চীনে রহস্যময় ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক কমিয়ে বলছে কর্তৃপক্ষ!
চীনের উহান শহরে গত ডিসেম্বরে ছড়িয়ে পড়া রহস্যময় ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা কর্তৃপক্ষ যত বলছে, তা আসলে আরো অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
উহান কর্তৃপক্ষ বলছে, গবেষণাগার থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, নতুন ওই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৪১ জন। কিন্তু যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞরা বলছেন ওই সংখ্যা এক হাজার সাতশর কাছাকাছি। রহস্যময় ওই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দুজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছিল।
রহস্যময় ভাইরাস সংক্রমণ প্রসঙ্গে নতুন তথ্যটি দিয়েছে লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের সংক্রামক রোগ বিষয়ে গবেষণাকারী এমআরসি সেন্টার। যুক্তরাজ্য সরকার, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন সংস্থার পরামশ্যক হিসেবে কাজ করে এমআরসি সেন্টার।
এদিকে সিঙ্গাপুর ও হংকং জানিয়েছে আজ শুক্রবার থেকে উহান শহর থেকে আসা বিমানযাত্রীদের জন্য বিশেষ স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকো, লস অ্যাঞ্জেলেস ও নিউইয়র্ক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষও একই ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছে।
চীনের মধ্যাঞ্চলীয় উহান শহরে গত ডিসেম্বরে রহস্যজনক নিউমোনিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। ভাইরাসটির সঙ্গে হয়তো সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম-সার্স বা গুরুতর শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে বলে অনলাইনে এক ধরনের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। প্রাণঘাতী সার্স রোগটি ফ্লু’র মতোই। চীন থেকে ছড়িয়ে পড়ার পর সার্স ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২০০২-০৩ সালে বিশ্বে সাতশর বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল।
অত্যন্ত সংক্রামক সার্স রোগের সঙ্গে চীনের নতুন রহস্যজনক ভাইরাসের মিল থাকতে পারে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শঙ্কা প্রকাশ করেন নেটিজেনরা।
এমন পরিস্থিতিতে উহানের পুলিশ কর্তৃপক্ষ জানায়, ‘যাচাই ছাড়া ভুল বা মিথ্যা তথ্য ইন্টারনেটে প্রকাশ বা ছড়ানোর অভিযোগে’ অন্তত আটজনকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
উহানের স্বাস্থ্য বিভাগ গত ৩ জানুয়ারি জানিয়েছিল, নতুন ভাইরাল সংক্রমণের কারণ খোঁজার চেষ্টা চলছে। স্বাস্থ্য বিভাগের ওয়েবসাইটে এক বিবৃতিতে বলা হয়, রোগটি সংক্রমণের সঙ্গে ইনফ্লুয়েঞ্জা, এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা কিংবা শ্বাসকষ্ট সংক্রান্ত অন্যান্য রোগের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তবে বিবৃতিতে সার্স রোগের কথা উল্লেখ করা হয়নি।
এ ছাড়া মানুষ থেকে মানুষে এই রোগ সংক্রমণের কোনো উপসর্গ পাওয়া যায়নি বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। জানা গেছে, রহস্যময় ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে বেশিরভাগই শহরের একটি সামুদ্রিক খাবারের বাজারে কাজ করতেন। যার জেরে ওই এলাকায় পরিচ্ছনতা অভিযান চালায় কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-ডব্লিউএইচও জানিয়েছিল, সাম্প্রতিক সংক্রমণ সম্পর্কে সংস্থাটি সচেতন রয়েছে। চীন সরকারের সঙ্গে এ নিয়ে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে বলেও জানিয়েছিল ডব্লিউএইচও।
সংস্থাটির মুখপাত্র বলেছিলেন, ‘ভাইরাল নিউমোনিয়া হওয়ার অনেক সম্ভাব্য উপসর্গ রয়েছে। এই উপসর্গগুলো সার্স ভাইরাসের তুলনায় নিউমোনিয়ার ভাইরাসেই বেশি দেখা যায়। ডব্লিউএইচও বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং এ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত তথ্য হাতে আসার সঙ্গে সঙ্গে জানানো হবে।’
২০০২-০৩ সালে চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি প্রদেশে সার্সে আক্রান্তের সংখ্যা কমিয়ে দেখানোর কারণে দেশটির কড়া সমালোচনা করেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
ওই মহামারিতে ২৬টি দেশের আট হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছিল। শুধু চীনেই প্রাণ হারিয়েছিলেন ৩৪৯ জন। আর হংকংয়ে মারা গিয়েছিলেন ২৯৯ জন।
বিশ্বব্যাপী ওই মহামারি ছড়িয়ে পড়ার পেছনে বিদেশি পর্যটকরা দায়ী ছিলেন বলে ধারণা করা হয়। কারণ দ্রুত চিকিৎসা না নিলে সার্স ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
ওই মহামারিজনিত সংকট মোকাবিলায় ব্যর্থ হওয়ার কারণে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে অপসারণ করেছিল চীন। ২০০৪ সালের মে মাস থেকে চীন সার্স মুক্ত রয়েছে।