‘সব দিনই ভালোবাসার, সে যেন এভাবেই ১০০ বছর ভালোবাসে’
আজ ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। এবার ফাগুনের সঙ্গে রঙ জুড়েছে ভালোবাসারও। নিরাভরণ বৃক্ষে কচি কিশলয় জেগে ওঠার আভাসে কোকিলের কুহু কুহু ডাক বলছে—‘বাতাসে বহিছে প্রেম, নয়নে লাগিল নেশা, কারা যে ডাকিল পিছে, বসন্ত এসে গেছে, বসন্ত এসে গেছে।’
পহেলা ফাল্গুন আর ভ্যালেন্টাইন’স ডে—দুটি দিনকে এক করে দিয়েছে বাংলা একাডেমির পঞ্জিকা সংস্কার কমিটি। প্রচলিত বাংলা বর্ষপঞ্জি সংস্কার করে ত্রুটিমুক্ত ও বিজ্ঞানসম্মত করে গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জির সঙ্গে সমন্বয় করতেই একই দিনে বসন্ত ও প্রেমের রং লাগছে মানুষের মনে।
বসন্তের নৈসর্গিক বর্ণচ্ছটায় প্রকৃতি সাজছে নতুনভাবে। একই সঙ্গে ভালোবাসার রঙে সাজছে সবার প্রিয় মানুষগুলো। তবে, ক্রিকেটারদের এ বিশেষ দিনটি কাটছে ব্যাট-বলের সঙ্গেই। ফাল্গুনের প্রথম দিনে চলমান বিপিএলের এলিমিনেটর ও কোয়ালিফায়ার–রোমাঞ্চে বুঁদ হয়ে আছেন অনেক ক্রিকেটার। অনেকের দিন কাটছে আবার পরিবারের সঙ্গেই। তবে সবার মনেই যে ভালোবাসা দোলা দিচ্ছে, তা স্পষ্ট ক্রিকেটারদের জীবনসঙ্গীনীদের মুখে। কয়েকজন ক্রিকেটারের স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এ ব্যস্ততার মাঝেও প্রিয় মানুষের সঙ্গে ভালোবাসার দিনটি কীভাবে উদ্যাপন করতেন তাঁরা। ক্রিকেটারদের স্ত্রীরদের কাছ থেকে সে গল্পই শোনার চেষ্টা করেছে এনটিভি অনলাইন।
রাবেয়া আখতার প্রীতি (ক্রিকেটার মেহেদী হাসান মিরাজের স্ত্রী)
ভালোবাসার জন্য আসলে আলাদা কোনো দিন হয় না। প্রতিদিনই ভালোবাসার দিন। তবুও বিশেষভাবে যেহেতু পালন করা হয়, এ দিনে আমি চাইব—উনি এখন যেমন আছেন, সবসময় যেন এমনই থাকেন। আমাকে যেন এভাবেই ভালোবাসেন। আমাদের বিয়ের চেয়ে মনে হয় প্রেমের জীবনটাই বেশি উপভোগ্য ছিল। অনেক দারুণ দারুণ স্মৃতি ছিল। যদিও খুব একটা ভালেন্টাইন’স ডে-তে উনি কাছে ছিলেন না। তবে, একবার ভ্যালেন্টাইন’স ডে-তে আমাকে ঘুরতে নিয়ে গিয়েছিলেন। খুলনার একটা পার্কে আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন। ফুল দিয়েছিলেন আমাকে। এটা মনে হয় ২০১৬ সালে। ওই দিনে আমাকে ফুল দিয়ে ভালোবাসার কথা জানিয়েছিলেন। বিয়ের পর ভ্যালেন্টাইন’স ডে খুব একটা পাইনি। খেলা নিয়ে তিনি ব্যস্ত থাকতেন। বিশেষ দিনগুলোতে খেলার জন্য দূরে থাকলে তাঁকে অবশ্যই মিস করি। মনে হয় যে, আজ তিনি থাকলে আমরা ঘুরতে যেতাম। কোথাও ডিনারে যেতাম। তবে, এসব নিয়ে আক্ষেপ নেই। সবকিছুর সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছি। বরং এ জীবনই উপভোগ করছি। মিরাজ যেন আমাকে সবসময় ভালোবাসেন, এটাই চাই। সবাই তাঁকে পছন্দ করে, এটা খুব ভালো লাগে। তবে, মেয়ে ভক্তেরা কাছে এসে ছবি তুললে কিছুটা জেলাস হই। ওঁকে বলে দিই—একটু দূরুত্ব মেনে ছবি তুলবেন (হাসি)। তবে, সবকিছু মিলিয়ে একজন ক্রিকেটারের বউ হিসেবে জীবন খুব উপভোগ করছি। এভাবেই আমরা যেন সারা জীবন থাকতে পারি। এ বিশেষ দিনে এটাই কামনা করি।
অর্পা রহমান (ক্রিকেটার সাব্বির রহমানের স্ত্রী)
আমি ওর স্ত্রী। আমি সবসময় ওর ভালো চাই। ওকে বাইরে থেকে যেমনটা মনে হয়, আসলে সে তেমন নয়। ও অনেক ভালো মানুষ। এটা শুধু তার কাছের মানুষেরাই জানে কিংবা আমি জানি। বাইরের মানুষেরাও যেন ওকে বুঝতে পারে, এটা খুব করে চাই। সে যেন ভালোভাবে খেলে। ক্যারিয়ারটা যেন গুছিয়ে নিতে পারে। সবকিছু যেন ঠিক হয়ে যায়, এটাই চাওয়া। আর, আমাকে যেন সবসময় ভালোবাসে। গত আট বছর ধরে আমাকে যেভাবে ভালোবেসেছে, আগামী ১০০ বছরও যেন এভাবে ভালোবাসে। যদিও আমাদের ভালোবাসার দিন খুব একটা উদ্যাপন করা হয়নি। হয়তো ভালোবাসা দিবসের আগের দিন বা পরের দিন বের হয়েছি। কোথাও গেছি দুজনে। তবে, এ দিনটি খুব একটা হয়নি। বিয়ের আগে এসব সম্ভব হয়নি। তবে, বিয়ের পর ২০২১ সালে, মানে গত বছর ভালোবাসার দিনে আমার জন্য ফুল ও চকলেট নিয়ে এসেছিল। আমি খুব অবাক হয়েছিলাম।
মনিরা মনি (ক্রিকেটার নাসুম আহমেদের স্ত্রী)
ভালোবাসা দিবসে আমাদের তেমন বড় করে কিছু হয়নি। আমরা বেশির ভাগ সময় সাদামাটাই থাকার চেষ্টা করি। তবে, প্রতিবারই সে আমাকে উইশ করেছে। এ দিনটিতে নিজেদের মতো করে ভালোবাসার শুভেচ্ছা জানিয়েছে। বিয়ের আগে মনে আছে শুধু একবার পালন করেছে। একবার আমাকে গিফট করেছিল। ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়েছিল। আমাদের আড়াই বছরের মতো রিলেশন ছিল। সবসময়ই আমরা ভালো ছিলাম। ক্রিকেটারের বউ হিসেবে খুব সাদামাটা থাকলেও, আমার খুব ভালো লাগছে। এটা অনেকটা গর্বের। অনেকে ওর ভক্ত—এটা উপভোগ করি। তবে মাঝে মধ্যে একটু জেলাস লাগে। তবে, এসব উপভোগ করি। এ ভালোবাসা দিবসে নাসুমের প্রতি অনেক ভালোবাসা রইল। সে অনেক ভালো মনের মানুষ। আমাকে সে সম্মান করে। আমিও তাকে দ্বিগুণ সম্মান করতে চাই। ভালোবাসার দিবসে ওর দীর্ঘায়ু কামনা করি। সে যেন অনেক দূর যেতে পারে। ক্যারিয়ার লম্বা হয়, সেটা প্রত্যাশা করি। সবার ভালোবাসা নিয়েই আমরা বাঁচতে চাই।
তাসনিয়া আনোয়ার (ক্রিকেটার কামরুল ইসলাম রাব্বির স্ত্রী)
আমার এসএসসি পরীক্ষার সময় ছিল আমাদের প্রথম ভালোবাসা দিবস। গণিত পরীক্ষার আগে একটু ব্রেক পাওয়ায় আমি কোচিং ক্লাসের নাম করে দেখা করতে যাই। তখন আমাকে লাল গোলাপ উপহার দিয়েছিল, ভালোবাসার কথা বলেছিল। সঙ্গে চকলেটও দিয়েছিল। এরপর আমাকে একটা হীরার আংটি পরিয়ে দেয়। যেটা ছিল আমার জীবনের প্রথম হীরার অলংকার। দুঃখজনক হলো—বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন ওই আংটি চুরি হয়ে যায়। খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। আসলে এরপর যত কিছুই দেয় না কেন, প্রথম কিছু অনেক বিশেষ। রিংটি হারিয়ে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। এ ভালোবাসা দিবসে তার প্রতি আমার অনেক ভালোবাসা রইল। সে যেন ভালো খেলতে পারে, আর আমাকে ঠিক এভাবেই ভালোবাসে এটাই চাওয়া। সবাইকে ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা।
উম্মে আহমেদ শিশির ( বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের স্ত্রী)
আমরা দুজন দুজনকে প্রতিদিন, প্রতিটি মুহূর্ত মিস করি। বিশেষ দিনে খুব মনে হয়। বিশেষ দিনে বাচ্চারাও বাবাকে অনেক মিস করে। বড় মেয়ে অ্যালাইনা এখন সব বুঝে। সে তাঁর বাবাকে খুব মিস করে। আমরা দুজনে ব্যাপারটা মানিয়ে নিয়েছি। খেলার কারণে হয়তো ওর অনেক দূরে থাকতে হয়। এটা আমাদের মধ্যে সম্পর্ককে আরও শক্ত করেছে। দূরে থাকার কারণে অনুভূতিটাও আরও বেশি। আমরা সবসময় নিজেদের সময়গুলো উপভোগ করার চেষ্টা করি।’