কোহলিকে বিনয়ী হওয়ার পরামর্শ বোর্ডের!
কিছুদিন আগে এক ভারতীয় মন্তব্য করেছিলেন, ভারতীয়দের চেয়ে তিনি ইংলিশ এবং অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং দেখতে বেশি পছন্দ করেন। এতেই চটেছিলেন বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান এবং ভারতীয় দলের অধিনায়ক বিরাট কোহলি। তাঁকে ভারত ছেড়ে অন্য দেশে যাওয়ার কথা বলেছিলেন তিনি। এমন তীর্যক মন্তব্যে সমালোচিতও হয়েছেন কোহলি। এমনকি গণমাধ্যম এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করার জন্য কোহলিকে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাহী কমিটি থেকে উপদেশ দেওয়া হয়েছে।
আগামী ২১ নভেম্বর ভারতের অস্ট্রেলিয়া সিরিজ শুরু হচ্ছে টি-টোয়েন্টি ম্যাচের মাধ্যমে। সফরের ঠিক আগেই জনসাধারণের সঙ্গে এমন আচরণ করায় কোহলিকে নম্রতার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাহী বোর্ড। গতকাল শুক্রবার অস্ট্রেলিয়া রওনা হওয়ার আগে কোহলির সঙ্গে নির্বাহী বোর্ডের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার হোয়াটস অ্যাপে জনসাধারণ এবং আচরণের বিষয়ে কথা হয়েছে। পরে মোবাইলে দুজনের কথোপকথন হয়। ভারতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে কোহলিকে লাভবান করবে এমন আচরণ সবসময় করার পরামর্শ দিয়েছেন সেই নির্বাহী কর্মকর্তা।
দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘তাঁকে গণমাধ্যম এবং সাধারণের প্রতি আরো বিনয়ী হতে বলেছি।’ তবে এমন উপদেশের প্রতিক্রিয়া কী ছিল সেটি জানা না গেলেও কোহলি গত বৃহস্পতিবারের প্রেস কনফারেন্সে বুঝিয়েছেন, বিষয়টি বেশ ভালোভাবেই আমলে নিয়েছেন তিনি।
গত সপ্তাহে কোহলি তাঁর মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনে ভক্তদের সঙ্গে মত বিনিময় করছিলেন। এমন সময় একজন মন্তব্য করেন, ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের চেয়ে তাঁর নাকি অস্ট্রেলীয় এবং ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং বেশি পছন্দ। সেখানে মেজাজ ধরে রাখতে পারেননি কোহলি। তিনি মন্তব্য করেন, ‘তাহলে আমি মনে করি না আপনার ভারতে বাস করা উচিত। আপনি আমাদের দেশে বাস করে কেন অন্য দেশকে ভালোবাসবেন?’ কোহলির এমন বেফাঁস মন্তব্যে তাঁর সমালোচনা করেছেন অনেক সতীর্থ এবং সমালোচক। ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলে কোহলির মন্তব্যের ব্যাপারে বলেন, ‘বিখ্যাত তারকাদের কাছ থেকে এমন কথা শোনা যায়। এই কথাগুলো তারা (সমালোচক) শুনতে চায়। তবে এটি থেকে বিখ্যাতদের বেরিয়ে আসতে হবে।’
কোহলিকে নিয়ে নির্বাহী বোর্ডের এত চিন্তার কারণ হলো, ইতিমধ্যে তিনি অনেকবার গণমাধ্যমে সমালোচিত হয়েছেন। এমনকি ইংল্যান্ড সফরের ম্যাচ শেষে কোচ রবি শাস্ত্রীর ‘সেরা ভারতীয় একাদশের ব্যাপারে মন্তব্য’ সংক্রান্ত প্রশ্নে এক সাংবাদিকের সঙ্গে বাক-বিতণ্ডায় জড়ান কোহলি। দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে ১১ জন নির্বাচনে বারবার পরিবর্তনের ব্যাপারে একজন সাংবাদিক জিজ্ঞেস করলে তার সঙ্গেও উত্তেজিত আচরণ করেন তিনি।
অস্ট্রেলিয়া সফরের আগে কোহলির এমন মেজাজ দেখতে চাইবে না বোর্ড। কারণ, ২০০৮ সালে মাঙ্কিগেট ঘটনায় হরভজন সিং অভিযুক্ত হয়েছিলেন অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসকে বাঁদর বলার কারণে। সেই থেকে বিরোধের শুরু। এরপরে খুব সাম্প্রতিক সময়েও বিরোধ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল দুই দলের মাঝে। গত বছর ব্যাঙ্গালোর টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ রিভিউ ব্যবহার করবেন কি না এমন সিদ্ধান্তের জন্য তাঁর খেলোয়াড়দের বারান্দায় তাকালে কোহলি স্মিথের সিদ্ধান্তহীনতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ফলে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয় দুই দলের মধ্যে। কোহলিকে ক্ষমা চাইতে বলবেন কি না এমন প্রশ্নে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রধান জেমস সুদারল্যান্ডকে স্মিথ উত্তর দিয়েছিলেন, ‘হয়তো কোহলি জানে না কীভাবে ক্ষমা চাইতে হয়।’
আগামী ২১ নভেম্বর বুধবার থেকে ভারতের অস্ট্রেলিয়া মিশন শুরু হচ্ছে। যখন দুই দলের সম্পর্ক একটু শীতল সময় পার করছে, তখন সাবধানতার জন্য কোহলিকে উপদেশ দেওয়ার কথা ভাবতেই পারে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড।