মিরাজের লড়াইয়ের গল্প

কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে জাতীয় দলে জায়গা করে নিতে হয়েছে মেহেদী হাসান মিরাজকে। খুবই সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসা তরুণ এই অলরাউন্ডারের। বাংলাদেশের হয়ে গত কয়েক বছরে অসাধারণ সব গল্প লিখেছেন। শুরুর দিকের লড়াই ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার হওয়ার পথে নিজের যাত্রার কথা তুলে ধরেছেন তিনি।
সম্প্রতি ক্রীড়া সাংবাদিক নোমান মোহাম্মদের 'নটআউট নোমান' অনুষ্ঠানে মিরাজ বলেন, ‘আমার বাবা কখনো আমাকে ক্রিকেটার হিসেবে দেখতে চাননি। একজন সফল ক্রিকেটারের জীবন সম্পর্কে তাঁর কোনো ধারণা ছিল না। এমনকি জাতীয় ক্রিকেটাররা কতটা বিখ্যাত বা কতটা আয় করেন, এ বিষয়েও তাঁর ধারণা ছিল না। এ জন্য প্রথম দিকে ক্রিকেট খেলা আমার পক্ষে কঠিন ছিল। তবে আমি বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টে খেলতে পেরেছি, যা আমাকে সবচেয়ে বেশি উৎসাহিত করেছে নিজের পছন্দের খেলাটি চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে।’
মিরাজের ক্রিকেটার হওয়ার পথটি বদলে যায় অনূর্ধ্ব-১৪ দলের হয়ে খেলার সময়। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘২০১০ সালে ময়মনসিংহে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৪ টুর্নামেন্টের সময় আমার ক্রিকেটার হওয়ার পথটি বদলে যায়। আমি ওই ইভেন্টের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলাম এবং টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচে বিসিবির তৎকালীন সভাপতি মুস্তফা কামাল উপস্থিত ছিলেন।’

বিসিবি সেই টুর্নামেন্টে সেরা তিন ক্রিকেটারের প্রত্যেককে ২৫ হাজার টাকা পুরস্কার দিয়েছিল এবং সেরা ক্রিকেটারদের বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ডের মধ্যকার একটি টেস্ট ম্যাচ দেখার জন্য শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তরুণ ক্রিকেটারদের পাশাপাশি তাঁদের অভিভাবকদেরও সেই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত করা হয়েছিল।
সেই গল্প তুলে ধরে তরুণ এই অলরাউন্ডার বলেন, ‘আমার বাবা সেদিন শেরেবাংলার গ্যালারিতে উপস্থিত হয়েছিলেন। দেশের বৃহত্তম ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত একটি টেস্ট ম্যাচ দেখার পর তিনি আমাকে ক্রিকেট খেলার অনুমতি দিতে রাজি হয়েছিলেন। সেই ম্যাচ চলাকালীন আমাকে ২৫ হাজার টাকার পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল এবং আইসিসি সভাপতিও স্টেডিয়ামে সে সময় উপস্থিত ছিলেন। এটি আমার এবং আমাদের সবার জন্য একটি বড় সম্মাননা ছিল।’
এর পর আর মিরাজকে ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০১৬ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে দলের নেতৃত্ব দেন মিরাজ। সে বছরই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন তিনি। সপ্তম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেকেই পাঁচ উইকেট পেয়েছিলেন।
অবশ্য সাত বাংলাদেশি ক্রিকেটারের মধ্যে মিরাজ ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ। অভিষেকের দিনটিতে মিরাজের বয়স ছিল ১৮ বছর ৩৬১ দিন। এর আগে ২১ বছর ১০০ দিন বয়সে অভিষেকে পাঁচ উইকেট পেয়েছিলেন সোহাগ গাজী। ২০১২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মিরপুরে শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ছয় উইকেট নিয়েছিলেন তিনি ৭৬ রান খরচায়। মিরাজের চেয়ে কম বয়সে অভিষেকে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন বিশ্বের মাত্র তিনজন বোলার। ১৮ বছর ১৯৩ দিন বয়সে অস্ট্রেলীয় পেসার প্যাট কামিন্স, ১৮ বছর ২৩৫ দিন বয়সে পাকিস্তানি স্পিনার শহিদ আফ্রিদি এবং আরেক পাকিস্তানি শহিদ নাজির ১৮ বছর ৩১৮ দিন বয়সে এই কীর্তি গড়েছিলেন।
বয়সের হিসাব বাদ দিলে বাংলাদেশের পক্ষে আরো চার ক্রিকেটার অভিষেকে পাঁচ উইকেট পান। তাঁরা হলেন মঞ্জুরুল ইসলাম, ইলিয়াস সানি, মাহমুদউল্লাহ ও তাইজুল ইসলাম। মঞ্জুরুল ২০০১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে, মাহমুদউল্লাহ ২০০৯ সালে, ইলিয়াস সানি ২০১১ সালে ও তাইজুল ২০১৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এই রেকর্ড গড়েন।