পাকিস্তানের এক ‘সব্যসাচী’ বোলারের গল্প
বয়স মাত্র ২১ বছর, এখনো জাতীয় দলের দরজা খোলেনি তাঁর জন্য। তবু ইয়াসির জানকে নিয়ে আলোচনার ঝড় পাকিস্তানজুড়ে। দুই হাতে বল করতে পারা বোলারকে নিয়ে আলোচনা তো হবেই।
দুই হাতে বল করতে পারলেও ইয়াসিরের ডান আর বাঁ হাতের বলের গতি সমান নয়। ডান হাতে তাঁর বলের গতি ঘণ্টায় প্রায় ১৪৫ কিলোমিটার। বাঁ হাতে তা ১৩৫ কিলোমিটারের কাছাকাছি। তবে গতির তারতম্য থাকলেও ইয়াসিরের প্রতিভা যে অনন্য, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল) দল লাহোর ক্যালান্ডার্স তাই তাঁর সঙ্গে ১০ বছরের চুক্তি করতে দ্বিধা করেনি।
ইয়াসিরের প্রতিভা সবার কাছে উন্মোচিত হয়েছিল অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ের একটি ম্যাচের সময়। রাওয়ালপিন্ডিতে অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচে শুরুতে ডান হাতে বল করছিলেন তিনি। কিন্তু সাফল্য পাচ্ছিলেন না। তারপর কী হয়েছিল তা শোনা যাক ইয়াসিরের মুখে, “একসময় অধিনায়ক আমাকে ডেকে বলল, ‘আমরা তো এরই মধ্যে বেশ পিছিয়ে পড়েছি। তুমি কেন বাঁ হাতে বল করছ না?’ এমনকি কোচরাও আমার বোলিং দেখে অবাক হয়েছিল। তারাও বলেছিল, ‘ছেলেটা কী করছে?’”
সেদিন বাঁ হাতে বল করে চার উইকেট তুলে নিয়ে খেলার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন ইয়াসির। তাঁর বিশেষ দক্ষতার কথা ছড়িয়ে পড়েছিল দেশজুড়ে। লাহোর ক্যালান্ডার্সের প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচিতে পাকিস্তানের সাবেক ফাস্ট বোলার আকিব জাভেদের দৃষ্টি কাড়তেও দেরি হয়নি।
ইয়াসিরের ‘সব্যসাচী’ বোলার হয়ে ওঠার পেছনে দুই কিংবদন্তি পেসারের বিশাল অবদান। একজন সর্বকালের সেরা বাঁহাতি পেসার ওয়াসিম আকরাম, অন্যজন বিধ্বংসী ডানহাতি পেসার ওয়াকার ইউনিস। বার্তা সংস্থা এএফপির কাছে তাঁর স্মৃতিচারণা, ‘ছোটবেলা থেকেই আমি দুই হাতে বল করতাম। ২০০৩ সালে আমার প্রথম বিশ্বকাপে ওয়াকার ভাই আর ওয়াসিম ভাইকে বল করতে দেখেছিলাম। তাঁদের বোলিং দেখতে খুবই ভালো লাগত। আমি তাঁদের অনুকরণ করতাম। তখন থেকে দুই হাতে বোলিংয়ের অনুশীলন করতে থাকি আর আস্তে আস্তে দক্ষ হয়ে উঠি।’
পাকিস্তানের জঙ্গি অধ্যুষিত উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল থেকে রাজধানী ইসলামাবাদে চলে আসা ইয়াসিরকে অনেক প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে জীবনে। বাবা ছিলেন সবজি বিক্রেতা। ছেলেবেলায় ঠিকমতো খাবার জোটেনি। ইয়াসিরের কোচ মোহাম্মদ সালমান জানাচ্ছেন, ‘সে এক দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে এসেছে। আমরা কোচরা তার পাশেই আছি। বর্তমানে ইয়াসিরের মালিকপক্ষ তার শারীরিক সক্ষমতা ও পুষ্টির জন্য অনেক টাকা খরচ করছে।’
সব প্রতিকূলতা জয় করে ইয়াসির ক্রিকেট মাঠে আলো ছড়াতে পারেন কি না, সেই উত্তর পেতে ভবিষ্যতের জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই!