আইপিএলে বৃহস্পতিবার রাতে অনুষ্ঠিত রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে চেন্নাই সুপার কিংসের ম্যাচটা বহুদিন আলোচনায় থাকবে মহেন্দ্র সিং ধোনির কারণে। প্রথম অধিনায়ক হিসেবে এই ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে শততম ম্যাচ জয়ের কীর্তি গড়েছেন ভারতের বিশ্বকাপজয়ী দলের এই নেতা। তবে আইপিএলে ১৬৫ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে দলকে ১০০ ম্যাচে জয়ী করার রেকর্ডটা অনাকাঙ্ক্ষিত এক বিতর্কে ঢাকা পড়ে গেছে। ম্যাচের শেষ ওভারে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে মেজাজ গরম করে চেন্নাইয়ের ডাগআউট থেকে সরাসরি মাঠে প্রবেশ করেন ধোনি। ঠান্ডা মাথার অধিনায়ক খ্যাত ধোনির এমন কাণ্ডে চটেছেন অনেকেই।

রাজস্থানের বিপক্ষে ১৫৩ রানের জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নামা চেন্নাইয়ের জয়ের জন্য তখন তিন বলে ৮ রান প্রয়োজন ছিল। ওভারের চতুর্থ বলে মিচেল স্যান্টনারের কোমরের ওপরে ফুলটস করেন ইংলিশ পেসার বেন স্টোকস। আম্পায়ার উল্লাস গান্ধে ‘নো’ বল ডাকলেও, লেগ আম্পায়ার ব্রুস অক্সেনফোর্ড সিদ্ধান্তটা নাকচ করে দেন। দুই আম্পায়ারের দুই রকম সিদ্ধান্ত মানতে পারেননি আগের বলেই আউট হয়ে যাওয়া চেন্নাই অধিনায়ক ধোনি। রাগে ফুঁসতে থাকেন ডাগআউটে দাঁড়িয়ে। মাথা গরম করে খেলার মধ্যেই মাঠে ঢুকে পড়েন।

কিন্তু ধোনির আবেদনে সাড়া না দিয়ে নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন অক্সেনফোর্ড। দুই আম্পায়ার বারবার ধোনিকে বোঝালেও স্পষ্টতই অসন্তুষ্ট দেখা যায় ধোনিকে। রাগে গজরাতে গজরাতে মাঠ ছেড়ে যান চেন্নাই অধিনায়ক। এমন ঘটনার জন্ম দেওয়ায় ম্যাচ ফির ৫০ শতাংশ জরিমানা গুনতে হয় ধোনিকে। ম্যাচের পর ধোনির সমালোচনা করেন সাবেক ক্রিকেটারসহ অনেকেই।

এক টুইট বার্তায় সাবেক ভারতীয় ব্যাটসম্যান ও বর্তমানে ধারাভাষ্য দেওয়া আকাশ চোপড়া বলেন, যত বড় ক্রিকেটারই হোক, নিয়ম সবার জন্যই সমান। অফিশিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্টে আকাশ চোপড়া লিখেন, ‘তাঁর (ধোনির) এমন করা ঠিক হয়নি। তাঁকে জরিমানা কিংবা তিরস্কার করা উচিত। নিয়ম সবার জন্যই এক।’ ধোনির আচরণের সমালোচনা করেন সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক ও আরেক ধারাভাষ্যকার মাইকেল ভন। নিজের টুইটারে সাবেক এই ব্যাটসম্যান লিখেন, ‘আজেবাজে টুইট করা অর্থহীন..., দলের অধিনায়ক হিসেবে আপনাকে অবশ্যই আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত সম্মান করতে হবে..., ভয়ানক একটি উদাহরণ তৈরি হলো।’

এদিকে ম্যাচ শেষে রাজস্থানের হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসা ইংলিশ ব্যাটসম্যান জস বাটলারও ধোনির আচরণকে অগ্রহণযোগ্য বলেছেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাটলার বলেন, ‘আইপিএলের মতো টুর্নামেন্টে প্রতিটা রানই গুরুত্বপূর্ণ। ম্যাচে তখন উত্তেজনা চরমে ছিল, এটা ঠিক। কিন্তু তাই বলে বাইরে থেকে পিচে চলে আসা কি ঠিক? মনে হয় না এটা গ্রহণযোগ্য।’

এদিকে আইপিএলে চেন্নাইয়ের কোচের দায়িত্বে থাকা সাবেক কিউই তারকা ক্রিকেটার স্টিফেন ফ্লেমিং আম্পায়ারদের দুই রকম সিদ্ধান্তের যথার্থতা জানার আগ্রহই ধোনির মাঠে প্রবেশের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ম্যাচের পর ঘটনা নিয়ে নিজের বক্তব্য তুলে ধরতে গিয়ে সতর্ক মন্তব্য করেন ধোনিদের কোচ। তবে ধোনির মাঠে ঢুকে যাওয়াটা ঠিক হয়নি জানিয়ে ফ্লেমিং বলেন, ‘আসলে ওই সিদ্ধান্তটা কেন পরিবর্তন করা হলো, সেটা নিয়ে এম এস (ধোনি) বেশ ক্ষিপ্ত ছিল। আম্পায়ারদের এমন একটা সিদ্ধান্তে স্বচ্ছতার অভাব ছিল। ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ ওই সময়ে ব্যাপারটার স্পষ্ট ব্যাখ্যা জানতে মাঠে গিয়েছিল সে। এটি আসলে একটু অস্বাভাবিকই। তবে ধোনি যথেষ্ট বিচক্ষণ। এ জন্য তাকে নিশ্চিতভাবেই বহুদিন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে।’