নতুন কী আছে ওয়ান প্লাস টু মোবাইলে?
যাঁরা স্মার্টফোন ইন্ডাস্ট্রির নিয়মিত খোঁজ রাখেন তাঁদের কাছে ওয়ানপ্লাস নতুন কিছু নয় অবশ্যই। এই চাইনিজ স্মার্টফোন কোম্পানিটি তাদের প্রথম হ্যান্ডসেট দিয়েই বাজার মাত করেছে। অনেক প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা এমনকি স্যামসাং কিংবা অ্যাপলের ফ্ল্যাগশিপ সেটগুলো থেকেও এই সেটকে এগিয়ে রাখেন।
কারণ ফিচার কিংবা সুবিধার বিপরীতে এই হ্যান্ডসেটের দাম খুবই কম। তাই এই সেটের আর এক নাম ‘ফ্ল্যাগশিপ কিলার’। আর এবার এই স্মার্টফোন সিরিজের দ্বিতীয় হ্যান্ডসেটকে একধাপ এগিয়ে বলা হচ্ছে, ‘২০১৬ ফ্ল্যাগশিপ কিলার’। কারণ অত্যাধুনিক ফিচারসমৃদ্ধ এই সেট শুধু এ বছরেরই না আগামী বছরের ফ্ল্যাগশিপগুলোকে চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রস্তুত।
এবার দেখে আসা যাক ওয়ান প্লাস টু- এর দশটি ফিচার, যা এই ফ্ল্যাগশিপের জন্য একেবারেই নতুন
১. ওয়ান প্লাস টুতে স্ক্রিনের নিচে থাকবে একটি হোম বাটন, যেখানে থাকবে একটি ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর। এই স্ক্যানারটি ভেরিফিকেশনের জন্য সর্বমোট পাঁচটি ফিঙ্গারপ্রিন্ট গ্রহণ করতে সক্ষম। কোম্পানি দাবি করছে এই ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরটি অ্যাপেলের টাচআইডি স্ক্যানারের থেকেও দ্রুতগতিতে কাজ করতে পারবে।
২. পূর্বের সেটের মতো ওয়ান প্লাস টুতেও আছে ৫.৫ ইঞ্চি ডিসপ্লে এবং সাথে ফুল এইচডি (১০৮০X১৯২০) রেজ্যুলেশন। কিন্তু পার্থক্য হচ্ছে আগের ফ্ল্যাগশিপ ওয়ান প্লাস ওয়ান থেকে এবারের সেটের পর্দার উজ্জ্বলতা থাকবে বেশি। সূর্যের আলোতেও স্ক্রিন ভালোমতো দেখা যাবে। আর ভিউ অ্যাঙ্গেল এবার হচ্ছে ১৭৮ ডিগ্রি। এ ছাড়া ডার্ক মোডে আপনা-আপনি স্ক্রিনের আলো একটু কমে আসবে। তাই চোখবান্ধব বলাই যায় এই ফ্ল্যাগশিপকে।
৩. ওয়ান প্লাস টু-তে জুড়ে দেওয়া হয়েছে বর্তমান বাজারে সবচেয়ে দ্রুতগতির প্রসেসর! ৬৪ বিট অক্টা-কোর কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৮১০ চিপসেটের সাথে আছে ৪ জিবি র্যাম। আর ওয়ান প্লাস ওয়ানে ছিল ২.৫ গিগাহার্টজ কোয়াড-কোর স্ন্যাপড্রাগন ৮০১ প্রসেসরের সাথে ৩ জিবি র্যাম। অবশ্য ওয়ান প্লাস টু-এর ১৬ জিবি ভার্সনে স্ন্যাপড্রাগন ৮১০ প্রসেসরের সাথে আছে ৩ জিবি র্যাম।
৪. ওয়ানপ্লাস টু হচ্ছে প্রথম হ্যান্ডসেট যেখানে ব্যবহার করা হয়েছে ইউএসবি টাইপ-সি পোর্ট। এই পোর্টটিকে তুলনা করা হচ্ছে অ্যাপলের লাইটনিং অ্যাডাপ্টারের সাথে। কারণ এটি দিয়ে সেকেন্ডে প্রায় ১০ জিবি ফাইল ট্রান্সফার করা সম্ভব। তবে সাধারণ মাইক্রো ইউএসবি ব্যবহারযোগ্য না বিধায় কোম্পানিটি বিক্রি করছে একটি রিভার্সিবল ইউএসবি ক্যাবল। এ ছাড়া সেটে জুড়ে দেওয়া হয়েছে এক নতুন ধরনের এলার্ট স্লাইডার, যার মাধ্যমে এক চাপে ফোনকে সাইলেন্ট মোডে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। অনেকটা প্রায় আইফোনের মতোই।
৫. পরিবর্তন ঘটেছে ডিজাইন, আকার আর ওজনেও! ওয়ান প্লাস টু ফ্ল্যাগশিপকে প্রিমিয়াম লুক দিতে ওয়ান প্লাস ওয়ান মডেলের মতো প্লাস্টিক ব্যবহার না করে এবার এর বডিতে ব্যবহার করা হয়েছে মেটাল। আর নতুন সেটটি ৯.৮৫ মিলিমিটার পুরু এবং ওজন ১৭৫ গ্রাম। ওয়ান প্লাস ওয়ান সেটটিতে পুরুত্ব আর ওজন ছিল যথাক্রমে ৮.৯ মিলিমিটার আর ১৬২ গ্রাম।
৬. ওয়ান প্লাস ওয়ান এবং টু উভয় সেটেই আছে এলইডি ফ্ল্যাশসহ ১৩ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা। তবে নতুন সেটে ব্যবহার করা হয়েছে ১.৩ মাইক্রন লেন্স, যার মাধ্যমে আরো বেশি আলো প্রবেশ করতে পারবে এবং স্বল্প আলোতেও ভালো ছবি তোলা যাবে। এ ছাড়া এবার ক্যামেরাতে ব্যবহার করা হয়েছে লেজার অটো-ফোকাস, যার মাধ্যমে দ্রুত অবজেক্ট ফোকাস করা যায়। ওয়ান প্লাস টু ছাড়া এলজি জিফোরেই শুধু এ ধরনের প্রযুক্তি রয়েছে। এ ছাড়া ক্যামেরাতে আছে অপটিক্যাল ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন, যাতে করে হাত নাড়া বা ধাক্কা লাগলেও ছবি এবং ভিডিওর কোনো ক্ষতি হয় না।
৭. ওয়ান প্লাস ওয়ানে ব্যবহার করা হয়েছিল সায়ানোজেন অপারেটিং সিস্টেম। কিন্তু এবার ওয়ান প্লাস টুতে ব্যবহার করা হয়েছে তাদের সম্পূর্ণ নিজের তৈরি একটি অপারেটিং সিস্টেম, যার নাম অক্সিজেন। ওয়ান প্লাস দাবি করছে অ্যানড্রয়েড এম মুক্তি পাবার আগ পর্যন্ত আর অন্য কোন স্মার্টফোনে অক্সিজেনের সমপরিমাণ ফিচার পাওয়া যাবে না।
৮. ব্যাটারির আয়ুও বেড়েছে এবার। ওয়ান প্লাস ওয়ানে ৩,১০০ এমএএইচের ব্যাটারি ছিল। এবার প্রায় ১০% বেড়ে তা হয়েছে ৩,৩০০ এমএএইচ।
৯. অনেকের মতে ওয়ান প্লাস ওয়ানের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা যেটি ছিল, সেটি এবার দূর হয়েছে ওয়ান প্লাস টু তে। সিঙ্গেল সিমের হ্যান্ডসেট দেখে গতবার যারা ওয়ান প্লাস কেনেননি, তারা এবার কিনে নিতে পারেন। কারণ এবার ডুয়েল সিমের স্লট ব্যবহার করা হয়েছে এই সেটে। তবে যারা একটি সিম ব্যবহার করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, তাদের জন্য আর একটি সিঙ্গেল সিম ভার্সন রয়েছে।
১০. ওয়ান প্লাস ওয়ানের জন্য শুধু দুটি কভার ছাড়া হয়েছিল বাজারে, যেগুলো যথাক্রমে স্যান্ডস্টোন ব্ল্যাক এবং সিল্ক হোয়াইট। কিন্তু ওয়ান প্লাস টু তে পাওয়া যাবে আরো কয়েকটি কভার। এদের মধ্যে রয়েছে ব্যাম্বু, কেভলার, ব্ল্যাক অ্যাপ্রিকোট এবং রোজয়ুড।
ওয়ান প্লাস টু পাওয়া যাচ্ছে দুটি সংস্করণে। প্রথমটিতে ৬৪ জিবি ইন্টার্নাল স্টোরেজের সাথে র্যাম আছে ৪ জিবি এবং দ্বিতীয়টিতে ১৬ জিবি ইন্টার্নাল স্টোরেজের সাথে র্যাম ৩ জিবি। প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট টেকরাডারের তথ্যানুযায়ী, প্রথম ৬৪ জিবির সংস্করণটির দাম ৩৮৯ মার্কিন ডলার এবং ১৬ জিবি সংস্করণটির দাম ৩২৯ মার্কিন ডলার।