ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচের ভবিষ্যৎ কী?

কোয়ারেন্টিন ইস্যুতে শেষ পর্যন্ত স্থগিত হয়ে গেছে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচ। সাইডলাইনে আর্জেন্টিনার খেলোয়াড় ও ব্রাজিলের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে হাতাহাতি হয়, পরে তুলকালাম আবস্থা বেধে ম্যাচটি বন্ধ হয়ে যায়। ম্যাচটির ভবিষ্যৎ কী, সেটাও অজানা। কিন্তু সাও পাওলোতে হয়ে যাওয়া ঘটনা নিয়ে খুব হতাশ আর্জেন্টাইন কোচ লিওনেল স্কালোনি। তিনি জানিয়েছেন, কোয়ারেন্টিন না করে চার খেলোয়াড় যে খেলতে পারবে না সেটা আগে থেকে জানানো হয়নি তাঁদের।
কোয়ারেন্টিন ইস্যুকে কেন্দ্র করে মূল কাণ্ডটা ঘটে। এমিলিয়ানো মার্টিনেজ, এমিলিয়ানো বুয়েন্দিয়া, জিওভান্নি লো সেলসো, ক্রিস্টিয়ান রোমেরো—এ চার খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে কোয়ারেন্টিন না মানার অভিযোগ আনে ব্রাজিলের স্বাস্থ্য বিভাগ। এরপর ম্যাচ চলাকালীন ব্রাজিলের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মাঠে ঢুকে যাওয়ায় এক পর্যায়ে ম্যাচটি স্থগিত হয়ে যায়।
সংবাদমাধ্যম এএসের প্রতিবেদন অনুসারে ঘটনাটি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন আর্জেন্টিনার কোচ স্কালোনি। স্থানীয় সংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমাদের একবারও বলা হয়নি ম্যাচটা খেলতে পারব না। আমরা ম্যাচটি খেলতে চেয়েছিলাম, ব্রাজিলের খেলোয়াড়েরাও চেয়েছিল।’
আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যমে নিজের ও দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করে স্কালোনি আরও বলেন, ‘পুরো ঘটনায় আমি খুবই হতাশ। এখানে দায়টা কার, সেটা বের করতে চাই না।’

সংবাদমাধ্যম এএস খবরে বলা হয়, গতকালের বিষয়টি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্লদিও তাপিয়া। তিনি বলেন, ‘যেটা ঘটেছে, সেটা ফুটবলের জন্য খুবই দুর্ভাগ্যজনক। ফুটবলে কালি লেপে দিয়েছে এটা। চারজন লোক একটা খবর জানতে মাঠে ঢুকে পড়লেন, আর কনমেবল খেলোয়াড়দের বলল ড্রেসিংরুমে ঢুকে যেতে। এখানে কোনো মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে, এমনটা আপনি বলতে পারেন না। কারণ, এখানে একটা নিয়মনীতি নির্ধারণ করা আছে, যেটার অধীনেই দক্ষিণ আমেরিকান অঞ্চলের সব ফুটবল ম্যাচ হয়। প্রতিটি দেশের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষই একটা প্রটোকল অনুমোদন করেছে, যেটা আমরা পুরোপুরি মেনে চলেছি।’
ঘটনা শুরু হয় ম্যাচের পঞ্চম মিনিটে। সাইড লাইনের পাশে অচেনা একজনকে দেখে আর্জেন্টিনার দুই খেলোয়াড় নিকোলাস ওতামেন্দি ও মার্কোস আকুনা জিজ্ঞেস করলেন, তিনি কে? সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের ঘিরে ধরলেন অনেকে। মুহূর্তের মধ্যে হাতাহাতি হয়ে যায়। পরে দ্রুত এসে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন আর্জেন্টাইন কোচ।
আর্জেন্টিনার ক্রীড়া পত্রিকা টিওয়াইসির প্রতিবেদন অনুসারে পরে জানা যায়, সাইডলাইনে থাকা লোকটি ছিলেন ব্রাজিলের স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। এমিলিয়ানো মার্টিনেজ, ক্রিস্টিয়ান রোমেরো আর জোভান্নি লো সেলসো ব্রাজিলের কোয়ারেন্টিন নিয়ম না মেনে ব্রাজিলে খেলতে যান। এর জন্য ব্রাজিলের জাতীয় স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধান এজেন্সির একাধিক কর্তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সদস্য মাঠের ভেতরে ঢুকে যান। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল মার্টিনেজ, রোমেরো ও লো সেলসোকে আটক করা। বিষয়টি নিয়ে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের সেই কর্মকর্তাদের মধ্যে হাতাহাতিও হয়ে যায়। পরে এই অভিযোগের জন্য মাঠ ছেড়ে যান আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়রা।
ব্রাজিলের স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়দের হাতাহাতির ঘটনার পর ম্যাচ স্থগিত করার খবর জানায় লাতিন আমেরিকার ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা কনমেবল।
এক টুইট বার্তায় কনমেবল গতকাল রোববার দিবাগত রাত আড়াইটায় জানায়, আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের মধ্যকার বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচটি রেফারি স্থগিত করেছে। ম্যাচ রেফারি ও ম্যাচ কমিশনার ফিফার শৃঙ্খলা কমিটির কাছে এ নিয়ে প্রতিবেদন দেবে। তার ওপর ভিত্তি করে এই ম্যাচের ভবিষ্যৎ ঠিক করা হবে। এই প্রক্রিয়া বর্তমান নিয়ম দৃঢ়ভাবে অনুসরণ করেই এগোবে। বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব ফিফার প্রতিযোগিতা। এ ব্যাপারে সব সিদ্ধান্তের ক্ষমতা আছে কেবল ওই প্রতিষ্ঠানেরই।