‘স্টিভ স্মিথ—এ যুগের ব্র্যাডম্যান’
এই সাদা পোশাকেই বল টেম্পারিংয়ের অভিযোগে এক বছর ক্রিকেট থেকে নির্বাসনে ছিলেন স্টিভ স্মিথ। লম্বা সময় মাঠের বাইরে কাটিয়ে ফিরলেন বিশ্বকাপ দিয়ে। তবে ৫০ ওভারের ক্রিকেটে নিজেকে খুব একটা মেলে ধরতে পারেননি অসিদের সাবেক এই অধিনায়ক।
হয়তো অন্যভাবে নিজেকে মেলে ধরার অপেক্ষায় ছিলেন। করলেন সেটাই। যে ফরম্যাট থেকে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন, সেই টেস্ট ক্রিকেটে ফিরেই বোঝালেন, এ মুহূর্তে সংস্করণটির রাজা তিনিই।
১৪৪, ১৪২, ৯২ ও ২১১। অ্যাশেজ দিয়ে টেস্টে ফেরা স্মিথের শেষ চার ইনিংস। রানমেশিন ছাড়া আর কী বলা যায়? এ ফরম্যাটে রীতিমতো অবিশ্বাস্য স্মিথের ধারাবাহিকতা। চতুর্থ টেস্টে স্মিথ যে কী জিনিস, হাড়ে হাড়ে টের পেলেন ইংলিশ বোলাররা। স্বাগতিক বোলারদের ওপর ছড়ি ঘুরিয়ে তুলে নিয়েছেন ডাবল সেঞ্চুরি।
অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যমগুলো তাই স্মিথকে বলছে ‘আধুনিক যুগের ডন ব্র্যাডম্যান’। অবশ্য অনেকের কাছে টেস্ট ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান ব্র্যাডম্যানের অবিশ্বাস্য ৯৯.৯৪ গড়ের ধারেকাছে স্মিথ কেন, নেই কোনো ব্যাটসম্যানই। তবে যেভাবে ইংরেজ বোলারদের নাকাল করছেন স্মিথ, তাতে ব্র্যাডম্যানের পরে তাঁকেই বলা হচ্ছে ইংরেজদের বিপক্ষে সবচেয়ে কার্যকর অসি ব্যাটসম্যান।
মাথায় আঘাত পেয়ে চলমান অ্যাশেজের তৃতীয় টেস্ট মিস করেন স্মিথ। চতুর্থ টেস্টে ফিরেই করেছেন দ্বিশতক। আর তাতে স্মিথের রান এখন পর্যন্ত ১৪৭ দশমিক ২৫ গড়ে ৫৮৯ রান।
স্মিথ তাঁর ক্যারিয়ারের তিনটি দ্বিশতকের সবকটিই করেছেন অ্যাশেজে। আর অ্যাশেজে স্মিথের চেয়ে বেশি দ্বিশতক আছে কেবল ব্র্যাডম্যানের—পাঁচটি। সব মিলিয়ে অ্যাশেজে স্মিথের সেঞ্চুরি এখন পর্যন্ত ১১টি। চতুর্থ টেস্টে দ্বিশতক দিয়ে স্বদেশি সাবেক অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহকে (১০) পেছনে ফেলে অ্যাশেজ সেঞ্চুরির তালিকায় স্মিথের অবস্থান এখন তৃতীয়। তাঁর সামনে আছেন ব্র্যাডম্যান (১৯) ও ইংল্যান্ড কিংবদন্তি জ্যাক হবস (১২)।
ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে স্মিথের ব্যাটে চড়ে প্রথম ইনিংসে ৮ উইকেটে ৪৯৭ রান নিয়ে ইনিংস ঘোষণা করেছে অস্ট্রেলিয়া। ক্যারিয়ারে তৃতীয় ডাবল সেঞ্চুরিতে স্মিথ করেছেন ২১১ রান। এর আগের দুটি দ্বিশতক ছিল ২০১৫ ও ২০১৭ সালের অ্যাশেজে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের শেষ দিকে ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছে ইংল্যান্ড। ১০ ওভার ব্যাট করে ১ উইকেট হারিয়ে ২৩ রান নিয়ে দিন শেষ করেছে জো রুটের দল।
এর আগে গতকাল প্রথম দিনের বেশির ভাগ সময়ই ছিল বৃষ্টির দখলে। দিনের অর্ধেক শেষে ম্যাচ গড়ায় ৪৪ ওভারে। এ সময়ে তিন উইকেটে ১৭০ রান তোলে অস্ট্রেলিয়া। ৬০ রানে অপরাজিত থাকেন স্মিথ। ১৮ রানে তাঁকে সঙ্গ দেন ট্রাভিস হেড।
তবে এই ম্যাচেও ব্যর্থ অস্ট্রেলিয়ার ওপেনিং ব্যাটসম্যানরা। চলতি অ্যাশেজে এখন পর্যন্ত সাত ইনিংসের মধ্যে মাত্র একটিতে ওপেনারদের কাছ থেকে সুফল পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া। একটি ইনিংসেই কেবল ৬১ রান করেছেন ওপেনার ওয়ার্নার। এ ছাড়া বাকি ইনিংসগুলোতে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন ব্যাটসম্যানরা। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডেও পাল্টায়নি সেই চিত্র। ইনিংসের প্রথম ওভারেই বিদায় নেন ডেভিড ওয়ার্নার। তাঁর বিদায়ে ১ রানে ভাঙে অতিথিদের প্রথম জুটি।
ওয়ার্নার ব্যর্থ হলেও একই গতিতে আছেন স্মিথ। প্রথম টেস্টে ১৪৪ ও ১৪২, দ্বিতীয় টেস্টে একমাত্র ইনিংসে ৯২ রান করার পর এবার চতুর্থ টেস্টেও চলছে ‘স্মিথ-শো’।
স্মিথের পাশাপাশি রানে আছেন ল্যাবুশানে। চতুর্থ টেস্টে তুলে নিয়েছেন টানা চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরি। পঞ্চাশ-ছোঁয়া ইনিংস শেষে ৬৭ রান করে বিদায় নেন তিনি। ল্যাবুশানের বিদায়ের পর কিছুটা বিপদে পড়েছিল অসিরা। তবে সেই বিপদ কাটিয়ে দলকে নিয়ে নির্বিঘ্নে ভালো পুঁজি দাঁড় করান স্মিথ।