১০ শর্তে সীমিত পরিসরে খেলাধুলা শুরু হচ্ছে
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল খেলাধুলা। শেষ পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে খেলাধুলা আয়োজন ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়।
আজ সোমবার এক বিবৃতিতে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল জানিয়েছেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে খেলাধুলা আয়োজন ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।
গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পর সাধারণ ছুটির সময় থেকে খেলাধুলা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বন্ধ রেখেছিল সরকার। তবে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় সম্প্রতি খেলাধুলা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু করার বিষয়ে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে মতামত চেয়ে চিঠি পাঠায়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ১০ শর্তে সীমিত আকারে খেলাধুলা আয়োজন ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালুর করার বিষয়ে মত দেয়।
এ ব্যাপারে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, ‘বিশ্বের অনেক দেশ করোনা সংক্রমণ কমে যাওয়ায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে খেলাধুলা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করেছে। আমাদের দেশেও করোনা সংক্রমণের হার কমছে। তাই আমাদের দেশেও খেলাধুলা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু করার বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ১০টি শর্তে সীমিত পরিসরে খেলাধুলা আয়োজন ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালুর বিষয়ে মতামত দিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া শর্ত মেনে সব পর্যায়ের খেলাধুলা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সীমিত আকারে চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া ১০টি শর্ত :
১। খেলাধুলা শুরুর আগে খেলার মাঠ ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে করোনা প্রতিরোধক সরঞ্জাম মাস্ক, গ্লোভস, জীবাণুনাশক এবং নন-কন্ট্যাক্ট ইনফ্রারেড থার্মোমিটার সংরক্ষণ করে সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কাজের পরিকল্পনা করতে করতে হবে। তা তদারকি ও বাস্তবায়নের জন্য একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে দায়িত্ব দিলে ভালো হয়। সংশ্লিষ্ট সব কর্মীকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
২। সীমিত আকারে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ও খেলাধুলার আয়োজন করতে হবে।
৩। খেলোয়াড়, কোচ, ম্যানেজমেন্ট কমিটি এবং খেলাধুলা সংশ্লিষ্ট সবার নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে।
৪। প্রশিক্ষণকালীন খেলোয়াড়দের ক্যাম্পে অবস্থানের সময় স্বাস্থ্য বিধি মেনে থাকার ব্যবস্থা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। খাওয়া দাওয়ার ব্যপারে পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্য সম্মত খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজার রেখে খাবার গ্রহণ ও খাবারের ব্যবহৃত থালা বাসন পরিষ্কার ও জীনাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা করতে হবে। সম্ভব হলে ডিসপোজেবল প্লেট ব্যবহার করাই ভালো। ধূমপান নিরুৎসাহিত করতে হবে। খেলোয়াড়দের ঘুম, বিশ্রাম এবং মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি নজর রাখতে হবে। অনলাইনের মাধ্যমে পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে।
৫। খেলা ও প্রশিক্ষণের সময় ব্যক্তিগত পানির বোতল ও তোয়ালে ব্যবহার করতে হবে। ব্যক্তিগত সরঞ্জাম এবং জামাকাপড় নিজের ব্যাগে রাখতে হবে। টিস্যু, রুমাল বা অন্যান্য ব্যবহৃত উপকরণ যেমন প্লাস্টার, ব্যান্ডেজ ইত্যাদি তাৎক্ষণিকভাবে উপযুক্ত পাত্রে (মুখবন্ধ ময়লার পাত্র) ফেলে দিতে হবে।
৬। অনেক জনসমাগম না করে সীমিত আকারে খেলাধুলার আয়োজন করা যেতে পারে। মাঠে ঢোকা এবং বের হওয়ার সময় দর্শকদের সারিবদ্ধভাবে এক মিটারেরও বেশি দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। মাঠে ঢোকার পর নির্দিষ্ট দূরত্ব (এক মিটার) বজায় রেখে বসার ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি দুজন দর্শকের মধ্যে এক সিট খালি রাখতে হবে।
৭। খেলার মাঠের ঢোকার পথে খেলোয়াড়, কোচ, ম্যানেজমেন্ট কমিটি এবং দর্শনার্থীদের শরীরের তাপমাত্রা মাপার ব্যবস্থা রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে কারো শরীরের তাপমাত্রা ৯৮.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি হলে তাদের মাঠে ঢোকা নিষিদ্ধ করে নিকটস্থ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে পাঠাতে হবে।
৮। খেলোয়াড়, কোচ এবং ম্যানেজমেন্ট কমিটির মধ্যে করোনা সন্দেহভাজন কোনো রোগী থাকলে তাৎক্ষিণকভাবে আইসোলেশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৯। খেলার মাঠের আবর্জনা প্রতিদিন পরিষ্কার করতে হবে এবং আবর্জনা সংরক্ষণকারী পাত্র প্রতিদিন জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
১০। স্টেডিয়ামে আসা সবাইকে স্বাস্থ্যে বিষয়ে সচেতন করার জন্য সহজে দৃশ্যমান হয় এমন স্থানে বিলবোর্ড, রেডিও, ভিডিও ও পোস্টারের মাধ্যমে সচেতনতামূলক বক্তব্য প্রচার করার ব্যবস্থা করতে হবে।
গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পর সাধারণ ছুটির সময় থেকে খেলাধুলা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বন্ধ রেখেছিল সরকার।