‘ক্লান্ত’ ভিলিয়ার্স বিদায় জানালেন ক্রিকেটকে
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়া শহরের হাই পারফর্মেন্স সেন্টার। পুরো দেশজুড়ে জনপ্রিয় সব খেলাই শেখানো হয় এখানে। ১৪ বছর আগে নিজের ক্রিকেট ক্যারিয়ারটা হাই পারফরম্যান্স সেন্টারের টাকস ক্রিকেট ক্লাবেই শুরু করেছিলেন এবি ডি ভিলিয়ার্স। এবার বিদায়ের ঘোষণাটাও জানালেন সেখান থেকেই। দক্ষিণ আফ্রিকার জার্সিতে আর দেখা যাচ্ছেনা ভিলিয়ার্সকে।
ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর হয়ে ভিলিয়ার্স দুর্দান্ত এক মৌসুম কাটালেও দল যেতে পারেনি শেষ চারে। জাতীয় দলের জার্সিতে নিজে সফল হলেও দলকে এনে দিতে পারেননি বিশ্বকাপ। ২০১১ আর ২০১৫ দুই বিশ্বকাপেই বিদায় নিতে হয়েছে হতাশা নিয়েই। ভিলিয়ার্স খুব অনুমিতভাবেই ছিলেন আসছে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের প্রোটিয়া দলে।
তবে বিশ্বকাপের ঠিক এক বছর আগে বিদায়ের ঘোষণা জানিয়ে দিলেন ভিলিয়ার্স। সব মিলিয়ে বড্ড ‘ক্লান্ত’ তিনি। ফেসবুকে দেয়া ভিডিওতে ৩৪ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার নিজেই বলেছেন এমনটা, জানিয়েছেন অন্যদের সুযোগ করে দিতেই তাঁর এমন সরে যাওয়া।
যেই মাঠে হয়েছিল তাঁর ক্রিকেটের হাতেখড়ি সেই মাঠে দাঁড়িয়েই নিজের বিদায়ের ঘোষণা দিয়েছেন ভিলিয়ার্স। ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে বলেছেন, ‘আমি সব ধরনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে ১১৪টি টেস্ট ম্যাচ, ২২৮টি ওয়ানডে আর ৭৮টি টি-টোয়েন্টি খেলার পর আমার মনে হয়েছে এবার বাকিদের পালা। সত্যি বলতে আমি ভীষণ ক্লান্তও।’
শুধু আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নয়, ভিলিয়ার্স সন্দিহান তাঁর ঘরোয়া বা ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে অংশগ্রহণ নিয়েও। নিজের ঘরোয়া দল ‘টাইটানস’ হয়ে মাঠে নাও দেখা মিলতে পারে এই ব্যাটসম্যানের, ‘বাইরের দেশগুলোর লিগগুলো নিয়ে আমার কোনো পরিকল্পনা নেই। এমনকি আমি টাইটানসের হয়ে মাঠে নামার ব্যাপারেও সন্দিহান। ফাফ দু প্লেসি ও তাঁর দলের প্রতি আমার পূর্ণ সমর্থন থাকবে।’
ভিলিয়ার্সের এমন বিদায়ে প্রোটিয়া ব্যাটিং নিঃসন্দেহে হারাতে যাচ্ছে তাদের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানকে। ১১৪ টেস্টে ৫০.৬৬ গড়ে করেছেন ৮ হাজার ৭৬৫ রান, ২২টি শতক আর ৪৬টি অর্ধশতকের সঙ্গে দ্বিশতকও রয়েছে দুটি।
২২৮ ওয়ানডের রানের ঘরটার দিকে তাকালে একটু আফসোস করলেও পারেন ডি ভিলিয়ার্স। রানসংখ্যা ৯ হাজার ৫৭৭। ৫৩.৫ গড়ে ব্যাটিংটা আর কটা দিন, অন্তত ২০১৯ বিশ্বকাপ পর্যন্ত চালিয়ে গেলেও ছুঁয়ে দিতেন ১২তম ব্যাটসম্যান হিসেবে ১০ হাজার রানের মাইলফলক।
সে অবশ্য আর হচ্ছেনা, তবে ওয়ানডেতে দ্রুততম শতকের রেকর্ডটা বগলদাবা করেই অবসরে যাচ্ছেন ভিলিয়ার্স। ৩০ বলে হাঁকানো সেই শতকে সঙ্গে পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটে আরও ২৪টি শতক রয়েছে সাবেক এই অধিনায়কের। সঙ্গে ৫৩টি অর্ধশতক। ৭৮টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ১হাজার ৬৭২ রানের সঙ্গে তাঁর ঝুলিতে রয়েছে দশটি অর্ধশতক।
ভদ্র-নম্র ও বিনয়ী ক্রিকেটার হিসেবে ভিলিয়ার্সের সুনাম ছিল পুরো ক্রিকেট দুনিয়া জুড়ে। যাওয়ার আগে তাই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভক্তদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাতে ভোলেননি ‘৩৬০ ডিগ্রি’ নামে পরিচিত এই ব্যাটসম্যান, ‘আমার আর কিছু পাওয়ার নেই। আমার সামর্থ্য কমে যাচ্ছে দিনদিন তাই সরে দাঁড়ানোর জন্য এটাই সেরা সময় মনে হয়েছে। সবকিছুরই তো শেষ আছে। দক্ষিণ আফ্রিকা ও ক্রিকেট বিশ্বের সকল ভক্ত ও সমর্থকদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা থাকল।’