যাঁর নামে স্টেডিয়াম, নেই তাঁরই দাম!
স্টেডিয়ামে ঢুকতেই হাতের বাঁ পাশের একেবারে কোনায় গাছগাছালির ভেতরে একটি ভাস্কর্য। একেবারে কাছে না গেলে ভাস্কর্যটি খুব বেশি চোখে পড়বে না কারো। পাশে দাঁড়িয়ে আছেন কয়েকজন দর্শক। ভাস্কর্যটি কার জিজ্ঞেস করলে নাম বলতে পারলেন না কেউই। তা পারার কথাও নয়। কারণ, এতে লেখা নেই পরিচিতি।
তা ছাড়া এমন অযত্নে-অবহেলায় ভাস্কর্যটি রয়েছে, যে কারোই মনে হতে পারে, তা এমনিতেই রাখা হয়েছে। চট্টগ্রামে সাগরিকায় যাঁর নামে স্টেডিয়ামে, সেই জহুর আহমেদ চৌধুরীর ভাস্কর্য এটি।
শুধু এই ভাস্কর্যই নয়, স্টেডিয়ামের নামটিও একসময় লেখা ছিল না। জহুর আহমেদ চৌধুরীর পরিবারের সদস্যরা গিয়েই নাকি মূল ফটকে নাম লাগিয়ে এসেছিলেন ২০১৪ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে। এর বাইরে পুরো স্টেডিয়ামের মধ্যে কোথায়ও তাঁর নামটি লেখা নেই।
বাংলাদেশের স্বাধীনতায় অবদান রাখা এই নেতার প্রতি সঠিক মূল্যায়ন করা হয়নি বলে মনে করেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। তাঁর ছোট ছেলে শরফুদ্দিন চৌধুরী রাজু এনটিভি অনলাইনকে বলেন, 'সরকারের কাছে আমরা খুবই কৃতজ্ঞ, সাগরিকার এই স্টেডিয়াম আমার বাবার নামে করা হয়েছে। এটা আমার বাবার প্রতি এবং আমাদের পরিবারের জন্য অনেক বড় সম্মানের। কিন্তু শুধু নামকরণ করলেই হবে না, তাঁর প্রতি সম্মানটাও করতে হবে যথাযথভাবে।'
মূল্যায়নটা সঠিকভাবে হয়নি বলে মনে করেন তিনি, 'যার নামে এই স্টেডিয়াম তিনি কে, এই প্রজন্মের অনেকেই হয়তো তা জানেন না। তাঁদের জানানোর জন্য স্টেডিমের মূল গেটের সামনে জহুর আহমেদের একটা পরিচিতি লিখে রাখার প্রয়োজন ছিল। কর্তৃপক্ষ তা না করলেও আমাদের নিজেদের উদ্যোগে একবার গেটের সামনে পরিচিতিটা লিখে রাখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ২০১১ সালে বিসিবির সে সময়কার পরিচালক গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর বাধায় তখন তা লাগাতে পারিনি আমার। যদিও সে সময়কার বোর্ড সভাপতি আমাদের অনুমতি দিয়েছিলেন।'
শুধু তাই নয়, ভাস্কর্যটিও ঠিক জায়গায় স্থাপন হয়নি বলে মনে করেন জহুর আহমেদের সন্তান। তিনি বলেন, 'ভাস্কর্যটি এমন জায়গায় স্থাপন করা হয়েছে, যা কারোই খুব একটা চোখে পড়ে না। স্টেডিয়ামের পাশে এক কোণে গাছগাছালির ভেতরে রয়েছে অনেকটা অবহেলা-অনাদরে। স্টেডিয়ামের ভেতরে অথবা একেবারে সামনে ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হলে ভালো হতো। সবার চোখে পড়ত।'
তা ছাড়া স্টেডিয়ামে খেলা হলে তাঁদের প্রতি খুব একটা সৌজন্যতা দেখানো হয় না বলে জানান রাজু চৌধুরী, 'আমার বাবার নামে এই স্টেডিয়াম, তাই খুব বেশি হয়তো বলতে পারি না। স্টেডিয়ামে খেলা হলে আমাদের পরিবারকে কখনোই একটা সৌজন্য টিকেট পর্যন্ত দেওয়া হয় না। আমরা কিনেই খেলা দেখে থাকি।'
জহুর আহমেদ চৌধুরীকে মোটেও অবমূল্যায়ন করা হয়নি বলে মনে করেন চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহসভাপতি আলী আব্বাস। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, 'জহুর আহমেদ চৌধুরীকে মোটেও অবমূল্যায়ন করা হয়নি। স্টেডিয়ামটি তাঁর নামে নামকরণ করা হয়েছে। যদিও ভাস্কর্যটি বাইরে আছে, কিন্তু তাঁদের পরিবার থেকে চাইলে সামনে এনে স্থাপন করতে পারে।'
জহুর আহমেদ চৌধুরী মূলত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বড় অবদান রেখেছেন তিনি। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রীও ছিলেন। সাগরিকার এই স্টেডিয়াম করার ক্ষেত্রে তাঁর পরিবারের অবদান রয়েছে। এখানে স্টেডিয়াম তৈরির জন্য তাঁরা জায়গাও দান করেছেন।