এই হানিপ্রীতের সঙ্গে বাবার কেচ্ছাকাহিনী নিয়ে কম আলোচনা হয়নি। আগেও ধর্ষক বাবার কারা কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন ছিল, তিনি জেলে থাকবেন, তবে সঙ্গে থাকবেন পালিত মেয়ে হানি। এবার তিনি সরাসরি সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে আবেদন করে বসলেন।
এদিকে আইনজীবীর মাধ্যমে একই আবেদন করেছেন হানিপ্রীতও। তিনিও তাঁর পালক বাবার সঙ্গে থাকতে চান। জেলে হলে তাও সই।
এর আগে হানিপ্রীতের সাবেক স্বামী বিশ্বাস গুপ্ত রাম রহিমের সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর অবৈধ সম্পর্কের অভিযোগ করেছিলেন। বিশ্বাস গুপ্ত বাবা রাম রহিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে বলেন, হানিপ্রীতকে তাঁর থেকে আলাদা করে নিয়ে নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন বাবা রাম রহিম।
২০১১ সালে নিজের স্ত্রী হানিপ্রীতকে রাম রহিমের ডেরা থেকে বের করে আনতে হাইকোর্টের দ্বারস্থও হয়েছিলেন বিশ্বাস গুপ্ত। কিন্তু স্বামীর কাছে না গিয়ে রাম রহিমের কাছেই থেকে গিয়েছিলেন হানিপ্রীত।
হানিপ্রীতের আসল নাম প্রিয়াঙ্কা। হরিয়ানার ফতেহাবাদের মেয়ে তিনি। এই প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে নিজের এক ভক্ত এই বিশ্বাস গুপ্তর বিয়ে দিয়েছিলেন বাবা রাম রহিম। তারপর মেয়ে হিসেবে তাঁকে দত্তক নেন তিনি। ২০০৯ সালের ডিসেম্বর মাসে এক জমকালো পার্টির আয়োজন করে প্রিয়াঙ্কাকে দত্তক মেয়ে হিসেবে ঘোষণা দেন বাবা রাম রহিম। তারপরই প্রিয়াঙ্কার নাম দেন হানিপ্রীত ইনসান।
বিশ্বাস গুপ্ত দাবি করেন, হানিপ্রীতকে বিয়ে করার সুবাদে বাবা রাম রহিমের ডেরাতে স্ত্রীর বদান্যে বাড়তি সুবিধাও পেতেন তিনি। কিন্তু ২০১১ সালের মে মাসে এক সন্ধ্যেবেলা বাবা রাম রহিমের ওপর থেকে সমস্ত বিশ্বাস উড়ে যায় তাঁর। কারণ, ওই দিন ডেরার মধ্যে বাবা রাম রহিমের খোলা দরজার ফাঁক দিয়ে তিনি দেখতে পান নিজের স্ত্রী হানিপ্রীত বাবা রাম রহিমের সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় রয়েছে।
এই ঘটনার পরেই হানিপ্রীত ডিভোর্স দেন তাঁর স্বামী বিশ্বাস গুপ্তকে। ওই দিন নিজের স্ত্রীর সঙ্গে বাবা রাম রহিমের আপত্তিকর দৃশ্য দেখে ফেলার পর সত্যি ঘটনা কাউকে জানালে চরম পরিণতি হবে বলেও বিশ্বাস গুপ্তকে হুমকি দিয়েছিলেন বাবা রাম রহিম। এরপর পরিবারের বাকি সদস্যদের নিয়ে রাম রহিমের ডেরা সাচ্চা সৌদা ত্যাগ করেন বিশ্বাস গুপ্ত। কিন্তু তারপরও নানাভাবে রাম রহিমের লোকজন তাঁর ওপর হেনস্তা চালিয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
উল্লেখ্য, বাবা রাম রহিমের সঙ্গে সর্বক্ষণই দেখা যেত এই হানিপ্রীতকে। ইন্টারনেট সার্চ করেও দেখা গেছে, ধর্ষক বাবার সঙ্গে হানিপ্রীতের রয়েছে অনেক ছবি। রয়েছে ভিডিও। যেখানে আবার বাবা রাম রহিমকে পাপা বলে ডাকতে দেখা গিয়েছে হানিপ্রীতকে। তবে পাপা ডাকলেও রাম রহিমের সঙ্গে হাসি-ঠাট্টা থেকে বন্ধুর ভূমিকাতেও দেখা গেছে হানিপ্রীতকে। এই হানিপ্রীতকেই বাবা রাম রহিম জেলে যাওয়ার আগে পর্যন্ত ছায়াসঙ্গী হিসেবে দেখা গেছে। ভক্তদের দাবি, এই হানিপ্রীতকেই সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করতেন বাবা রাম রহিম।
এদিকে হানিপ্রীত ইনসানের বিরুদ্ধেও অভিযোগ অনেক। সরকার এরই মধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ এনেছে। রাম রহিমকে নিয়ে আদালত থেকে পালানোর ছক কষার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে এ অভিযোগ আনা হয়।
পুলিশের সূত্র জানায়, ২৫ আগস্ট আদালত রাম রহিমকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার পর থেকেই নিখোঁজ তাঁর দত্তক মেয়ে হানিপ্রীত সিং ইনসান। হানিপ্রীতের খোঁজ না পেয়ে শেষ পর্যন্ত ‘লুক আউট’ নোটিশ জারি করল হরিয়ানা পুলিশ। হানিপ্রীতের পাশাপাশি রাম রহিমের ডেরা সাচ্চা সৌদার তিন ভক্তের বিরুদ্ধেও জারি করা হয়েছে ‘লুক আউট’ নোটিশ।
হানিপ্রীত ডেরার অনুগামীদের বাড়িতেই আত্মগোপন করে রয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
হানিপ্রীতের বিরুদ্ধে অভিযোগ, রাম রহিমকে দোষী সাব্যস্তের পর প্রশাসনকে জানানো হয়, তিনি তাঁর জামা-কাপড়ভর্তি একটি ‘লাল ব্যাগ’ ডেরায় ফেলে এসেছেন। সেই ‘লাল ব্যাগ’ নিয়ে আসার নামে ডেরাতে সাংকেতিক বার্তা দেওয়া হয় অনুগামীদের। যে সাংকেতিক ভাষার অর্থ ছিল, অনুগামীদের তাণ্ডবের মধ্যে রাম রহিমকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়া। যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিল রাম রহিমের দত্তক মেয়ে হানিপ্রীত। এই সংকেত পেয়েই রাম রহিমের অনুগামীদের তাণ্ডব চলে। মারা যায় ৪১ ভক্ত ও সাধারণ মানুষ।
কিন্তু এতকিছু করেও শেষরক্ষা হয়নি। নিয়তির পরিহাসে স্বঘোষিত ধর্মগুরু গুরমিত সিংহ রাম রহিমের পরিচয় এখন কয়েদি নম্বর ১৯৯৭। নিজের এতদিনকার ঝকমকে পোশাক খুলে এখন পরেছেন কয়েদির পোশাক। সোমবার সাজা শোনার পর সারা রাত জেলের ভেতর কেঁদে কাটিয়েছেন তিনি। জেলের খাবার সেভাবে মুখেও তোলেননি। জানা গেছে, জেলে সমানে কেঁদে চলেছেন একসময়কার প্রভাবশালী এই ধর্মগুরু। জেলের মধ্যে কারো সঙ্গে সেভাবে কথাও বলছেন না তিনি। বর্তমানে রোহতক জেলের একটি সেলে রাখা হয়েছে তাঁকে।
জেল সূত্রের খবর, নিরাপত্তার কারণেই তাঁকে সম্পূর্ণ আলাদা রাখা হয়েছে। রাম রহিম সিংহের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন দুজন পুলিশকর্মী এবং দুজন নিরাপত্তাকর্মী। উল্লেখ্য, সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতের বিচারপতি জগদীপ সিংহ রোহতকের জেলে এসে ধর্মগুরু গুরমিত সিংহ রাম রহিমকে দুই শিষ্য ধর্ষণ মামলায় কুড়ি বছরের কারাধণ্ডের নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে ৩০ হাজার রুপি জরিমানা ধার্য করেন।