ম্যাচ শেষে ফিল সিমন্সের দিকে তাকানোর সময়টা কি একটু হলেও পাওয়া গিয়েছিল? যদি তাকিয়ে থাকেন, তবে আফগান কোচের চোখেমুখে একটা তৃপ্তির ছটা কিন্তু চোখে পড়তেই পারে। তৃপ্ত হলেও দোষ করবেন না সাবেক এই ক্যারিবীয় অলরাউন্ডার। বাংলাদেশ দলের কোচ কিন্তু হতে পারতেন তিনিও!

আগে থেকেই সিমন্স ছিলেন আফগানিস্তানের ব্যাটিং কোচ। মাঝে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সঙ্গে এই সাবেক ক্যারিবীয় বসেছিলেন চূড়ান্ত সাক্ষাৎকারেও। তবে শেষমেশ বিসিবি আর ডাকেনি। মাশরাফিদের কোচ হতে পারেননি, তবে এ সুযোগে সিমন্স হয়ে গিয়েছিলেন আফগানিস্তানের কোচ।

অন্যদিকে প্রায় আট মাস কোচবিহীন বাংলাদেশ দল। ডাগআউটে বসে সিমন্সেরই একসময়ের জাতীয় দলের সতীর্থ কোর্টনি ওয়ালশকে গোমরা মুখে চেয়ে চেয়ে দেখতে হয়েছে দলের পরাজয় সঙ্গে সিরিজ হারটাও। অথচ এই ওয়ালশ কিন্তু নিদাহাস ট্রফিতে বাংলাদেশ দলের কোচও ছিলেন!

কোচটাও দেখা যাচ্ছে খুব বড় কোনো সমস্যা নয়। ভারপ্রাপ্ত  ওয়ালশের অধীনেই কিন্তু শ্রীলঙ্কার মাঠে ‘রানার্সআপ’ হয়েছিল বাংলাদেশ। আর এবার কি না সেই দলটাই ভারতের মাঠে ‘স্বাগতিক’ আফগানদের কাছে হেরে গেল সিরিজ!

দেরাদুনে চোখ রাখা সব দর্শকই একটা প্রশ্ন এখন তুলতেই পারেন। ক্রিকেটটা আগে খেলা শুরু করেছে কে? বাংলাদেশ না আফগানরা! অন্তত মাঠের শরীরী ভাষায় এগিয়ে ছিল ভারতের মাঠে বাংলাদেশকে আতিথ্য দেওয়া আফগানরাই। যেন নতুন এক আনকোরা দলের মুখোমুখি হয়েছে আফগানিস্তান!

এই ‘আত্মবিশ্বাসের’ জায়গাটাতেই বড্ড পিছিয়েছে সাকিব আল হাসানের দল। ক্রিকেটারদের মাঠে হাঁটাচলার মধ্যেই টের পাওয়া যাচ্ছিল এক অজানা ভয়ে ভীত তাঁরা। কে বা কি সেই ভয়?  

আতঙ্কের কথা আসলেই সবার আগে ভেসে আসছে একটি নাম। নামটা ‘রশিদ খান’। দেরাদুনের মাঠে বাংলাদেশ দলের ব্যর্থতাকে ছাপিয়ে রশিদের সফলতার গল্পই উঠে আসছে বেশি। আসবেই বা না কেন, দুই ম্যাচে তিনটি আর চারটি মোট সাত উইকেট নিয়ে সাকিবদের ধসিয়েছেন ১৯ বছর বয়সী এই তরুণ!

কিন্তু ত্রাসটা তো তিনি আজ থেকে ছড়ানো শুরু করেননি। শেষ বছর চারেক ধরেই রশিদের স্পিনে জব্দ হয়ে আসছে ব্যাটসম্যানরা। ২০১৬ সালে বাংলাদেশের মাটিতেই তামিমদের ভুগিয়ে ছেড়েছিলেন এই লেগস্পিনার।

সিরিজটা তখনো মাঠেই গড়ায়নি, এর আগেই ‘রশিদ’ জুজু তাড়িয়ে বেড়ানো শুরু করেছিল বাংলাদেশকে। তার ওপরে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) সবাইকে কাঁপিয়েই ভারতের মাঠে বাংলাদেশের মুখোমুখি হয়েছিলেন রশিদ। আর সেখানেই যেন লড়াইটা হয়ে গেছে ‘রশিদ বনাম বাংলাদেশ’!

অথচ এই রশিদের প্রসঙ্গে যতবার এসেছে, বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা বলেছেন তাঁরা রয়েছেন সতর্ক। কিন্তু রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক মাঠে দেখা গেল না সেই ‘সতর্কতার’ ছিটেফোঁটাও। সবাইকে মোটামুটি মোকাবিলা করতে পারলেও রশিদ আসলেই একসঙ্গে গুটিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ দল।

প্রথম ম্যাচে তবুও এতটা ভয়ানক ছিলেন না ডানহাতি স্পিনার। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব, তামিম ইকবাল আর মোসাদ্দেককে এক ওভারে ফিরিয়ে দেওয়ার পর সৌম্যকে ফিরিয়েছিলেন রশিদ।

এত দিন ধরে প্রচলিত ছিল ‘বনের বাঘে নয়, মনের বাঘে খায়’। যদিও সিরিজ হারিয়ে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার শঙ্কায় থাকা বাংলাদেশ দলকে দেখলে বদলে ফেলে বলতে হবে, ‘মনের রশিদও খায়, মাঠের রশিদও খায়’।

আগামীকাল বৃহস্পতিবার সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ মাঠে নামবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে। এ ম্যাচের আগে বাংলাদেশি ভক্তদের দাবি থাকবে হয়তো বা একটাই। যে করেই হোক চুনকাম থেকে বাঁচো। আর তেমনটা করতে হলে ‘মনের রশিদের’ মতো মাহমুদউল্লাহদের সামলে নিতে হবে ‘মাঠের রশিদ’কেও!