টিভিতে আবহাওয়া প্রতিবেদন সম্প্রচারে নতুন প্রযুক্তি

যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হেনেছে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় (হারিকেন) ‘ফ্লোরেন্স’। আর সে ঘূর্ণিঝড়বিষয়ক খবর সম্প্রচারকে কেন্দ্র করে দেশটির আবহাওয়াভিত্তিক টেলিভিশন মাধ্যম ‘দ্য ওয়েদার চ্যানেল’ উদ্ভাবন করেছে নতুন প্রযুক্তির আকর্ষণীয় ও রোমাঞ্চকর উপস্থাপনা। এরই মধ্যে সে উপস্থাপনাশৈলী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষের কাছে।
ওই সব আবহাওয়া প্রতিবেদনে ব্যবহার করা হচ্ছে ‘ইমার্সিভ মিক্সড টেকনোলজি’ নামে নতুন গ্রাফিক প্রযুক্তি, যাতে করে কৃত্রিমভাবে আসন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের এক ধরনের বাস্তব ও বিশ্বাসযোগ্য প্রেক্ষাপটের অভিজ্ঞতা দেওয়া যায় দর্শককে। দর্শক নিজের চোখে দেখবেন, বিশেষ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানলে আসলে কী ধরনের বাস্তবতা তৈরি হবে। তার কাছে তুলে ধরা হবে বিশেষ ধরনের বাস্তব অভিজ্ঞতার প্রতিরূপ।
এর আগ পর্যন্ত আবহাওয়া প্রতিবেদনগুলোতে কেবল কিছু তথ্য, পরিসংখ্যান দিয়ে পরিস্থিতি বোঝানো হতো, যা দর্শককে কল্পনা করে নিতে হতো। কিন্তু নতুন উদ্ভাবিত এ প্রযুক্তিতে দর্শক আর কল্পনা করবেন না, নিজের চোখে দেখবেন আসন্ন দুর্যোগ পরিস্থিতি।
Storm surge will be a huge factor for Hurricane #Florence Check out what it might look like with @TWCErikaNavarro: pic.twitter.com/TPqTZTmiAM
— The Weather Channel (@weatherchannel) September 13, 2018
ওয়েদার চ্যানেলের নতুন প্রযুক্তির একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, এক আবহাওয়া সংবাদ উপস্থাপিকা কৃত্রিমভাবে বানানো একটি রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছেন, আর তাঁর শরীরের অনুপাতে বিভিন্ন উচ্চতায় বন্যার পানি ওঠানামা করছে। তিন ফুট উচ্চতার ঘূর্ণিঝড়ের পানি তার কোমর পর্যন্ত উঠে আসছে, আর দেখানো হচ্ছে ওই অবস্থায় কী বাস্তবতা তৈরি হতে পারে। ওই উচ্চতার পানি মানুষকে ফেলে দিয়ে ভাসিয়ে নিতেও পারে কিংবা গাড়ি ভাসিয়ে নিতে পারে, স্রোতের তোড়ে ভেসে আসা গাড়ি বা অন্য কিছু মানুষকে আঘাত করতে পারে, সবকিছু চিত্রিত করে দেখানো হচ্ছে। এর পর প্রতিবেদনচিত্রে উপস্থাপিকাকে ঘিরে পানির উচ্চতা ৬ ফুটে বৃদ্ধি পায়, যখন মানুষের মাথা ডুবে যাবে পানির নিচে; তখন কী পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে তা দেখতে পায় দর্শক। এরপর ৯ ফুট উচ্চতায় উঠে যায় পানি, সে সময়কালীন পরিস্থিতিও কৃত্রিমভাবে দেখানো হয় দর্শককে।
আরেকটি আবহাওয়া প্রতিবেদনে দেখানো হয়, কীভাবে টর্নেডো জনপদে আঘাত হানবে, সে পরিস্থিতি।
প্রতিবেদনগুলোতে বাস্তব জগতের উপস্থাপক ও গ্রাফিক পদ্ধতির কৃত্রিম জগৎ মিলিয়ে একটি নতুন আবহ নির্মাণ করে দেখানো হয়। একে বলা হচ্ছে ‘ইমার্সিভ মিক্সড টেকনোলজি’।
আবহাওয়ার খবর প্রচারের ক্ষেত্রে নতুন এই প্রযুক্তিই হবে আগামী দিনের রীতি, এমনই ধারণা করছেন ওয়েদার চ্যানেলের কর্মকর্তারা।
কানাডাভিত্তিক রেডিও স্টেশন সিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওয়েদার গ্রুপের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পটস বলেন, ‘আগে নানাভাবে তথ্য ব্যবহার করে আবহাওয়া সতর্কতা দেওয়া হতো। কিন্তু আমরা চেয়েছি সেটির চেয়ে আরো শক্তিশালী কিছু প্রায়োগিক পদ্ধতি, যাতে দর্শক তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুভব করতে পারেন। এতে দর্শক জরুরি অবস্থাটি বুঝতে পারবে আরো বেশি।’
এ ধরনের প্রতিবেদন সংবাদের আবেদন কমিয়ে সেটাকে বিনোদনে পরিণত করে ফেলতে পারে কি না, সে বিষয়ে জানতে চাইলে মাইক বলেন, ‘আমার মনে হয় সব সময়ই সংবাদ আর বিনোদনের একটি ভেদরেখা আছে। আমরা সেটি রক্ষা করব।’ এটি সে মাত্রার বিনোদন নয় বলে দাবি করেন মাইক।
সময় আর নিত্যনতুন প্রযুক্তির ফলে গণমাধ্যমের রূপ দিন দিন বদলে যাচ্ছে। আগামীতে এই প্রযুক্তিতে আবহাওয়া প্রতিবেদন পরিবেশন করা হবে বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন মাইক পটস।