গোল করেও উদযাপন করেননি যারা!
ফুটবল গোলের খেলা। দলের হয়ে গোল করতে পারলেই ফুটবলারদের উদযাপন মাঝে মাঝে ছাড়িয়ে যায় মাত্রা। কিন্তু দারুণ সময়ে বেশ মূল্যবান গোল করেও অনেক ফুটবলারই মাতেননি গোল পাওয়ার উল্লাসে, ভাসেননি দলকে এগিয়ে নেয়ার আনন্দে। সে করবেন কীভাবে? বল যে জালে জড়িয়েছেন সে জাল যে একসময় ছিল তাঁর নিজের দলের জালই!
সাবেক ক্লাবের বিপক্ষে গোল পেয়েও উদযাপন না করা সে রকম দশ ফুটবলারকে নিয়ে এই আয়োজন:
ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো (মাদ্রিদ বনাম ম্যান ইউ):
ছয় ছয়টা বছর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের তীরে কাটিয়ে ২০০৯ সালে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো পাড়ি জমিয়েছিলেন মাদ্রিদের বন্দরে। অবশ্য আগেই কথা দিয়েছিলেন ইংলিশ ক্লাবটির বিপক্ষে গোল করে কখনোই উপযাপনে করবেন না তিনি। কথা রেখেছিলেনও রোনালদো, ২০১২-১৩ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ মৌসুমে ওল্ড ট্রাফোর্ডে যখন প্রতিপক্ষ হয়ে ফিরেছিলেন দেখা পেয়েছিলেন গোলের। তবে প্রাক্তন ভক্ত-দর্শকদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে আর উদযাপন করেননি সে গোল। পরে মাদ্রিদের ঘর স্যান্টিয়াগো বার্নাব্যুতেও গোল করে সিআর সেভেন ছিলেন নিশ্চুপই।
মোহামেদ সালাহ (লিভারপুল বনাম রোমা ও চেলসি):
বিশ্ব ফুটবলকে পায়ের জাদুতে মোহামেদ সালাহ শেষ এক বছর ধরে মাতিয়েই রেখেছেন বলা চলে। ফুটবল মাঠের মত তাঁর হৃদয়টাও যে অনেক বড় সে বেশ ভালই বুঝিয়ে দিয়েছেন লিভারপুলের এই ফরোয়ার্ড। দিন কয়েক আগেই নিজের সাবেক ক্লাব এফসি রোমার বিপক্ষে অ্যানফিল্ডে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে দেখা পেয়েছিলেন জোড়া গোলের। তবে নিজের ‘পর’ হয়ে যাওয়া ‘ঘর’কে সম্মান জানিয়ে করেননি উদযাপন। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগেও নিজের আগের দল চেলসির হয়ে গোল করেও সালাহ মাতেননি উন্মাদনায়।
দানি আলভেস (বার্সেলোনা বনাম সেভিয়া):
সেভিয়ায় ছয় বছর কাটিয়ে দানি আলভেস তখন বার্সেলোনা শিবিরে নতুন। পর হয়ে যাওয়া দলের বিপক্ষে ২০১৩ সালে গোল করেও এই রাইট ব্যাক করেননি কোন উল্লাস। উল্টো দারুণ এক হেডে দেয়া গোলের পর কর্নারের পতাকাটার সামনে যেয়ে দুই হাত বুকের সঙ্গে মিশিয়ে নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন নিশ্চুপ।
হামেস রদ্রিগেজ (বায়ার্ন বনাম রিয়াল):
এই তো গত মঙ্গলবারের কথা। চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগের হামেস রদ্রিগেজ ফের নেমেছিলেন স্যান্টিয়াগো বার্নাব্যুর মাঠে। তবে ২০১৪ সালে যোগ দেয়া ক্লাব মাদ্রিদের জার্সিতে নয়। স্প্যানিশ ক্লাবটি কলম্বিয়ার এই তারকাকে ধারে খেলতে পাঠিয়েছে বায়ার্ন মিউনিখে। সেই জার্মান ক্লাবের হয়েই গোল পেয়েছিলেন এই উইঙ্গার। গোলের পর উদযাপন তো দূরের কথা, যেন কোন অপরাধ করে ফেলেছেন প্রাক্তন দলের সঙ্গে এমন ভঙ্গিতে মাঠে থাকা দর্শকদের কাছে হাতজোড় করে ক্ষমা চেয়েছেন ২৬ বয়সী রদ্রিগেজ।
ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ড (চেলসি বনাম ম্যান সিটি):
প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে খেলেছিলেন যে দলে ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ডকে ২০১৪ সালে এসে নামতে হয়েছে তাদেরই বিপক্ষে। ১৩ বছর ধরে চেলসির জার্সিতে খেলে হয়ে গিয়েছিলেন ক্লাবটিরই প্রতিশব্দ। তবে শেষমেশ ম্যানচেস্টার সিটির কাছে ইংলিশ মিডফিল্ডারকে বেচে দিয়েছিল লন্ডনের ক্লাবটি। আর প্রাক্তন ক্লাবের বিপক্ষে মাঠে নেমেই গোলের দেখা পেয়েছিলেন। তবে করেননি উদযাপন, আশেপাশের সবাই যখন ব্যস্ত উল্লাসে তখন চুপচাপ মাঠের মাঝখানে ফিরেছেন ল্যাম্পার্ড।
মারিও গোতজে (বায়ার্ন বনাম বুরুশিয়া):
জার্মান মিডফিল্ডার মারিও গোতজের ক্যারিয়ারটাই শুরু হয়েছিল বুন্দেসলিগার ক্লাব দল বুরুশিয়ার হয়ে। সেই বুরুশিয়া ছেড়ে ২০১৩ সালে গিয়েছিলেন জার্মান জায়ান্ট দল বায়ার্ন মিউনিখ শিবিরে। গোলও পেয়েছিলেন প্রাক্তন ক্লাবের বিপক্ষে। তবে রাজি হননি উপযাপন করতে। অবশ্য ২০১৬ মৌসুমে আবারও ফিরে এখনও সেই বুরুশিয়ার হয়েই মাঠে নামছেন ২০১৪ বিশ্বকাপে জার্মানিকে শিরোপা এনে দেয়া ফাইনালের একমাত্র গোলদাতা।
গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা (রোমা বনাম ফিওরেন্তিনা):
সাবেক এই আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডের ঘরবাড়িই হয়ে গিয়েছিল ইতালীয় ক্লাব ফিওরেন্তিনা। ক্লাবটির আর্মব্যান্ডও ছেপেছিল গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতার হাতে। তবে ফিওরেন্তিনা ছেড়ে রোমার ঘরে চলে যেতে হয়েছিল তাঁকে। আর প্রাক্তন দলের বিপক্ষে গোল করে উদযাপন তো করেননিই বাতিস্তুতা, রোমা সতীর্থদের কোলে চড়ে ভেঙ্গে পড়েছিলেন কান্নায়।
রবিন ভ্যান পার্সি (ম্যানইউ বনাম আর্সেনাল):
আর্সেনাল ছেড়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের জার্সিতে মাঠে নামার আগে রবিন ভ্যান পার্সি বলেছিলেন গোল করবেন তিনি সাবেক ক্লাবের বিপক্ষে, তবে মাতবেন না উদযাপনে। আর্সেনালের বিপক্ষে তাঁর পা খুঁজে পেয়েছিল জালের দিশা কিন্তু দুহাত প্রসারিত করে কিংবা লাফিয়ে উপযাদপনে ব্যস্ত হতে দেখা যায়নি ডাচ ফরোয়ার্ডকে।
স্তেফান এল শারাওই (এসি মিলান বনাম জেনোয়া):
জেনোয়ার হয়েই স্তেফান এল শারাওই শুরু করেছিলেন পেশাদারি ফুটবল। দল বদলের পাল্লায় পড়ে যেতে হয়েছিল এসি মিলান শিবিরে তবে জেনোয়ার প্রতি ভালবাসা কমেনি ইতালির এই উইঙ্গারের। তাই তো গোল করেও মাতেননি উল্লাসে। দুই হাত দিয়ে ইশারা করে বলছিলেন যেন ‘আমি স্যরি।’
আলভেরো মোরাতা (জুভেন্টাস বনাম রিয়াল):
রিয়াল মাদ্রিদের একাডেমিতেই বড় হয়েছেন স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড আলভেরো মোরাতা। তবে মূল দলের হয়ে ঠিকঠাক মাঠে নামার সুযোগ পাচ্ছেন না বলে তাঁকে বেচে দেয়া হয়েছিল ইতালীয় ক্লাব জুভেন্টাসের কাছে। সেই জুভেন্টাসের জার্সি গায়ে মাদ্রিদের জালেই জড়িয়েছিলেন বল। তবে নিশ্চুপ মোরাতা যাননি ছোটবেলার ক্লাবের বিপক্ষে কোন উদযাপনে। পরে আবারও মাদ্রিদে ফিরেছিলেন বটে তবে টেকেননি বেশিদিন। বর্তমানে স্পেন দলের সাথে চেলসির আক্রমণভাগও সামলাচ্ছেন ২৫ বছর বয়সী এই ফুটবলার।