নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী পল ডিরাক
আইনস্টাইনকে নিয়ে অনেক বেশি আলোচনা করা হয়। সন্দেহ নেই তিনি পৃথিবীর অন্যতম সেরা বিজ্ঞানীদের একজন। কিন্তু জগৎখ্যাত আরো অনেক বিজ্ঞানী রয়েছেন যাদের কথা খুব কমই আলোচনায় আসে।
আইনস্টাইন আসলে বিজ্ঞানের মহাকাশে একটি নক্ষত্র। এমন অনেক নক্ষত্র নিয়েই, বিজ্ঞানের এই অসীম মহাকাশ। বিজ্ঞানী পল ডিরাকের নাম কী জানি আমরা?
আপনি কী কখনো ভেবেছেন, আপনার মতো হুবহু একজন মানুষ এই মহাবিশ্বের কোথাও আছে? আপনার সাথে কখনো দেখা হলে অতি আবেগ নিয়ে যদি কোলাকুলি করতে যান, তাহলে দুজনেই ধ্বংস হয়ে যাবেন! তৈরি হবে প্রচুর শক্তি। মানুষ আপনাকে ‘অপদার্থ’ বলে বকা দিলেও আপনি আসলে ‘পদার্থ’ (ম্যাটার)। আর আপনার মতো হুবহু অন্য মানুষটিকে ধরা যাক এন্টিম্যাটার। এ পর্যন্ত পড়ে ভাবছেন, এ তো পাগলের প্রলাপ! বিষয়টা আসলে একেবারে পাগলামি নয়। এবার বাস্তবিক একটা উদাহরণ শুনুন তাহলে।
আধুনিক চিকিৎসায় ‘পেট ইমেজিং’ বলে একটা কৌশল আছে। শরীরের ভিতরের কোনো অংশকে দৃশ্যত করার জন্য এই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়। এর ফলে আসলে কী হয়? একটা রাসায়নিক যৌগ শরীরে প্রবেশ করানো হয়। যে যৌগে থাকে একটি তেজস্ক্রিয় মৌল। আর তেজস্ক্রিয় মৌল থেকে পজিট্রন (ধনাত্মক ইলেকট্রন) বের হতে থাকে। মাশরাফিদের বোলিং মেশিন থেকে যেমন বের হয় ক্রিকেট বল। তবে পজিট্রন বের হয় অনেকগুণ বেশি গতিতে।
পজিট্রনের ভর হুবহু ইলেকট্রনের ভরের সমান। শুধু পার্থক্য হলো, ইলেকট্রন ঋণাত্মক চার্জযুক্ত। তাই এই দুটো একে অপরের বিপরীত পদার্থ বা এন্টিম্যাটার। যাই হোক, তেজস্ক্রিয় মৌল হতে নির্গত পজিট্রন শরীরের ভিতরে ইলেকট্রন খুঁজে পায় আর মিলিত হতেই ধ্বংস হয়। তৈরি হয় প্রচুর শক্তি। সে শক্তি গামা রশ্মি রূপে বের হয়। আর সে রশ্মিকে ব্যবহার করে শরীরের ভিতরের একটা চিত্রপট আমরা পাই।
এন্টিম্যাটার বিষয়টি কল্পকাহিনীর মতো মনে হতে পারে। তবে এই যে পজিট্রন, যেটা ইলেকট্রনের এন্টিম্যাটার, সেটা কোনো কল্পকাহিনী নয়। সেটা পরীক্ষিত সত্য এবং প্রায়োগিক উদাহরণটাই উল্লেখ করা হলো। কিন্তু এই এন্টিম্যাটার বিষয়টি একসময় আমাদের জানা ছিল না।
পল ডিরাক নামের এক যুবক এর উপস্থিতির কথা প্রথম বলেছেন। তিনি এর অস্তিত্বের কথা বলেছেন সম্পূর্ণ তত্ত্বীয় ভিত্তিতে। তত্ত্বীয় পদার্থবিদরা (থিওরিটিক্যাল ফিজিসিস্ট) এমন বহুকিছুর কথা আগে থেকে বলে দিতে পারেন। বিজ্ঞানের ভবিষ্যতবক্তা তারা। পরীক্ষার মাধ্যমে পরে এসব ভবিষ্যদ্বাণীর প্রমাণ পাওয়া যায়। পল ডিরাকের এন্টিম্যাটার ঠিকই একসময় পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে।
সমস্যা হলো এই যে এন্টিম্যাটার, সেটা ইলেকট্রনের মতো ক্ষুদ্র বস্তুর ক্ষেত্রে সহজেই প্রমাণ করা যায়। কিন্তু খালি চোখে দেখতে পাই এমন বস্তুর ক্ষেত্রে সেটা প্রমাণ করা কঠিন। ইলেকট্রনের মতো ক্ষুদ্র বস্তুর জগতটাকে বলা হয় কোয়ান্টাম ওয়ার্ল্ড। আর আপনার-আমার জগতটা হলো ক্লাসিক্যাল জগত।
এই যে, কোয়ান্টাম ও ক্লাসিক্যাল জগত—এর মধ্যে একটা সীমারেখা রয়ে গেছে এখনো। প্রকৃতি সম্ভবত সীমারেখা পছন্দ করে। তাই কোয়ান্টাম জগতের সব বৈচিত্র্যতা, ক্লাসিক্যাল জগতে দেখা যায় না।
পল ডিরাক যখন নোবেল পুরস্কার পান তখন তাঁর বয়স মাত্র ৩১! বেচারা বিয়েও করেননি তখন। নিউটনের পর সবচেয়ে মেধাবী ব্রিটিশ পদার্থবিদ হিসেবে তাকে গণ্য করা হয় তাঁকে।
লেখক : গবেষক, স্টকহোম ইউনিভার্সিটি, সুইডেন।
ইমেইল : redoxrouf@yahoo.com