উইন্ডোজের ৩০ বছর
প্রযুক্তি দুনিয়ায় যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রাজত্ব করে চলেছে তাদের একটি মাইক্রোসফট। স্মার্টফোন থেকে শুরু করে গেমিং কনসোল, সবখানেই দাপট দেখিয়ে চলেছে তারা। তবে তাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বহুল ব্যবহৃত পণ্য অপারেটিং সিস্টেম সফটওয়্যার। একে একে ৩০ বছর পেরিয়ে মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম এখনো সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ও জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম।
তিন দশকের এই যাত্রায় উইন্ডোজে হয়েছে বহু পরিবর্তন, এসেছে বিভিন্ন সংস্করণ। ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন থেকে জেনে নেওয়া যাক উইন্ডোজের সকল সংস্করণ সম্পর্কে দু-এক কথা।
১. উইন্ডোজ-১
এই সংস্করণের মাধ্যমে আলোর মুখ দেখে মাইক্রোসফটের অপারেটিং সিস্টেম। ১৯৮৬ সালের নভেম্বর মাসে উন্মুক্ত হওয়া এই অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারবান্ধব করে গড়ে তুলতে ব্যবহার করা হয় গ্রাফিকাল ইন্টারফেস। ১৬-বিট অপারেটিং সিস্টেমে বিভিন্ন কাজ পরিচালনার জন্য মাউস খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
সে সময় বাজারে চালু থাকা বেশিরভাগ অপারেটিং সিস্টেম বহুলাংশে কিবোর্ড নির্ভরশীল ছিল। উইন্ডোজের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের মাঝে মাউস জনপ্রিয় করতে চেয়েছিল মাইক্রোসফট। মাউস ব্যবহারে তাদের এক্সপার্ট করে গড়ে তোলার জন্য তারা একটি গেমও তৈরি করেছিল। ‘রিভারসি’ নামের এই গেম খেলতে হতো মূলত মাউসের মাধ্যমে।
২. উইন্ডোজ-২
উইন্ডোজ-১ মুক্তি পাওয়ার দুই বছর পর ১৯৮৭ সালে মাইক্রোসফট নিয়ে আসে উইন্ডোজ-২। উইন্ডোজ ২-এর একটি বড় পরিবর্তন ছিল এখানে একটি উইন্ডোর ওপরে আরেকটি উইন্ডো ওভারল্যাপ করতে পারত। একই সঙ্গে ম্যাক্সিমাইজ বা মিনিমাইজ করার সুবিধা চালু হয় এই সংস্করণে। ব্যবহারকারীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় ‘কন্ট্রোল প্যানেল’-এর। সিস্টেমের সকল সেটিংস এবং কনফিগারেশন এক জায়গায় পরিবর্তনের সুযোগ করে দেয় কন্ট্রোল প্যানেল। এই সুবিধা পরবর্তী সব কটি সংস্করণে স্থান করে নিয়েছে।
৩. উইন্ডোজ ৩.০
এই সংস্করণ থেকে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম চালানোর জন্য হার্ড ড্রাইভের প্রয়োজন হয়। মাল্টি টাস্কিংয়ের সুবিধাও চালু হয় উইন্ডোজে। অপরদিকে উইন্ডোজ ৩.০ ভার্সনে ২৫৬ কালার সাপোর্ট করত, যার ফলে কালারফুল এক ইন্টারফেস ব্যবহারকারীদের সামনে আসে। জনপ্রিয় গেম সলিটারও প্রথমবারের মতো মুক্তি পায় উইন্ডোজ ৩.০-এর সাথে।
৪. উইন্ডোজ ৩.১
১৯৯২ সালে মুক্তি পাওয়া এই সংস্করণে মাইক্রোসফট সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয় ট্রুটাইপ ফন্টকে। আর এর ফলে পাবলিশিং কাজে উইন্ডোজ হয়ে ওঠে অপ্রতিদ্বন্দ্বী। একই সঙ্গে এই সংস্করণে মুক্তি দেওয়া হয় জনপ্রিয় গেম মাইনসুইপ।
৫. উইন্ডোজ-৯৫
উইন্ডোজ-৯৫ মুক্তি পায় ১৯৯৫ সালের আগস্ট মাসে। স্টার্ট মেনু এবং স্টার্ট বাটনকে প্রথমবারের মতো অন্তর্ভুক্ত করা হয় উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে। ৩২ বিটের এই অপারেটিং সিস্টেমকে মাল্টি টাস্কিং-এর জন্য বেশ উন্নত করে সাজানো হয়।
৬. উইন্ডোজ ৯৮
১৯৯৮ সালে মুক্তি পাওয়া এই সংস্করণ তার পূর্ববর্তী সংস্করণের প্রায় সব সুবিধাই ধারণ করে। শুধু নতুন সংযুক্ত হয় ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ৪, আউটলুক এক্সপ্রেস, মাইক্রোসফট চ্যাট এবং নেটশো প্লেয়ার। অবশ্য ১৯৯৯ সালে উন্মুক্ত হওয়া উইন্ডোজ ৯৮-এর হালনাগাদকৃত সংস্করণে অবশ্য নেটশো প্লেয়ারের বদলে জায়গা পায় উইন্ডোজ মিডিয়া প্লেয়ার ৬.২।
৭. উইন্ডোজ এমই
এমএস ডোস অবলম্বনে নির্মিত শেষ অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ এমই। ২০০০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সাধারণ ক্রেতাদের উদ্দেশ্য করে বানানো এই অপারেটিং সিস্টেম মুক্তি পায়। বিভিন্ন অটোমেটেড সিস্টেম রিকভারি টুলের সঙ্গে ব্যবহারকারীদের পরিচয় করিয়ে দেয় উইন্ডোজ এমই।
৮. উইন্ডোজ-২০০০
উইন্ডোজ-২০০০ মুক্তি পায় ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারিতে। মাইক্রোসফটের বিজনেস সম্পর্কিত উইন্ডোজ এনটি ব্যবহার করে নির্মাণ করা হয় উইন্ডোজ-২০০০।
৯. উইন্ডোজ এক্সপি
উইন্ডোজের সবচেয়ে সেরা সংস্করণগুলোর একটি হিসাবে বিবেচনা করা হয় উইন্ডোজ এক্সপি। ২০০১ সালের অক্টোবরে মুক্তি পাওয়া এই অপারেটিং সিস্টেম মাইক্রোসফটের এন্টারপ্রাইজ লাইন এবং কনজ্যুমার লাইন মিলিয়ে তৈরি করা হয়। স্টার্ট মেন্যু এবং টাস্কবার আরো বেশি সুসজ্জিত হয় উইন্ডোজ এক্সপিতে। বিভিন্ন ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট ও গ্রাফিকসের ব্যবহারে বেশ নান্দনিকভাবে সাজানো হয় এক্সপিকে। এক্সপি মাইক্রোসফটের সবচেয়ে বেশি সময় ধরে চলা একটি অপারেটিং সিস্টেম। ২০১৪ সালের এপ্রিলে এসে প্রতিষ্ঠানটি এক্সপির সকল আপডেট বন্ধ করে দেয়।
১০. উইন্ডোজ ভিসতা
উইন্ডোজ এক্সপি উন্মুক্ত হওয়ার অর্ধযুগ পর ২০০৭ সালে মাইক্রোসফট আনে তাদের দশম অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ ভিসতা। ভিসতা সংস্করণে অনেকগুলো পরিবর্তনের ভেতরে উইন্ডোজের লুক থেকে শুরু করে সার্চ, সিকিউরিটি- অনেক কিছু স্থান পায়। তবে অনেক বেশি ‘বাগ’ পূর্ণ অপারেটিং সিস্টেম সবার কাছে থেকে বেশ সমালোচনা কুড়িয়েছে। বেশি র্যাম ছাড়া ঠিকমতো অপারেট করতে না পারায় অনেকেই ফিরে গিয়েছিলেন উইন্ডোজ এক্সপিতে।
১১. উইন্ডোজ ৭
২০০৯ সালের অক্টোবরে বাজারে আসে উইন্ডোজ-৭। উইন্ডোজ ভিসতার সব ভুলত্রুটি মাইক্রোসফট দূর করে এই সংস্করণে। ব্যবহারবান্ধব এবং দ্রুতগামী এই অপারেটিং সিস্টেম জনপ্রিয়তা পায় খুব তাড়াতাড়ি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ উইন্ডোজ এক্সপি থেকে উইন্ডোজ ৭-এ আপগ্রেড করে।
১২. উইন্ডোজ-৮
উইন্ডোজ মেন্যু ইন্টারফেসের এক বড় পরিবর্তন নিয়ে মাইক্রোসফট তাদের অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ-৮ মুক্তি দেয় ২০১২ সালের অক্টোবরে। স্টার্ট বাটনকে ঝেড়ে ফেলে দেয় তারা। আর স্টার্ট মেন্যুকে সাজানো হয় বিভিন্ন লাইভ টাইলের মাধ্যমে। উইন্ডোজকে আরো বেশি টাচবান্ধব করতে তাদের এই পরিবর্তন। এ ছাড়া ইউএসবি ৩.০ সাপোর্ট সুবিধা চালু করে উইন্ডোজ-৮।
১৩. উইন্ডোজ ৮.১
উইন্ডোজ ৮-এর ফ্রি আপগ্রেড উইন্ডোজ ৮.১ মুক্তি পায় ২০১৩ সালের অক্টোবরে। ব্যবহারকারীদের চাহিদার কথা চিন্তা করে আবার স্টার্ট মেন্যুকে ফিরিয়ে আনে মাইক্রোসফট।
১৪. উইন্ডোজ ১০
মাইক্রোসফটের সর্বশেষ অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ ১০ উন্মুক্ত করা হয় ২০১৫ সালে। উইন্ডোজ ১০-এ এসে স্টার্ট মেন্যুকে সাজানো হয় পুরোনো এবং নতুনের মিশেলে। এখানে সাধারণ মেন্যুর সঙ্গে স্থান পায় অ্যাপ টাইল। একই সঙ্গে একটি মাইক্রোসফট অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে বিভিন্ন ডিভাইসে অ্যাপ ব্যবহার করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে এই সংস্করণে। ডিজিটাল পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট কর্টানা যুক্ত হয়েছে উইন্ডোজ ১০-এ।