প্রতিক্রিয়া
শাবিপ্রবিতে শিক্ষকদের ওপর হামলা কেন?
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ যা ঘটে গেল তা যেকোনো যুক্তিতেই ন্যক্কারজনক কাজ। এ ঘটনার নিন্দা জানানোর ভাষা কোনো জাতির আছে কি না, তা কারো জানা আছে কি?
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আন্দোলনে বিশেষ করে ভিসিবিরোধী আন্দোলনে সরকারি ছাত্রসংগঠনগুলোকে অত্যন্ত গর্হিত কাজ করতে দেখা যাচ্ছে বা তাদের দিয়ে করানো হচ্ছে।
তারা ঘটনা ঘটানোর পর নির্দ্বিধায় তা অস্বীকার করে আসছে। এটি সমাজে একটি স্বীকৃত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এটি রাজনৈতিক বক্তব্য।
এর আগে বুয়েট, বেগম রোকেয়া, জাহাঙ্গীরনগর, কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এসবের কোনো বিচার কর্তৃপক্ষ করেনি। যাও করেছে তাও আবার ‘আইওয়াশ’ বৈ কিছু নয়। এতে অপরাধপ্রবণতা এক ধরনের উসকানি পায়।
কারণ আজকে যে ছেলেটি তার শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের গায়ে হাত তুলল, কালকে সেই ছেলেটিই বিশ্ববিদ্যালয় অথবা অন্য কোথাও সরকারি সুপারিশে ভালো চাকরি পাচ্ছে। বলতে পারেন এটা এক ধরনের প্রমোশন।
আজকে শাহজালালে যে ঘটনা ঘটল যদি এর সুষ্ঠু বিচার না হয়, তাহলে এ কথা নিশ্চিত করে বলতে পারি মাত্র এক বছরের মধ্যে এ ক্যাডারগুলো সরকারি ভরণ-পোষণে ভালো কোনো চাকরি বা অবস্থানে যাবে। অতীত এর সাক্ষী। বর্তমান এর সাক্ষী।
আন্দোলনকারী শিক্ষক প্যানেল আর আন্দোলনবিরোধী প্যানেল দুটোই সরকারি দলের সাইনবোর্ডধারী। আবার যারা হামলা করল তারাও একই সাইনবোর্ডের। আর ভিসি! তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাহলে এ দায়ভার কে নেবে?
আমাদের তাকিয়ে থাকতে হবে কর্তৃপক্ষের দিকে।
আমি ব্যক্তিগতভাবে ড. জাফর ইকবাল ও তাঁর স্ত্রী ড. ইয়াসমীন হককে চিনি ও জানি। শুধু লেখক বা হুমায়ূন আহমেদের ভাই হিসেবে নয়। তাঁরা আমার সরাসরি শিক্ষক ছিলেন। সেটা হতে পারে কিছু সময়ের জন্য। তাঁদের দেখেছি। এ কথা নির্দ্বিধায় বলতে পারি- তাঁরা যে আন্দোলনে আছেন, ওই আন্দোলন কোনো মতেই ‘অযথা’ হতে পারে না। কারণ তাঁদের একটি জাতীয় ও ঐতিহাসিক পরিচয় আছে, বিবেক ও বিবেচনা আছে।
ভিসি বলছেন, তাঁকে মাটিতে শিক্ষকরা ফেলে দিয়েছেন। অন্যদিকে আন্দোলনকারী শিক্ষকরা বলছেন, না ছাত্রলীগ শিক্ষকদের ওপর হামলা করেছে, গলা ধাক্কা দিয়েছে। এতে প্রফেসর ইয়াসমীন হক, আন্দোলনকারী ব্যানারের আহ্বায়ক প্রফেসর সৈয়দ শামসুল আলম, শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি প্রফেসর মোহাম্মদ ইউনূস, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর আবদুল গণি, প্রফেসর এ ন ক সমাদ্দার, হাসানুজ্জামান শ্যামল, অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর মো. ফারুক উদ্দিন, মোস্তফা কামাল মাসুদসহ সাত শিক্ষক লাঞ্ছিত হন।
সাধারণ জনগণ মিডিয়ার কল্যাণে প্রকৃত বিষয় কিছুটা হলেও দেখতে সক্ষম হয়েছে। বুঝতে সক্ষম হয়েছে। কীভাবে একজন শিক্ষক ছাত্রলীগের উপর্যুপরি হামলা হতে বাঁচার জন্য মাটিতে পড়ে দৌড়ে পালাচ্ছেন।
এ আন্দোলনের ইস্যু নুতন নয়, মোটামুটি পুরনো। ১৩ এপ্রিল থেকে উপাচার্যকে দুর্নীতিবাজ আখ্যায়িত করে তাঁর পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করছেন ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষকদের অংশটি। আন্দোলনের অংশ হিসেবে ২০ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৭টি প্রশাসনিক পদ থেকে ৩৫ জন শিক্ষক পদত্যাগ করেন। যার মধ্যে অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালও ছিলেন। এর থেকে সহজেই অনুমান করা যাচ্ছে শিক্ষকদের আনীত অভিযোগ কোনো মতেই ফেলে দেওয়ার মতো নয়। কারণ এখানে শিক্ষকদের সংখ্যা বা ব্যক্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো সুযোগ থাকছে না।
সরকারের উচিত হবে এর সম্পূর্ণ সুষ্ঠু বিচার করা। অপরাধী শিক্ষক হোক আর শিক্ষার্থী হোক তাঁদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা। নচেৎ কদিন পর পরই দেশবাসীকে এমন দৃশ্য দেখতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বমানের বিদ্যাপিঠের প্রতিনিধিত্ব করে। সুতরাং কর্তৃপক্ষের উচিত এখানে বিশ্বমানের নীতি নির্ধারণ করা। কোনো ধরনের পক্ষপাতিত্ব না করা। বিভিন্ন ভিসিবিরোধী আন্দোলনেই দেখে আসছি সরকার একটা তালগোল পাকানো অবস্থা সৃষ্টি হওয়ার আগ পর্যন্ত কোনো ধরনের জোরালো পদক্ষেপ নেয় না। যখন অঘটন ঘটে যায় তখন নিজেরাও গোল খায় আর অন্যদের গোল খাওয়ায়। মাঝখান থেকে শ্রমিক-চাষার সন্তানদের কষ্টের শেষ থাকে না। অনেক সময়ই তাদের পিষ্ট হতে হয় সেশনজট আর রাজনীতির চাপাকলে।
লেখক : শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়