করোনাভাইরাসে ঝুঁকিতে বৈশ্বিক পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বৈশ্বিক পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন এক বিশ্লেষণে এমন দাবি করেছে। বিশ্বের ১০টি ব্যস্ততম সমুদ্রবন্দরের মধ্যে চীনেই সাতটি, প্রতিবেশী সিঙ্গাপুর ও দক্ষিণ কোরিয়ায়ও একটি করে বন্দর রয়েছে। করোনাভাইরাসের বিস্তারে চীন থেকে নৌযান চলাচল কমেছে।
এ ছাড়া মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত সব ধরনের বাণিজ্য প্রদর্শনী ও শিল্প সম্মেলন বন্ধ করেছে চীন। বাতিল করেছে ক্যান্টন ফেয়ার, আমদানি-রপ্তানিযোগ্য পণ্যের মেলাসহ বড় বড় ইভেন্ট। গত বছর শুধু ক্যান্টন ফেয়ারেই প্রায় ৩০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের বাণিজ্য চুক্তি হয়েছিল।
যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সম্প্রতি টেলিফোন আলাপে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় নিয়ন্ত্রিত ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
চীনে মহামারি করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ভাইরাসের সংক্রমণে চীনে ২৪ ঘণ্টায় ৭৩ জনের মৃত্যুতে মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৩৬ জনে। নতুন করে তিন হাজার ১৪৩ জন সংক্রমিত হওয়ায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা হয়েছে ৩১ হাজার ১৬১ জন। আজ শুক্রবার চীনের হেলথ কমিশন জানায়, ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়াদের মধ্যে অধিকাংশই করোনাভাইরানের উৎপত্তিস্থল হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানে বসবাসকারী। সংক্রমণের শিকার হওয়াদের মধ্যে উহান শহরের বাসিন্দা সর্বোচ্চ সংখ্যক হলেও পার্শ্ববর্তী শিয়াও-গান শহরে দুই হাজারের মতো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আজ শুক্রবার টেলিফোনে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শি জিনপিং ট্রাম্পকে বলেন, চীনা সরকার ব্যাপকভিত্তিতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। করোনাভাইরাস যুদ্ধে ধীরে ধীরে সফলতাও পাচ্ছেন তাঁরা। তাই মহামারি মোকাবিলায় তাঁর সরকার আত্মবিশ্বাসী। দীর্ঘমেয়াদে চীনসহ বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়বে না বলেও আশ্বস্ত করেন শি জিনপিং।
এদিকে, জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় করোনাভাইসের সংক্রমণ নিয়ে আজ শুক্রবার একটি মানচিত্র প্রকাশ করেছে। তাতে চীন, হংকং, ম্যাকাও ছাড়াও ২৫টি দেশকে চিহ্নিত করা হয়। তারা বলছে, চীনের বাইরে হংকংয়ে একজন মারা গেছে, আক্রান্ত হয়েছে ২২ জন, ম্যাকাওতে আক্রান্ত ১০ জন। জাপানে আক্রান্ত ৮৬ জন, সিঙ্গাপুরে ৩০, থাইল্যান্ডে ২৫, দক্ষিণ কোরিয়ায় ২৪, অস্ট্রেলিয়ায় ১৪, জার্মানিতে ১৩, যুক্তরাষ্ট্র ১২, তাইওয়ানে ১৬, মালয়েশিয়ায় ১৪, ভিয়েতনামে ১২, ফ্রান্সে ছয়, আরব আমিরাতে পাঁচ, কানাডায় ছয়, ভারতে তিনজন; ফিলিপাইনে মারা গেছেন একজন, আক্রান্ত আরো দুজন; রাশিয়া ও ইতালিতে দুজন করে চারজন ও যুক্তরাজ্যে তিনজন। এ ছাড়া একজন করে রোগী পাওয়া গেছে বেলজিয়াম, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, সুইডেন, স্পেন, কম্বোডিয়া ও ফিনল্যান্ডে।
অন্যদিকে জাপানি প্রমোদতরী ডায়মন্ড প্রিন্সে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৬১ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ২১ জন জাপানি, আটজন মার্কিনি, পাঁচজন অস্ট্রেলিয়ার ও পাঁচজন কানাডার নাগরিক রয়েছেন।