নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। বিশ্বসেরা ক্রিকেটারদেরও একজন তিনি। দীর্ঘ ১৪ বছর বিশ্ব ক্রিকেটে ধাপিয়ে বেড়ানো মহাতারকার  জন্মদিন আজ। ১৯৮৭ সালের এই দিনে পৃথিবীর আলো দেখেছিলেন তিনি। শুভ জন্মদিন সাকিব আল হাসান।

১৯৮৭ সালের ২৪ মার্চ মাগুরা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন সাকিব। বাবা মাশরুর রেজা ছিলেন কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা। তিনি ছিলেন ফুটবলের ভক্ত। তাই চেয়েছিলেন ছেলে বড় হয়ে হোক ফুটবলার। কিন্তু ক্রিকেটের আজকের দেশসেরা তারকা ফুটবলার না হয়ে, হয়েছেন ক্রিকেটার। মাগুরার দুরন্ত ছেলেটি গ্রামাঞ্চলের ক্রিকেট খেলেই নজর কাড়েন এক আম্পায়ারের। সেখান থেকে তাঁকে নিয়ে আসা হয় মাগুরার ইসলামপুরপাড়া ক্লাবে। সেই আসার পর আর পেছনে ফিরে তাঁকাতে হয়নি তাঁকে।

এক পা, দু পা করে সেই ছোট্ট সাকিব হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের প্রাণ। হয়ে উঠেছেন ক্রিকেটের পোস্টার বয়, বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।

বাংলাদেশের জার্সিতে সাকিবের অভিষেক হয় ২০০৬ সালের ৬ আগস্ট, ওয়ানডে ক্রিকেট দিয়ে। মাত্র ১৯ বছর বয়সে অভিষেক হওয়া সেই তরুণের দৃষ্টির সীমারেখা কত দূর বিস্তৃত ছিল কে জানত তখন! সময়ের সঙ্গে সাকিব বুঝিয়ে দিয়েছেন কেন তিনি সবার সেরা।

ওয়ানডে অভিষেকের তিন মাস পরই পা রাখেন টি-টোয়েন্টিতে। এর পরের বছর ভারতের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক। এরপর ধীরে ধীরে সেরাদের সেরা হয়ে ওঠা। ২০০৯ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ওয়ানডেতে অলরাউন্ডার হিসেবে র‍্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে ওঠেন সাকিব। এরপর টেস্টেও সেরা অলরাউন্ডারের আসন দখল করেন।

২০১৫ সালের জানুয়ারিতে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে তিন ফরম্যাটেই সেরা অলরাউন্ডার হন সাকিব। এ ছাড়া দেশের জার্সিতে আরো বহু রেকর্ড নিজের করে নেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।

২০০৬ সাল থেকে খেলে আসা সাকিব ৫৬ টেস্ট খেলে ৩৯.৪০ গড়ে করেছেন ৩৮৬২ রান। যার মধ্যে আছে পাঁচটি সেঞ্চুরি ও ২৪টি হাফ সেঞ্চুরি। সাদা পোশাকে তাঁর সর্বোচ্চ ইনিংস ২১৭ রানের। বল হাতে ৯৫ ইনিংসে বল করে পেয়েছেন ২১০টি উইকেট। বোলিং গড় ৩১.১২ ও ইকোনমি ৩.০১ করে। ১০ উইকেট পেয়েছেন দুবার। পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ১৮ বার। এক ম্যাচে তাঁর সেরা বোলিং ফিগার ১২৪ রানে ১০ উইকেট। আর এক ইনিংসে ৩৬ রানের বিপরীতে সাত উইকেট।

ওয়ানডেতে ২০৬ ম্যাচে ব্যাট হাতে ৩৭.৮৬ গড়ে ছয় হাজার ৩২৩ রান করেছেন। যার মধ্যে নয়টি সেঞ্চুরি ও ৪৭টি হাফসেঞ্চুরি। এক ম্যাচে সর্বোচ্চ রান ১৩৪ (অপরাজিত)। আর ২০৩ ইনিংসে বল করে ৩০.২১ গড় ও ৪.৪৮ ইকোনমিতে নিয়েছেন ২৬০ উইকেট। এক ম্যাচে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন দুবার। সেরা বোলিং ফিগার ২৯ রানে পাঁচ উইকেট।

এ ছাড়া ৭৬টি টি-টোয়েন্টিতে এক হাজার ৫৬৭ রান করেছেন সাকিব। এর মধ্যে আছে নয়টি হাফসেঞ্চুরি। আর ৭৫ ইনিংসে বল করে নিয়েছেন ৯২ উইকেট। ইকোনমি ৬.৮১। সেরা বোলিং ফিগার ২০ রানের বিনিময়ে পাঁচ উইকেট।

গত বছর এই দিনে ইডেন গার্ডেন্সে ঐতিহাসিক ‘ফাইভ মিনিট বেল’ বাজিয়ে খেলা আইপিএলে খেলা শুরু করেছিলেন সাকিব। কিন্তু এবারের জন্মদিনটা তাঁর একদমই আলাদা। অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল করে ক্রিকেট থেকে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ তিনি। এখন পরিবারের সঙ্গেই কাটছে তাঁর সময়। তবে আজ জন্মদিনে পুরোপুরি একা তিনি। বিশ্বজুড়ে মরণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের একটি হোটেলে সেল্ফ আইসোলেটেড তিনি। নিজের বিশেষ দিনে পরিবার তো দূরে কাউকেই পাচ্ছেন না তিনি। তবুও তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা, ফিরে আসুক তাঁর সোনালি সময়।